কীটনাশকের বিষ ক্রিয়ায় আক্রন্ত ব্যক্তির প্রাথমিক চিকিৎসায় করনীয়

কীটনাশকের বিষ ক্রিয়ায়

জাহাঙ্গীর আলম শাহ : মানুষ সাধারনত ইচ্ছাকৃত ভাবে দুর্ঘটনা জনিত অথবা অসাবধানবসত রাসায়নিক কীটনাশকের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। বিশ্বে এর বিশ্বক্রিয়ায় বছরে প্রায় ৩০ লক্ষ লোক সম্মুখীন হয়, যার বেশির ভাগই ঘটে আত্মহত্যাজনিত। কীটনাশকের বিষক্রিয়ায় অসুস্থতার লক্ষন নির্ভর করে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের কতটা কীটনাশক শোষিত হয়েছে। তীব্রতা আনুযায়ী এই বিষক্রিয়া মৃদু-মাঝারি ও সাংঘাতিক পর্যায়ে পড়ে।
কীটনাকের বিষক্রিয়া ঘটলে প্রথমেই আক্রান্ত ব্যক্তিকে কীটনাশকের ঐ স্থান থেকে সরিয়ে খোলামেলা স্থানে নিতে হব, দ্বিতীয়ত নাড়ি চলছে কিনা খেয়াল রেখে আক্রান্ত অবস্থা বুঝে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে দ্রুত ডাক্তার বা হাসপাতালে নিতে হবে, তাহলে গুরুতর বা মৃত্যুর হাত থেকেও রোগীকে রক্ষা করা সম্ভব।

 চোখে আক্রান্ত হলেঃ সত্বর পরিষ্কার পানি দিয়ে চোখে ঝাপটা দিতে হবে অন্তত ১৫ মিনিট। এর পর ডাক্তারের কাছে নিতে হবে।
 শ্বাষ যন্ত্রে বিষক্রিয়া ঘটলেঃ প্রথমেই রোগীকে ঐ গ্যাসীয় আবহাওয়া থেকে খোলামেলা জায়গাই নিয়ে জামাকাপড় আলগা করে দিতে হবে। স্বাসপ্রস্বাস বন্ধ বা অস্বাভাবিক হলে কৃত্রিম স্বাস-প্রস্বাস চালানোর ব্যাবস্থা করতে হবে। রোগী এ সময় হটাৎ পড়ে মাথায় আঘাত না পায় সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে । প্রাথমিক চিকিৎসায় কোন রকম অ্যালকাহল খেতে না দিয়ে দ্রুত ডাক্তারে কাছে নিতে হবে।
 গলার মধ্যে বিষক্রিয়া হলেঃরোগীকে প্রথমে বমি করিয়ে বিষ বের করের চেষ্টা করতে হবে। রোগী অজ্ঞান থাকলে কিংবা খিচুনী হলে বমি করানো যাবে না। বমি করানোর জন্য রোগীকে উপুড় করে শুইয়ে দিতে হবে এবং প্রয়োজনে উচু স্থানে সুইয়ে রোগীর মুখ একটু নীচে ঝুকিয়ে রাখতে হবে। রোগী চিৎ আবস্থায় শুইয়ে বমি করলে ক্ষতিকর পদার্থ ফুসফুসের মধ্যে ঢুকে ক্ষতির সম্ভাবনা বাড়তে পারে। এ সময় রোগীকে প্রচুর পরিমানে পানি বা দুধ খাওয়াতে হবে। বমি করানোর জন্য প্রয়োজনে গলার ভেতর আঙ্গুল দেয়া যেতে পারে।
 চামড়ায় বিষিক্রিয়া হলেঃ জামা কাপড় খুলে দিয়ে আক্রান্ত স্থান অনেকক্ষন ধুয়ে ফেলতে হবে। ডিটারজেন্ট মেশানো পানি দিয়ে পরিষ্কার করে আক্রান্ত স্থান নরম এবং পরিষ্কার কাপড় দিয়ে বেধেঁ দিতে হবে। কোন রকম পাউডার মলম বা অন্য কোন ঔষধ না লাগিয়ে ডাক্তারের নিকিট নিতে হবে।
 শকঃ অনেক সময় কীটনাশকের বিষক্রিয়ায় রোগী শক পায়। খেয়াল না রাখলে অল্প বিষক্রিয়াতেই রোগী মারা যেতে পারে। শক পাওয়ার লক্ষণ গুলো হলো- রোগীর ত্বক বিবর্ণ, অধিক ঘাম হওয়া, উদাস দৃষ্টি বা চোখের নড়াচড়া কমে যাবে, নাভির গতি ক্ষীণ বা বেড়ে যাওয়া অর্থাৎ অনিয়মিত হবে। এ অবস্থায় রোগী যতক্ষন বমি না করছে ততক্ষন পা এক দেড় ফুট উচুতে রাখতে হবে। অজ্ঞান রোগীকে মুখে কিছু খাইয়ে বমি করানোর চেষ্টা করানো যাবে না ।

কীটনাশকের বিষক্রিয়ায় ক্ষতিসাধনের হাত থেকে রক্ষার্থে সাবধানতাঃ
 সবসময় কীটনাশক শিশুদের হাতের নাগালের বাইরে, বদ্ধ ঘরে তালা দিয়ে রাখতে হবে।
 কীটনাশকের কোন বস্তুই দাঁত দিয়ে কেটে খোলা যাবে না এবং স্প্রের সময় নলের মুখ বন্ধ হয়ে গেলে ফু দিয়ে পরিষ্কার করা যাবেনা।
 কীটনাশক ব্যবহারের সময় ধুমপান গ্রহন বা তরল জাতীয় কিছু পান করা যাবে না।
 কীটনাশক কখনই খাদ্য দ্রব্যে ব্যবহার করা যাবে না।
 কোন ভাবেই খোলা গায়ে কীটনাশক ব্যবহার করা যাবে না, বাতাসের বিপরীতে স্প্রে করতে হবে এবং এ কাজে ব্যবহার্য পত্র/মেশিন পুকুরে ধোয়া যাবে না।

লেখকঃ Pesticide Sprayপ্রতিষ্টাতা,
শাহ্ কৃষি তথ্য পাঠাগার ও কৃষি জাদুঘর
কালীগ্রাম, মান্দা, নওগাঁ ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *