কাঁঠালের ফল ঝরেপড়া প্রতিরোধে করণীয়

কাঁঠালের ফল ঝরে পড়া

কৃষিবিদ এম এ মজিদ
পৃথিবীjack fruit pestর ফলসমুহের মধ্যে কাঁঠাল আকারে বৃহওম এবং বাংলাদেশে এটি জাতীয় ফল। কাঁঠালেরমত এত বেশি পুষ্টি উপাদান অন্য কোন ফলে পাওয়া যায় না। উল্লেখ্য যে, এটি এমন একটি ফল যার কোন অংশই ফেলে দিতে হয় না ( কোষ ও বীজ মানুষের খাদ্য ও বাকী অংশ পশু খাদ্য)। বাংলাদেশে উৎপাদনের দিক থেকে কলার পরেই কাঁঠালের স্থান। এদেশে প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে কাঁঠাল উৎপাদন হয়, যার পরিমান প্রায় ৩ লক্ষ টন। এ ফল দামে অন্যান্য ফলের তুলুনায় দামে কম হওয়ায় গরিব মানুষ সহজে খেতে পারে। তাই কাঠালকে গরিবের ফলও বলা হয়। এ ফল কাঁচা ও পাকা উভয় অবস্থায় খাওয়া যায়। সাধারনত বসন্ত ও গ্রীষ্ম কালে (পাকার পূব পর্যন্ত) কাঁচা কাঁঠাল সবজি হিসাবে খাওয়া যায়।

কাঁঠাল গাছে ফল না ধরা এবং ফল ঝরে পড়ার কারণ ঃ
(১) গাছের শারীরিক অবস্থা দুর্বল হলে। (২) মানুষের চলাফেরা এবং গাছের গোড়াতে গরু-মহিষ বাঁধানোর ফলে গাছের গোড়ার মাটি শক্ত হয়ে গেলে। (৩) কাঁঠাল গাছে অনেক সময় অত্যাধিক তেজ বা বৃদ্বির প্রবনতা দেখা গেলে সে ক্ষেএে ফুল ফল ধরবে না। (৪) ছোট গাছে ফুল ধরার প্রথম পর্যায়ে কাঁঠাল গাছে সাধারনত পুরুষ ফুল উৎপাদন করে থাকে, এ জন্য প্রথম এক/ দুই বছর ফল হয় না বা হলেও সামান্য। (৫) পুরুষ ও স্ত্রীফুলের বয়সের পার্থক্য বেশী হলে ফল ঝরে পড়ে। (৬) অতিরিক্ত খরা হলে। (৭) অপুষ্টির কারনে ফল ঝরে পড়ে। (৮) মাটিতে কোন সমস্যা থাকলে ( যেমন- লবণাক্ততা, বেশী এসিড বা ক্ষার প্রভৃতি)। (৯) রোগ দ্বারা আক্রান্ত হলে। (১০) পোকামাকড় দ্বারা আাক্রান্ত হলে ফল ঝরে পড়ে ।

প্রতি বছর সঠিক পরিচর্যার অভাবে এবং রোগ ও পোকার কারনে অনেক ফলন কমে যায়। তাই সঠিক পরিচর্যা এবং রোগ ও পোকামাকড় দমন করে বাংলাদেশের জাতীয় ফলের ফলন বৃদ্বির জন্য পরামর্শ দেওয়া হল ঃ-
(অ) সঠিক পরিচর্যা
(১) সুষম সার ব্যবহার করতে হবে । একটি ১০-১৫ বছরের গাছে গোবর ৬০-৮০ কেজি, ইউরিয়া ১-১.২০ কেজি, টি.এস.পি ০.৮০-১.০ কেজি, এম. পি ১ কেজি, সারগুলি তিন ভাগে ভাগ করে ( গাছের বয়স ৫-১০ বছর হলে উহার অর্ধেক এবং ১৬ বছরের বেশী হলে উহার দেড় গুন সার প্রয়োগ করতে হবে) প্রতি বছর র্ফেরুয়ারী মাসে এক বার, বর্ষার পূর্বে এক বার ও বর্ষার পরে এক বার প্রয়োগ করতে হবে। (২) খরা মৌসুমে যখন আকাশ দীর্ঘ দিন বৃষ্টিপাতহীন থাকে এবং মাটিতে রসের অভাব হয়, তখন কাঁঠাল গাছের গোড়ায় যে কোন পদ্বতিতে সেচ দিতে হবে। বিশেষ করে বসন্ত কালে যখন কাঁঠাল গাছে মুচি ছোট থাকে তখন সেচ প্রয়োগ না করলে রসের অভাবে ফল ঝরে যেতে পারে বা আকারে ছোট হয়ে যায়। তাই খরা মৌসুমে ১৫-২০ দিন পর পর সেচ দিতে হবে, তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন জলাবদ্বতা সৃষ্টি না হয়।(৩) গাছের গোড়ায় গরু-মহিষ বাঁধানো যাবে না বা মানুষ চলাচলের পথ রাখা যাবে না।(৪) গাছের গোড়া আগাছামুক্ত রাখতে হবে এবং মাটি কুপিয়ে ঝুরঝুরে করে রাখতে হবে।(৫) অত্যাধিক তেজ হলে কিছু ডালপালা কেটে দিতে হবে।(৬) কৃএিম পরাগায়নের মাধ্যমে (পুরুষ ফুল ছিড়ে সকাল বেলা স্ত্রী ফুলে স্পর্শ করতে হবে) ফল ঝরা রোধ করা যেতে পারে।

(আ) রোগ দমন ঃ
ফল পচা রোগ 
কাঁঠালে যেসব রোগ দেখা যায়, তার মধ্যে প্রায় ৮০% রোগ হল ফল পচা রোগ। এ রোগ রাইজোপাস এট্টোকারপি  নামক এক প্রকার ছএাক দ্বারা হয়ে থাকে।
লক্ষনসমুহ ঃ (১) রোগের প্যাথোজেন প্রথমে পুষ্পমঞ্জুরীতে আক্রমন করে। (২) অপরিপক্ক ফলে পানি ভেজা দাগ পড়ে। (৩) আক্রান্ত ফল সাদা মাইসেলিয়াম দ্বারা আবৃত হয় এবং পরবর্তীতে ফল কাল বর্ণ ধারণ করে। (৪) আক্রান্ত ফল কুচকে যায় এবং ঝরে পড়ে।
দমন ব্যবস্থা ঃ (ক) আক্রান্ত পুস্পমঞ্জুরী, ফল সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। (খ) বাগান পরস্কার পরিছন্ন রাখতে হবে। (গ) ফুল ফোটার সময় ডায়াথিন-এম-৪৫ বা নোয়িন ছএাক নাশক ০.৩ % হারে ১০-১৫ দিন পর পর ২-৩ বার  স্প্রে করতে হবে। অথবা (ঘ) ফলে এ রোগ দেখাগেলে ০.২ % হারে রোভরাল  স্প্রে করতে হবে।
(ই) পোকা দমন
ফলের মাজরা পোকা ঃ এ পোকা কাঁঠালের ব্যাপক পরিমান ক্ষতি করে থাকে। এর কারনে ফলন শুন্যে কাছাকাছি আসতে পারে। লক্ষণসমুহ ঃ (১) কুঁড়ি, মুচি, ছোট ফল এদের দ্বারা আক্রান্ত হয়। (২) এ পোকার কীড়া ফল ছিদ্র করে ভিতরে প্রবেশ করে খেয়ে নষ্ট করে। (৩) আক্রান্ত স্থানে পানি ভেজা দাগ দেখা যায় ও পচন শুরু হয়। (৪) আক্রান্ত ফল কালো হয়ে কুঁচকে যায় এবং ঝরে পড়ে।

বীটল ও কাণ্ডের মাজরা পোকা ঃ
লক্ষণসমুহ ঃ (১) কুঁড়ি, বিটপ, কান্ড,মাটির উপরে মুল প্রভৃতি স্থানে এ পোকা দ্বারা আক্রান্ত হয়। পোকার কীড়া এ সবের মধ্যে প্রবেশ করে কলাসুমুহ খেয়ে নষ্ট করে ফেলে। (২) এ পোকার অন্যতম লক্ষণ হল যেখানে ছিদ্র করে সেখানে গর্তের মুখে এদের বিষ্টা ঝুলতে থাকে। (৩) গাছের যে অংশে আক্রমণ করে সে অংশ দুর্বল হয়ে যায় বা মরে যায়।
দমন ব্যবস্থা ঃ (ক) গর্তে শিক ঢুকিয়ে পোকা মারতে হবে। (খ) কাদা বা মোম দিয়ে গর্তের মুখ বন্দ্ব করে দিতে হবে। (৩) ডায়াজিনন ৫০ ইসি বা ম্যালাথিয়ন-৫৭ ইসি ০.২ % হারে পানিতে মিশে প্রয়োগ করলে এ রোগ দমন করা সম্ভব।

কৃষির আরো খবর জানতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিনঃকৃষিসংবা

3 thoughts on “কাঁঠালের ফল ঝরেপড়া প্রতিরোধে করণীয়

  1. Suvrodap sarker anik October 15, 2019 at 6:13 pm

    Your Comment

    Reply
  2. Suvrodap sarker anik October 15, 2019 at 6:15 pm

    Your Comment খুব ভালো i am happy

    Reply
    1. Advisory Editor October 25, 2019 at 9:32 pm

      Thank you very much

      Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *