কালিবাউস মাছের কৃত্রিম প্রজনন ও নার্সারি ব্যবস্থাপনা-শেষ পর্ব

কালিবাউস মাছের কৃত্রিম প্রজনন

কালিবাউস মাছের কৃত্রিম প্রজনন

ড. মো: শাহাআলী ও মো: আব্দুর রব মন্ডল

কালিবাউস মাছের কৃত্রিম প্রজনন

কালিবাউস মাছের নার্সারি ব্যবস্থাপনা
উন্নত নার্সারি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সুস্থ ও সবল ধানী এবং চাষযোগ্য আঙ্গুলী পোনা উৎপাদন করা যায়। নার্সারি ব্যবস্থাপনার ধাপগুলি নিম্মরুপঃ

নার্সারী পুকুর মজুদকালীন ব্যবস্থাপনাঃ সাধারণত নার্সারী পুকুরে ৪-৫ দিন বয়সের রেণু মজুদ করা হয়। জানাশুনা উন্নত জাতের রেণু উৎপাদনকারী খামার থেকে রেণু সংগ্রহ করা উচিত।

রেণু পোনা পরিবহন, পরিবেশীকরণ ও পুকুরে অবমুক্তকরণ
ক্স রেণু পোনা প্যাকিং করার ৩ ঘন্টা পূর্বে কৃত্রিম খাবার ব›ধ করা উচিত এবং ধানী পোনা পরিবহণের ১২-১৬ ঘন্টা পূর্বে সীমিত জায়গায় অভূক্ত অবস্থায় রাখতে হবে।
ক্স পরিবহনের দূরত্ব, পরিবহন পাত্রের আকার, মাছের আকার এবং পোনার পরিমান বিশেষ বিবেচ্য বিষয়। একটি পরিবহন পাত্রে (৬৫দ্ধ ৪৫ সেমি.) ১২-১৮ ঘন্টা পর্যন্ত ১২৫ গ্রাম রেণু পোনা পরিবহন করা যায়।
ক্স পলিথিন ব্যাগে এমনভাবে পানি ভর্তি করতে হবে যাতে করে ব্যাগের চার ভাগের এক ভাগ পানি এবং তিন ভাগ অক্সিজেন থাকে।
ক্স পরিবহনের সময় পলিথিন ব্যাগ খোঁচা লেগে ছিদ্র হয়ে যেতে পারে তাই ঝুঁকি এড়ানোর জন্য চটের ব্যাগ ভিজিয়ে নিলে পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে না।
ক্স প্রথমে ব্যাগ ও পুকুরের পানির তাপমাত্রা সমতায় এনে রেণু পোনা ছাড়তে হবে। এর জন্য রেণু পোনা পরিবহনকৃত পলিথিন ব্যাগটি ২০-৩০ মিনিট পুকুরের পানিতে ভাসিয়ে রাখতে হবে। পরে ব্যাগের মুখ আস্তে আস্তে খুলতে হবে।
ক্স তারপর হাত একবার ব্যাগের পানিতে আবার পুকুরের পানিতে ডুবিয়ে তাপমাত্রা সমান আছে কিনা দেখতে হবে। থার্মোমিটারও ব্যবহার করা যেতে পারে।
ক্স ব্যাগের পানি ও পুকুরের পানির তাপমাত্রা সমতায় আনার জন্য আস্তে আস্তে পুকুরের পানি ব্যাগে দিতে হবে। এভাবে তাপমাত্রার ব্যবধান ধীরে ধীরে কমে আসবে।
ক্স এভাবে তাপমাত্রা সমতায় আসলে ব্যাগ কাত করে হালকা ঢেউ দিলে ব্যাগ থেকে সেচ্ছায় রেণু পোনা ধীরে ধীরে পুকুরে চলে যাবে। রেণু পোনা পাড়ের কাছাকাছি সারা পুকুরেই ছাড়তে হবে।

রেণু পোনা মজুদকরন
ক্স সকালে বা বিকালে যখন পানির তাপমাত্রা কম থাকে তখনই রেণু ছাড়ার উত্তম সময়।
ক্স কালিবাউস মাছের প্রতি কেজি রেণুুতে ৪ লক্ষ মাছ থাকে। এক ধাপ পদ্ধতিতে শতাংশে ৫-১০ গ্রাম এবং ২ ধাপ পদ্বতিতে ৫০-৮০ গ্রাম রেণুু মজুদ করা যায়। উল্লেখ্য যে, ২ ধাপ পদ্বতিতে রেণু উৎপাদনে অবশ্যই মজুদের ২০-২৫ দিন পর ধানী পোনা অন্য পুকুরে শতাংশে ৩০০০-৪০০০ ধানী মজুদ করতে হবে।

রেনুর পুকুরে খাদ্য ব্যবস্থাপনা
অধিক ঘনত্বে পোনা মজুদ করলে প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি সম্পুরক খাদ্য সরবরাহ করা প্রয়োজন। সহজ প্রাপ্য ও আর্থিক বিবেচনায় সরিষার খৈল, মিহি চালের কুঁড়া ও গমের ভুষি রেণুর খাবার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

ধানী পোনা কাটাই/অন্য পুকুরে স্থানাস্তর
রেণু পোনা বড় হয়ে ধানের আকার বা ১-২.৫ সেমি. আকারের হলে তাদেরকে ধানী পোনা বলে। নিয়মিত সার ও খাবার দিলে ১৫-২০ দিনের মধ্যে ধানী পোনা কাটাই বা স্থানান্তরের উপযোগী হয়। তখন এদের আকার ১.৫-২.৫ সেমি. এবং ওজন ১-২ গ্রাম হতে পারে। এসময় ধানী পোনার ঘনত্ব কমিয়ে কাটাই/পাতলা করে অন্য পুকুরে স্থানান্তরিত করতে হবে। কারন ধানী পোনা অতিরিক্ত ঘনত্বে থাকলে খাদ্য ও জায়গা নিয়ে প্রতিযোগিতা হবে। ফলে পোনা মারাও যেতে পারে। এভাবে ভাল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ২ ধাপ নার্সারীতে ১ একর আয়তন পুকুর থেকে ৩-৪ মাসের মধ্যে ৩-৪ ইঞ্চি আকারের ৪০০,০০০ – ৫০০,০০০ আঙ্গুলী পোনা পাওয়া যায়।

কালিবাউস মাছের চাষ পদ্ধতি
আমাদের দেশে কালিবাউস মাছ সাধারনত মিশ্রচাষের ক্ষেত্রে বটম ফিডার হিসাবে ব্যবহার হয়ে থাকে। কালিবাউস মাছের একক চাষ আমাদের দেশে খুব একটা করা হয় না তবে অদুর ভবিষ্যতে একক চাষের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। রুই জাতীয় মাছের মিশ্রচাষের ক্ষেত্রে সাধারনত মূল মজুদের সর্বাধিক ১০-১৫% পর্যন্ত কালিবাউস এর আঙ্গুলী পোনা মজুদ করা হয়ে থাকে। রুই জাতীয় মাছের মিশ্রচাষে বছরে (৮-১০ মাসে) কালিবাউস মাছ ৫০০-৬০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে।

লেখকদ্বয়ঃ মাৎস্য বিজ্ঞানী, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনষ্টিটিউট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *