করোনা ভাইরাসঃআশা-নিরাশার দোলাচলে

করোনা ভাইরাস

করোনা ভাইরাস

কৃষিবিদ আব্দুল্লাহ জিয়াদ ঃ

করোনা ভাইরাস : চলমান করোনা ক্রাইসিস এর শেষ কোথায়? এই মুহুর্তে এই প্রশ্নের উত্তর জানে এরকম লোক জগতে একটিও নেই। এইতো ক’দিন আগেও করোনা নিয়ে কত কথাই না শোনা গেল। বাদ যায়নি রাজনীতিক, ধর্মগুরু চিকিৎসক জ্যোতিষী কেউই। কেউ বললেন ; আমরা করোনার চেয়ে শক্তিশালী। কেউ বললেন ; গ্রীষ্ম এলেই করোনার চৌদ্দ গোষ্ঠী নিপাত যাবে। কোন কোন ধর্মগুরু তো আরো একধাপ এগিয়ে ; “আমার সম্প্রদায়ের কারো কিছু হবে না,তোমরা ঘুমাও নাকে তেল দিয়ে”। বলি ‘নগর যখন পোড়ায় দেবালয় কী এড়ায়’? এইতো সেদিনও হাটে বাজারে করোনার ট্যাবলেট বিক্রি হতে দেখা গেল। যেন ‘হাতি ঘোড়া গেল তল মশা কয় কত জল’! কিন্তু আজ সবাই নিরব। কেউ কিছু বলছে না। দুনিয়ার জ্ঞানী লোকগুলো হঠাৎ করেই যেন নির্বোধ হয়ে গেল। ক’দিন আগেও যারা নিয়মিত ফেসবুক লাইভ করতেন, তারাও আজ হারিয়ে গেল কালের অতল গহবরে। চারদিকে শুনশান নিরবতা। শহর বন্দর গ্রাম নগর সব থেমে গেছে।

রাস্তা-ঘাট জন-মানবহীন, খা খা করছে। যেন কোথাও কেউ নেই। ১৭ কোটি মানুষের এদেশ বিশ্বাসই হয় না। তবে কী করোনায় থেমে যাবে মুখরিত এ নগর সভ্যতা? না। তা হয় না। হতে দেয়া যায় না। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন পড়েছিলাম ; যদি কোন ফসল ভাইরাসে আক্রান্ত হয় তাহলে সেটি তুলে পুড়ে ফেল বা পুঁতে ফেল। আর ভাইরাসের বাহক (পোকা) ধ্বংস কর।হিউম্যান সায়েন্স এর বেলায় অবশ্য এই থিওরী প্রযোজ্য নয়।মহামারীর ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়; অতীতে গুটি বসন্ত, প্লেগ,ম্যালেরিয়া,জলাতঙ্ক ইত্যাদি ভাইরাস রোগে লক্ষ কোটি মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। পরবর্তীতে এ-সব রোগের কার্যকর ভ্যাকসিন আবিষ্কার হওয়ায় তা পৃথিবী থেকে তিরোহিত হয়েছে। তাহলে করোনার বেলায় কী হলো? ভ্যাকসিন আবিষ্কার হচ্ছে না কেন? প্রকৃতপক্ষে ভ্যাকসিন তৈরির বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হলো; কোন রোগের সম্ভাব্য কোন ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পর প্রথমে পশু বা প্রাণীতে (গিনিপিগ, ইদুর) প্রয়োগ করে তার কার্যকারীতা পরীক্ষা করা হয়।

এতে সফল হলে মানুষে প্রয়োগ করে তার ক্রিয়া পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা হয়। এভাবে দু তিনটি ট্রায়ালের পর সেটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পেলে বাজারজাত করার জন্য সুপারিশ করা হয়।তাই বলা যায় ; কোনভাবেই এক বছরের আগে বাজারে ভ্যাকসিন আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।বিজ্ঞান অবশ্য এক্ষেত্রে কিছুটা খাম খেয়ালিপনার পরিচয় দিয়েছে বললে অত্যুক্তি হবে না। কেননা করোনা এর আগেও সার্স,মার্স রুপে এসেছিল। তখন যদি পর্যাপ্ত গবেষণা হতো তাহলে হয়তো মানব জাতিকে আজ এতবড় মাসুল দিতে হতো না।তাহলে কী করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচার কোন উপায় নেই? এর উত্তর হলো ; ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত আপনাকে ভাইরাস থেকে দূরে থাকতে হবে। ভাইরাসকে কোন অবস্থাতেই শ্বাসনালিতে প্রবেশের সুযোগ দেয়া যাবে না।আর একটি কথা না বললেই নয়।

প্যারাসাইটিজমের নীতি অনুসারে কোনো হোস্ট-ই আজীবন প্যারাসাইটের জন্য উর্বর থাকে না। সময়ের ব্যবধানে প্যারাসাইটের বিরুদ্ধে হোস্ট প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করে। বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলে আ্যন্টিবডি। সময় যত গড়াবে করোনার বিরুদ্ধে মানবদেহে তত আ্যন্টিবডি তৈরি হবে, অপরদিকে করোনাও দুর্বল হয়ে পড়বে। এক সময় হয়তো প্রাকৃতিক ভাবেই দেহ করোনা প্রতিরোধ করবে।তাহলে এখন আম- জনতার করণীয় কী? এর সহজ জবাব হলো: চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সবাই ঘরে থাকুন,অন্যকে ঘরে রাখুন। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে হাত ধুয়ে ফেলুন। মাস্ক পড়ুন আর বাইরে থেকে ফিরে জামা কাপড় ও শরীর ভালোভাবে ওয়াস করুন।বিজ্ঞানের জয় হোক।আল্লাহ সবার মঙ্গল করুন।।

Advisory Editor

Advisory Editor of http://www.krishisongbad.com/

Learn More →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *