Site icon

করোনা সংকটে মৎস্য সেক্টরে বিরুপ প্রভাব ও উত্তরণের উপায়

করোনায় মৎস্য সেক্টর

করোনায় মৎস্য সেক্টর

বরুন চন্দ্র বিশ্বাস

করোনায় মৎস্য সেক্টর ঃউপজেলা পর্যায়ে মৎস্য অফিসার, মাছ চাষী, হ্যাচারী মালিক, খাদ্য বিক্রেতা, মাছ বিক্রেতা, মৎস্য জীবি, পোনা চাষী, পোনা ব্যবসায়ীদের সাথে অালোচনায় প্রাপ্ত তথ্যে বর্তমানে করোনা সংকটকালীন সময়ে রংপুর জেলা মৎস্য সেক্টরে নিম্নরূপ বিরুপ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।

মাছের রেনু উৎপাদনে প্রভাবঃ
নিয়ন্ত্রিত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারনে পোনা উৎপাদনকারীগণ রেনু সংগ্রহ করতে না আসার কারনে রেনুর চাহিদা কমে যাওয়ায় হ্যাচারী মালিক গণ পর্যাপ্ত পরিমাণ রেনু উৎপাদন করতে পারছেন না, ফলে হ্যাচারি মালিকগণ আর্থিক ক্ষতির সম্মূখীন হচ্ছেন।

মাছের পোনা উৎপাদনে প্রভাবঃ
মাছ চাষীদের চাহিদা অনুযায়ী পোনা উৎপাদন না করার কারনে পোনা উৎপাদনকারীগণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

মাছের পোনা ব্যবসায়ীগণের ক্ষতিঃ
মাছের পোনা উৎপাদন কম হওয়ায় পোনা ব্যবসায়ীগন আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।

• মৎস্য চাষে প্রভাবঃ
ক) উৎপাদিত মাছ বাজারজাত না করতে পারার কারনে মৎস্যচাষীগণ আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।
খ) বাজারজাত করতে না পারার কারনে পুকুর মাছের মজুদ বৃদ্ধি ও আনুপাতিক হারে মাছের খাবারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সে অনুযায়ী খাবার সরবরাহ করতে মৎস্য চাষীগণ হিমশিম খাচ্ছেন। ফলশ্রুতিতে মাছের গুনগত মান হ্রাস পাচ্ছে এবং পরবর্তীতে মাছের উৎপাদন হ্রাস পাবে।
গ) অনেক মৎস্য চাষী স্থানীয় ভাবে মাছ বিক্রি করলেও ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। ফলে তারা মাছ চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।
ঘ) নিয়ন্ত্রিত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও চাষীদের আর্থিক সংগতি কমে যাওয়ায় মাছের উৎপাদন সামগ্রিক ভাবে হ্রাস পাচ্ছে, এতে পরবর্তীতে মৎস্য সেক্টরে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
ঙ) আর্থিক ভাবে ক্ষতি গ্রস্থ হওয়ার কারনে ক্ষুদ্র ও মাঝারি মৎস্য চাষী গণের মাঝে মাছ চাষে আগ্রহ কমে যাবে। ফলে, সামগ্রিক ভাবে দেশে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাবে।

• মৎস্য জীবিদের উপরে প্রভাবঃ
ক) যে সকল মৎস্যজীবী গণ সরকারী জলাশয় ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করছেন, তারা মাছের বাজারমূল্য কম হওয়ায় ও নিয়ন্ত্রিত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারনে আহরন যোগ্য মাছ বাজারজাত করতে না পারায় আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।
খ) যে সকল মৎস্য জীবি বিভিন্ন জলাশয়ে জাল টেনে জীবিকা নির্বাহ করেন, তাদের বর্তমানে কাজ না থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে।
গ) কুচিয়া মাছ রপ্তানী বন্ধ থাকায় কুচিয়া আহরনকারীগনের কাজ না থাকায় আর্থিকভাবে ক্ষতি গ্রস্থ হচ্ছেন।

মৎস্য খাদ্য ব্যবসায়ীগনের উপর প্রভাবঃ
মৎস্য চাষীগণ প্রয়োজন অনুযায়ী খাদ্য ক্রয় না করার কারনে মৎস্য খাদ্য বিক্রেতাগণ আর্থিকভাবে ক্ষতি গ্রস্থ হচ্ছেন।

খুচরা মাছ বিক্রেতার উপর প্রভাবঃ
বাজারে চাহিদা ও সরবরাহ কম থাকায় খুচরা মাছ বিক্রেতা গণ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন ও অনেকে বেকার হয়ে পড়ছেন।

• সব ধরনের মৎস্য পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে পরিবহন ভাড়া অপেক্ষাকৃত বৃদ্ধি পাওয়ায় মৎস্য সেক্টরে বিরুপ প্রভাব পড়ছে।

সংকটকালীন সময়ে মৎস্য সেক্টরে বিদ্যমান সমস্যা থেকে উত্তরণের প্রস্তাবঃ
১। মাছের হ্যাচারি মালিক গণ কে প্রনোদনা হিসেবে ব্রুড মাছ সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ বিতরণ।
২। মাছের পোনা উৎপাদন কারীদের প্রনোদনা হিসেবে মাছের রেনু পোনা ও মৎস্য খাদ্য বিতরণ।
৩। পোনা ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র মৎস্য ব্যবসায়ী ও কুচিয়া আহরণকারীগন কে আর্থিক প্রণোদনা প্রদান।
৪। ক্ষুদ্র ও মাঝারি মৎস্য চাষীদের প্রনোদনা হিসেবে মাছের পোনা ও খাদ্য বিতরন।
৫। যে সকল মৎস্য জীবি জলাশয় ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করছেন তাদের প্রনোদনা হিসেবে মাছের পোনা ও খাদ্য বিতরণ। সাধারণ মৎস্য জীবিদের আর্থিক প্রণোদনা প্রদান।
৬। মৎস্য খাদ্য বিক্রেতা ও মৎস্য উদ্যোক্তাদের স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে ঋণ প্রদান।
৭। ছোট বড় সকল খাস জলাশয়ে দেশিয় প্রজাতির পোনা অবমুক্তকরন।
৮। উপজেলাভিত্তিক মৎস্য চাষ প্রদর্শনী খামার স্থাপন।
৯। মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে মৎস্য চাষীদের উন্নত প্রযুক্তিতে মাছ চাষের উপর প্রশিক্ষণ প্রদান।

লেখকঃ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা,রংপুর।

Exit mobile version