ড. মোঃ গেলাম মোর্তুজা* ও মোঃ মোশাররফ হোসেন
বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে দ্রুত গতিতে জনসংখ্যা বাড়ছে। জন সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মানুষের খাদ্য চাহিদা। চাষাবাদের জমি সীমিত। নতুন নতুন জমিকে চাষাবাদের অর্ন্তভূক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। উপরন্ত, নতুন নতুন আবাসন, বনায়ন, রা¯তা, কলকারখানা, নদী ভাঙ্গন ইত্যাদি কারণে প্রতি বছরই অনেক চাষাবাদী জমি কমে যাচ্ছে। ফলে সীমিত জমি থেকে কি ভাবে বেশী ফসল উৎপাদন করা যায় তা নিয়ে সবাই চিন্তিত। উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসল উদ্ভাবন ও তার উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কৃষি বিজ্ঞানী ও কৃষিবিদদের উপর চাপ বাড়ছে। একথা ঠিক যে, গত কয়েক দশকে উচ্চ ফলনশীল ফসলের অনেক জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে এবং তাদের চাষাবাদও অনেক বেড়েছে। তবে বর্দ্ধিত জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পুরণ না হওয়ায় উৎপাদন আরো বাড়ানো প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসল চাষাবাদে আশানুরূপ ফলন পেতে উচ্চ মাত্রার উপকরণ যেমন সার, সেচ, বালাইনাশক একান্ত প্রয়োজন।
নিবিড় ফসল উৎপাদন পদ্ধতির ব্যবহার, উচ্চ ফলনশীল জাতের চাষাবাদ বৃদ্ধি ও আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে বর্তমানে ফসলে রোগ ও পোকার আক্রমণ পূর্বের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। এদেশের স্বাধীনতার সুচনালগ্নে বালাইনাশক ব্যবহারে উদ্বুুদ্ধ করার জন্য সরকারী পর্যায়ে কৃষক পর্যায়ে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হত। বর্তমানে সে অবস্থা আর নেই। পূর্বে গতানুগতিক ধারায় ফসল উৎপাদন করা হত কিন্তু বর্তমানে অনেকেই কৃষিকে ব্যবসা হিসাবে গণ্য করেন। কৃষক এখন চিন্তা করেন কোন্ ফসল বা ফসলের কোন্ জাত চাষাবাদ করলে বেশী লাভবান হওয়া যাবে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় বড় বড় কৃষি খামার স্থাপন এবং উল্লেখযোগ্য হারে দেশের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি এ চিন্তাধারার বহিঃ প্রকাশ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। বর্তমানে অনেক কৃষক আধুনিক টেকসই প্রযুক্তির খোঁজে কৃষি অফিস ও গবেষণা কেন্দ্রের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করেন যেটি পূর্বে দেখা যেত না। উচ্চ ফলনশীল ফসলে রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ বেশী হয়ে থাকে। এটা অনস্বীকার্য যে রোগ ও পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষার জন্য ও আশানুরূপ ফসল বৃদ্ধিতে বালাইনাশক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে তবে এর অপব্যবহারে মানুষের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ দূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। বিগত ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে বাংলাদেশে বালাইনাশক ব্যবহারে একটি চিত্র তুলে ধরা হল (ছক-১)। দেখা যাচ্ছে ১৯৯৬ সালে মোট বালাইনাশক ব্যবহার হয়েছিল ১১,৩৫৩ মে.টন আর ১৫ বছর পর ২০১০ সালে তা বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৪ গুণ অর্থাৎ ৪৮,৯৮৯ মে.টন। বালাইনাশকের উচ্চ মূল্যের কারণে বাংলাদেশের অনেক কৃষক ফসলে পর্যাপ্ত বা প্রয়োজনীয় পরিমাণ বালাইনাশক দিতে পারেন না তবে এমনও অনেক কৃষক আছেন যারা বিশেষত ফল ও সবজি ফসলে মাত্রাতিরিক্ত বালাইনাশক ব্যবহার করেন। বিগত ২০০৯ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার কানসাট এলাকার একটি আম বাগান পরিদর্শন করা হয়। গাছের আমগুলো অন্য বাগানের আমের তুলনায় বেশী পরিষ্কার মনে হচ্ছিল। এর কারন জিজ্ঞাসা করায় বাগানের মালিক জানালেন তিনি ৩/৪ টি ছত্রাকনাশক ও কীটনাশক একত্রে মিশ্রণ করে ককটেল তৈরী করেন এবং প্রত্যেক সপ্তাহে একবার করে আম গাছ স্প্রে করে যাচ্ছেন। এভাবে বিগত ১৬ সপ্তাহে তিনি ১৬ বার স্প্রে করেছেন। গাছ থেকে আম পাড়ার পর বালাইনাশকের প্রভাব পুরোপুরি বিদুরিত হয় না বরং তার প্রভাব কিছুটা হলেও বর্তমান থাকে যা মানুষের শরীরে মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। অনুরূপভাবে, পাবনা ও যশোহর এলাকায় যেখানে বাণিজ্যিকভাবে সীম চাষ করা হয় সেখানেও অনেক চাষী জাব পোকা দমনে একদিন পর পর কীটনাশক স্প্রে করেন বলে জানা যায়।
মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারে একদিকে যেমন পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে অন্যদিকে তা মানুষের স্বাস্থ্য মারাতœক ঝুকির অগ্রসর হচ্ছে। উন্নত বিশ্বের অনেক দেশে বালাইনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষার জন্য বিভিন্ন সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বালাইনাশকমুক্ত বা অর্গানিক ফসল উৎপাদন বা ভক্ষণ করার জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এমতাবস্থায়, আমাদের নিজেদের ও ভবিষ্যত প্রজন্মের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সুরক্ষার জন্য ফসলের পোকামাকড় দমনের জন্য নিরাপদ ও অরাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার একান্ত প্রয়োজন। কীটনাশক সাবান এমন একটি দ্রব্য যা ক্ষতিকর কীটনাশকের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
ছক-১ঃ বিগত ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে বালাইনাশক ব্যবহারের পরিমাণ।
বছর
|
কীটনাশক | ছত্রাকনাশক | আগাছানাশক | অন্যান্য | মোট (মে.টন) |
১৯৯৬
১৯৯৭ |
১০,২৮৫
১০,২৪২ ১০,৫৪৪ |
৮২৬
৮৬২
|
১৫০
১৬০ |
৯২
১০২
|
১১,৩৫৩
১১,৩৩৬ |
সুত্রঃ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং (২০১১)
সাধারণ সাবান প্রধানতঃ ফ্যাটি এসিডের পটাশিয়াম লবণ দ্বারা তৈরী করা হয়। সব ধরণের সাবানের মধ্যে পোকা দমনের ক্ষমতা নেই বরং কিছু কিছু সাবান গাছের জন্য ক্ষতিকর এবং আগাছানাশক হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। যাইহোক, কীটনাশক সাবান এমনভাবে তৈরী করা হয় যাতে ফসলের ক্ষতিকারক পোকা দমনের ক্ষমতা অক্ষুন্ন থাকে এবং ফসলের জন্য তা নিরাপদ হয়। এটি একটি অরাসায়নিক, বিকল্প কীটনাশক যা বাগানের কিছু কিছু পোকা কার্যকরভাবে দমন করতে পারে। এটি বেশীর ভাগ সব্জী, ফল এবং শোভাবর্ধনকারী গাছের জন্য ব্যবহার উপযোগী এবং পরিবেশে বান্ধব। কীটনশক সাবান কীটনাশকের মতই স্প্রে করা যায় তবে ঘন ঘন ব্যবহার করলে কোন কোন গাছে কিছুটা ক্ষতির আশংকা থাকে এবং কোন কোন কীট প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে পারে। যাইহোক, সবদিক বিবেচনা করে বলা যায়, যারা ছোট আকারের বাগান বা সবজি ক্ষেত করছেন এবং কীটনাশক ব্যবহার থেকে নিরাপদ থাকতে চান তাদের জন্য কীটনাশক সাবান একটি উত্তম বিকল্প। কীটনাশক সাবান পূর্ণ বয়স্ক পোকা ও কীড়া উভয়ের জন্য সমানভাবে কার্যকরী। তাছাড়া, সাদা মাছির মুককীট (পিউপা) কেও ধ্বংস করতে পারে। এটি বাসাবাড়ির বাহিরের বা গ্রীণ হাউসের বিভিন্ন ক্ষতিকর কীট দমনে বেশ উপযোগী। কীটনাশক সাবান কিভাবে কাজ করে, তার কাজের প্রকৃতি, ব্যবহারে সুবিধা ও অসুবিধাসমুহ আলোচনা করা হলো।
সুবিধা
১. কীটনাশক সাবান সাধারণতঃ পাখি, স্তন্যপায়ী জন্তু বা মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়। এটি খাদ্য প্রদানকারী বা অন্যান্য উদ্ভিদে নিরাপদে ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রয়োজনবোধে ফসল সংগ্রহের দিনও ফসলে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
২. অর্গানিক ফসল উৎপাদনে ব্যবহারের জন্য এটি বিশ্বব্যাপী অনুমোদিত। প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত গাছের তেল এবং প্রাণীজ চর্বী থেকে তৈরী। এটি সহজে পচনশীল হওয়ায় এর প্রভাব দীর্ঘদিন বিদ্যমান থাকে না।
৩. ফসলের পাতা স্প্রে করার পর শুকিয়ে গেলে এর কোন প্রভাব থাকে না, এসময় উপকারী বা বন্ধু পোকা স্প্রে গাছে ফিরে আসে।
৪. এটি রাসায়নিক কীটনাশকের বিকল্প এবং কীটনাশকের তুলনায় অনেক সস্তা।
৫. এটি রাসায়নিক কীটনাশকের মত বিষাক্ত নয় তবে চামড়া বা চোখের সংস্পর্শে এলে হালকা জ্বালা করতে পারে। অন্য কোন ¯তন্যপায়ীর জন্য তেমন ক্ষতিকর নয়।
টার্গেট পোকা
কীটনাশক সাবান প্রধানতঃ নরম শরীরওয়ালা পোকা ও মাকড় দমনে বেশী কার্যকরী। এটি এফিড বা জাবপোকা, মিলিবাগ বা ছাতরা পোকা সাদা মাছি বা হোয়াইট ফ্লাই, স্পাইডার মাকড় দমনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। বড় ধরনের পোকা ক্যাটার পিলার এবং লিফ হপার কীটনাশক সাবানের মাধ্যমে দমন করা কষ্টসাধ্য। বন্ধু পোকা যেমন লেডি বার্ড বিটল, ম্যানটিভ ইত্যাদি এবং পরাগায়নে সাহায্যকারী যেমন ভোমরা, বোলতা, মৌমাছি মোটামুটিভাবে নিরাপদ থাকে। কীটনাশক সাবান একাকী বা উদ্ভিদজাত তেলের সাথে মিশিয়ে স্প্রে করলে ফসলের পাউডারী মিলডিউ জাতীয় রোগ দমনে বেশ উপকারী।
প্রয়োগ মাত্রা
ফসলের প্রকারভেদে সাবানের ঘনত্ব কিছুটা কম বেশী হতে পারে তবে সাধারণতঃ প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৪ টেবিল চামচ সাবান মেশানো হয়। তরল সাবানের পরিবর্তে কখনও পাউডার সাবান ব্যবহার করা যাবে না।
কার্য প্রণালী
কীটনাশক সাবান পোকার শরীরের সংস্পর্শে আসা মাত্র কার্যকারিতা শুরু করে। সাবানের ফ্যাটি এসিড পোকার শরীরের সুরক্ষিত আবরণ অপসারণের মাধ্যমে পোকাকে হত্যা করতে সহায়তা করে। দেহের আররণ নষ্ট হওয়ার ফলে পোকার দেহকোষের ভিতর থেকে তরল পদার্থ ছিদ্র পথে বের হয়ে আসে। এতে স্প্রেকৃত পোকা দ্রƒত মারা যায়। সাবান অবশ্যই সরাসরি পোকার সংস্পর্শে আসতে হবে। সাবান যাতে ভালভাবে পোকার সমন্ত শরীরে বিস্তার লাভ করতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রয়োগ পদ্ধতি
১. অন্যান্য কীটনাশকের মতই এটি ব্যবহার করা যায়। এটি খুব কম বিষাক্ত হলেও সাবধানতার সহিত নাড়াচাড়া করা উচিত। দ্রবণ তৈরীর সময় হাতে গ্লোব ও সাধারণ সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
২. কেবল মাত্র মিঠা পানি ব্যবহার করতে হবে। সাবানের সাথে খর পানি মেশালে তার কার্যকারিতা লোপ পায় এবং গাছে/ফসলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
৩. পাতার উভয় পৃষ্ঠে এবং সম্পুর্ণ গাছ ভিজিয়ে দিতে হবে।
৪. বাতাস স্থির থাকা অবস্থায় স্প্রে করা উত্তম। বাতাস প্রবহমান অবস্থায় স্প্রে করলে অন্য গাছে বা নিজের শরীরে পড়তে পারে। শরীরে সাবান পড়লে তা ভালভাবে ধৌত করা উচিত।
৫. নির্দেশণা মাফিক সাবান একাধিকবার স্প্রে করা যেতে পারে। সাধারণতঃ প্রতি ৭-১০ দিনে একবার স্প্রে করা উচিত। ঘন ঘন স্প্রে করলে কচি পাতা জ্বলে যেতে পারে এবং পোকা প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে পরে।
৬. সকালে বা বিকালে তাপমাত্রা কম থাকায় স্প্রে সাবান শুকাতে বেশী সময় প্রয়োজন হয় তাই এ দুই সময় স্প্রে করা ভাল তবে সকালে স্প্রে করা উত্তম। কড়া রোদে দিনের তাপমাত্রা ৩২০ সে বা তার বেশী হলে এবং বাতাসের আর্দ্রতা ৯০% বা বেশী হলে স্প্রে করা অনুচিত।
কার্যকারিতা
ভাল ফলাফলের জন্য আক্রান্ত গাছ ভালভাবে স্প্রে করতে হবে। স্প্রে যন্ত্রটি অবশ্যই পরিস্কার ও ত্রুটিমুক্ত হতে হবে। স্প্রে যন্ত্রের নজেলটি অবশ্যই ভাল হতে হবে যাতে পাতার উভয় দিকে ও গাছের বর্ধনশীল অংশে ভালভাবে সাবানের দ্রবণ পৌছানো সম্ভব হয়। যে সব নজেলের মাধ্যমে কুয়াশার মত দ্রবণ স্প্রে করা যায় সে গুলোই উত্তম। সকালে ও বিকালে তাপমাত্রা শীতল হওয়ায় পাতার উপর সঞ্চিত সাবানের দ্রবণ শুকাতে বেশী সময় প্রয়োজন হয়, যা সাবানের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।
খর পানি ব্যবহার করলে কীটনাশক সাবানের কার্যকারিতা কমে যায়। খরপানির ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও লোহার লবণ সমুহ সাবানের ফ্যাটি এসিডের সাথে বিক্রিয়া করে দ্রবণের নিচে তলানী আকারে জমা হয় ফলে সাবান পোকা দমনের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। স্প্রে ব্যবহৃত পানি খর না মিঠা তা একটি ছোট পরীক্ষার মাধ্যমে সহজেই নিশ্চিত হওয়া যায়। একটি কাঁচের গ্লাসে বা জারে পানি নিয়ে তাতে নির্র্দিষ্ট ঘনত্বে কীটনাশক সাবানের দ্রবণ তৈরী করতে হবে। মিশ্রণটি ১৫ মিনিট স্থীর হতে দিতে হবে। যদি মিশ্রণটি সুষম সাদাটে থাকে তবে বুঝতে হবে ব্যবহৃত পানির গুণাগুণ সন্তোষজনক। আর যদি পানির উপরিভাগে দূধের সরের মত স্তর পড়ে তবে বুঝতে হবে ব্যবহৃত পানি খর এবং এ পানি ব্যবহারে সাবানের কার্যকারিতা কমাবে। কীটনাশক সাবান পানিতে মেশালে অন্যান্য সাবানের মত ফেনা সৃষ্টি করবে তবে এ ক্ষেত্রে ফেনা প্রতিরোধক ব্যবহার করা ভাল।
কীটনাশক সাবান বিভিন্ন প্রকার প্রচলিত কীটনাশকের সাথে মিশ্রণ উপযোগী তবে রোটেশন মুলকযুক্ত কীটনাশক, ম্যানকোজেব, লাইম সালফার, কপার সালপেট বা কপারযুক্ত ছত্রাকনাশকের (যেমন বোর্দো মিকচার) সাথে মেশানো যাবে না। তরল সারের সাথেও এটি মেশানো যাবে না।
বিষাক্ততা
কীটনশক সাবান ব্যবহার সাধারণভাবে নিরাপদ তবে কোন কোন গাছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া যেমনঃ পাতা হলুদ হওয়া, পাতায় বাদামী দাগ, পাতার শীর্ষভাগ ঝলসে যাওয়া, পাতা খসখেসে হওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে। কিছু কিছু শোভা বর্ধনকারী ফুল গাছ (যা আমাদের দেশে চাষাবাদ হয় না) এ সাবান সহ্য করতে পারে না। সাধারণতঃ অল্প সময়ের ব্যবধানে ঘন ঘন সাবান স্প্রেকরলে উদ্ভিদে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। বেশী সাবান স্প্রে করলে পোকার সাথে গাছও মারা যেতে পারে। তবে অনুমোদিত মাত্রায় ও পদ্ধতিতে সাবান স্প্রে করলে ফসলের ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা থাকে না। যদি কোন ফসল সাবান সহ্য করতে পারবে না বলে সন্দেহ হয় তবে সমস্ত ক্ষেতে বা ফসলে সাবান স্প্রে করার পূর্বে পরীক্ষামুলকভাবে অল্প জায়গা বা গাছের ছোট ২/১ টি ডালে স্প্রে করে ২৪ ঘন্টা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যদি এ সময় স্প্রে গাছে সাবানের কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ না পায় তবে নিশ্চিন্তে মাঠের সব ফসলে স্প্রে করার সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। খরার কারণে দুর্বল, রোপণ উপযোগী চারাগাছ, গাছের নরম কচি পাতায় সাবান স্প্রে না করাই ভাল কারণ তাতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
সীমাবদ্ধতা
কোন কোন কীটতত্ত্ববিদ আশংকা প্রকাশ করেছেন যে, ফসলে কীটনাশক সাবান স্প্রে করলে পরভোজী লেডি বার্ড বিটলের নিমফের ক্ষতি হতে পারে। তবে প্রকৃতপক্ষে কোন ক্ষতি হয় কিনা তার সঠিক তথ্য পাওয়া যায় নি। যদি কোন ক্ষেতে এ সব উপকারী পোকার সংখ্যা বেশী দেখা যায় তবে সাবধানতা হিসাবে কীটনাশক সাবান স্প্রে না করাই ভাল। কীটনাশক সাবান ব্যবহারে উল্লিখিত ক্ষতিকর পোকাগুলো পুরোপুরিভাবে ধ্বংস করা সম্ভব হয় না তবে ৫০-৬০% পোকা অতি সহজেই দমন করা যায়।
উপসংহার
নরম শরীরযুক্ত বেশ কিছু পোকা বাংলাদেশের কিছু কিছু ফসলের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে থাকে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে সীম চাষ হচ্ছে। এফিড বা জাব পোকা সীম ও সরিষার মারাতœক ক্ষতি করে থাকে। এ পোকা সীমের ফুল নষ্ট করে ফেলে, তাই গাছের ফলন মারাতœকভাবে হ্রাস পায়। পোকাটি দমনের জন্য কৃষকগণ সীমে প্রচলিত কীটনাশক স্প্রে করতেছেন কিন্তু আশানুরুপ ফলাফল না পাওয়ায় কোন কোন এলাকায় এক দিন পর পর কীটনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। নিরাপদভেবে সেই স্প্রে সীম আমরা প্রতিনিয়ত খেয়ে যাচ্ছি। অপর দিকে নরম শরীরযুক্ত মিলিবাগ বা ছাতরা পোকা আম, কুলসহ বিভিন্ন গাছে বেশ ক্ষতি করে থাকে। সাধারণ কীটনাশক ব্যবহারে এ পোকাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা বেশ কষ্টসাধ্য। জাব পোকা ও ছাতরা পোকা দমনের জন্য কীটনাশক সাবান একটি উত্তম বিকল্প হতে পারে কারণ এটি পরিবেশ বান্ধব, সস্তা এবং মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ। বাংলাদেশে কীটনাশক সাবান নামে কোন দ্রব্য পাওয়া যায় না। আমরা প্রতি বছর বিপুল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে বিষাক্ত কীটনাশক আমদানী করছি। যেহেতু কীটনাশক সাবান পরিবেশ বান্ধব তাই কীটনাশকের মত এটিও বিদেশ থেকে আমদানী করা যেতে পারে। তাছাড়া, আমাদের দেশে প্রাপ্ত তরল সাবান পোকা দমনে কার্যকরী কিনা পরীক্ষা করে দেখা উচিত। দেশের কীটতত্ত্ববিদগণ এ বিষয়ে উপযুক্ত গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে তার ফলাফল কৃষক তথা জাতিকে অবহিত করবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।