মো. মোশারফ হোসেন, বিশেষ প্রতিনিধি:
কলম কাটায় অতীতের সব অভিজ্ঞতাকে ছাপিয়ে এবার কাঁঠালের চারায় কলম কেটে সর্বোচ্চ সফলতা পেয়েছেন রাজশাহী বিভাগের চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার কল্যাণপুর উপজেলার হট্রিকালচার সেন্টারের বিজ্ঞানীগন।
রংপুর ও ময়মনসিংহ হট্রিকালচার সেন্টারে শীতের আগে ও শীতের শেষ দিকে চারা কলম তৈরী করা হলেও, সেখানকার সফলতা ছিল ৪৫ ভাগ থেকে ৫০ ভাগ। আর এক্ষেত্রে চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার কল্যাণপুর হট্রিকালচার সেন্টারে সর্বোচ্চ তথা প্রায় শতভাগ সফলতা এসেছে। সেখানকার (চাপাইনবাবগঞ্জের) বিজ্ঞানীদের সফলতা সবার মনে আশার আলো জাগিয়েছে। কল্যাণপুর হট্রিকালচার সেন্টারে গিয়ে এমন চিত্র নজরে আসে।
সরজমিনে কথা হয় চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার কল্যাণপুর উপজেলার হট্রিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক ড. মো. সাইফুর রহমানের সাথে। তিনি জানান, তাঁর নের্তৃত্বে হর্টিকালচার সেন্টারের একদল বিজ্ঞানী কাঁঠালের চারায় কলম কাটায় শতভাগ সফলতা পেয়েছেন। কাঁঠাল এদশের জাতীয় ফল সত্বেও এই ফল চাষের উন্নয়নে তেমন কোন কর্ম পরিকল্পনা ও সাফল্যের অগ্রগতি নজরে পড়ে না। তিনি আরও জানান, ২০১৫ সালে মালয়েশিয়া সফরে গিয়ে কোন এক প্রশিক্ষন কর্মশালায় কাঁঠাল চারায় কলম দেওয়া বিষয়ে বিস্তারিত জানেন। পরে বাংলাদেশে ফিরে এসে এই বিষয়ে অন্যান্য বিজ্ঞানীদের নিয়ে পরামর্শ মূলক আলোচনা করে কয়েকজন বিজ্ঞানীর সমন্বয়ে একটি কমিটি করে শুরু করে কাঁঠালের চারায় কলম কাটায় গবেষণার কাজ। প্রথমে সামান্য সমস্যা দেখা দিলেও বর্তমানে আর কোন সমস্যা নেই বলে জানান ড. মো. সাইফুর রহমান।
সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা জানান, বীজ থেকে জন্মানো গাছে ফলন আসতে সময় লাগে ৫ থেকে ৮ বছর। আর তাদের কলম করা চারায় ফলন আসবে মাত্র ২ বছর থেকে ৩ বছরের মধ্যে। এতে কৃষকরা অল্প সময়ে ফলন পেয়ে অধিক লাভবান হবেন। অন্যদিকে বীজ থেকে জন্মানো গাছে মাতৃ গাছের বৈশিষ্ট্য হুবহু বজায় থাকেনা। ফলে নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি হয়। অনেক ক্ষেত্রে কৃষকরা লোকসানে পরেন। কিন্তু কলম কাটা গাছে মাতৃ গাছের বৈশিষ্ট্য হুবহু বজায় থাকে এবং কলম কাটা গাছে ফলন ভালো হবে বলে তারা দৃঢ আশাবাদী। তাছাড়া বারমাসি কাঁঠাল গাছের সায়ন থেকে কলম কাটায় বছরব্যাপী কাঁঠাল চাষের পরিমাণ বাড়বে বলে তারা আশা করছেন। তাঁরা বলেন, কোন এক সময় ছিলো, যখন বাতাসের আদ্রতা কম থাকতো, শুধু মাত্র তখনই কাঁঠালের বীজ থেকে চারা উৎপাদন করা সম্ভব হতো, কিন্তু এই কলম কাটা প্রযুক্তিতে সারা বছর চারা উৎপাদন করা সম্ভব।
এমন সফলতার সংবাদ পেয়ে, অতিসম্প্রতি কাঁঠালের চারায় কলম কাটার বিষয়ে জানতে এবং তা সরাসরি দেখতে ওই হট্রিকালচার সেন্টারে আসেন বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মন্ডলীর অন্যতম সদস্য এম. এনামূল হক ও তার সাথে কয়েকজন কৃষি কর্মকর্তা। পরিদর্শন শেষে এম. এনামূল হক সাংবাদিকদের জানান, কাঁঠালে কলম কেটে সফলতা দেশের কাঁঠাল চাষে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। আর এই পরিবর্তনের যাত্রাটা শুরু হবে চাপাইনবাবগঞ্জ থেকেই; এমনটাই আশা করেছন তিনি। তিনি আরও বলেন, কলম কাটা ওইসব কাঁঠাল গাছে প্রায় সারা বছর ফলন আসতে পারে, ফলে কৃষকরা সারা বছর কাঁঠাল উৎপাদন করতে পারবেন। এতেকরে একদিকে জাতীয় ফল কাঁঠাল এদেশে সারা বছর পাওয়া যাবে, অন্যদিকে বছরব্যাপী কাঁঠালে কৃষকরা দামটাও ভালো পাবেন বলে তাদের বিশ্বাস।