কৃষি জিজ্ঞাসা
উত্তর দিচ্ছেন ড. নূরুল হুদা আল মামুন
প্রশ্ন-১ঃ ঠাকুর গাও থেকে হাসান প্রশ্ন করেছেন আমার মিষ্টি কুমড়ার ক্ষেতে ছোট ছোট মিষ্টি কুমড়া কালো হয়ে পচে যাচ্ছে প্রতিকার কি?
উত্তরঃ মাছি পোকার আক্রমণ হলে এমনটি হতে পারে। মাছি পোকা দমনের জন্য বিষটোপ অথবা ফেরোমন ফাদ ব্যবহার করতে হবে। বাজারে বিভিন্ন কোম্পানীর ফেরোমন ফাদ কিনতে পাওয়া যায়। যা দিয়ে মাছি পোকা দমন করতে পারেন। তাছাড়াও হ্যান্ড পলিনেশন বা কৃত্রিম পরাগায়ন করলেও মিষ্টি কুমড়ার ফলন বাড়ানো সম্ভব। এক্ষেত্রে কৃত্রিম পরাগায়নের জন্য সকাল ৮ টা থেকে ১০টার মধ্যে পুরুষ ফুল তুলে স্ত্রী ফুলের গর্ভমুন্ডে পরাগ রেনু ঘষে দিলে বেশি করে কুমড়া ধরবে এবং টিকে যাবে।
প্রশ্নঃ-২ঃ মোহাম্মাদ সোহেল রহমান জানতে চেয়েছেন তার দুই বছর বয়সী বাছুরের গায়ের পশম উঠে যাচ্ছে প্রতিকার কি?
উত্তরঃ অনেক কারনে বাছুরের পশম উঠে যেতে পারে। ১। এটি অনেক বেশি জ্বর হওয়ার পরে ঘটেতে পারে। তাপমাত্রা পরীক্ষা করুন । এ জন্য জ্বর নিয়ন্ত্রণ করুন। ২। পোকা মাকড়ের কামড়েও এমনটা হতে পারে। ৩। জিঙ্ক এর অভাবেও হতে পারে, সেজন্য জিঙ্ক, ভিটামিন সি, এডি ৩ ই পরিপূরক হিসেবে খাওয়াতে হবে। ৪। ক্রিমির কারণেও পশম উঠে যেতে পারে- সেজন্য বাজারে অনেক ক্রিমি নাশক পাওয়া যায় তা সংগ্রহ করে খাওয়াতে হবে। ৫। বাছুরকে নিয়মিত সূর্যের আলোতে নিতে হবে। ৬। উকুনের সংক্রমণ হতে পারে—সেজন্য ন্যাপথলিন গুড়ো করে নারকেল তেলের সাথে মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে এই জায়গা গুলোতে প্রতিদিন ২ বার করে ৫-৭ দিন লাগিয়ে দিতে হবে। সেক্ষেত্রে মাইটস থাকলে মরে যাবে। বিস্তারিত পরামর্শের জন্য আপনার পাশ্ববর্তী পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।
প্রশ্নঃ ৩। রমিত আহমেদ জানতে চেয়েছেন ষাড় বাছুরের বয়স ৮ মাস। এখন কি অল্প করে ফিড দেওয়া যাবে?
উত্তরঃ আপনি বাছুরের শরীরের ওজনের উপর ভিত্তি করে ফিড খাওয়ানো শুরু করতে পারেন। এ বয়সে বাছুরের পেট (রুমেন) তৈরি হয়েছে। আপনি ১ থেকে ১.২৫ কেজি দানাদার খাবার /১০০ কেজি শরীরের ওজন জন্য ব্যবহার করতে পারেন। মনে করুন এখনই আপনার বাছুরের ওজন ৭০ কেজি হয়, তবে আপনি এটি প্রতিদিন ৭৫০ গ্রাম ফিড দিতে পারেন। (সকাল – ৪০০গ্রাম, সন্ধ্যা – ৩৫০ গ্রাম)। যদি আপনি প্রস্তুত ফিড ব্যবহার করেন তবে লুস ফিড দেওয়ার দরকার নেই। আস্তে আস্তে ফিড শুরু করতে পারেন। প্রথম দিন- ১০০ গ্রাম, দ্বিতীয় দিন – ১৫০ গ্রাম, তৃতীয় দিন -২০০ গ্রাম, ১২ তম দিন-৭৫০ গ্রাম ফিড খাওয়াতে পারেন।
প্রশ্নঃ ৪। মিজানুর রহমান জানতে চেয়েছেন, বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে কোন প্রবায়োটিক ভাল হবে?
উত্তরঃ বর্তমান সময়ে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে অতি সহজ মাছ চাষ করা যায়। স্বল্প জায়গায় বাসা বাড়ির খোলা জায়গা কিংবা গাড়ি বারান্দা, এমনকি ছাদেও এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা যায়। এতে খরচো কম পড়ে। কেননা ট্যাঙ্কির ভিতরে ফ্লক তৈরি করে মাছ উৎপাদন করতে হয়। মাছ এই ফ্লককে খাবার হিসেবে গ্রহণ করে। ফলে বাহির থেকে কম পরিমান খাবার দিতে হয়।
এই ফ্লক তৈরি করতে হলে ট্যাঙ্কের ভিতরে প্রবায়োটিক দিতে হয় যা উপকারী ব্যাক্টেরিয়া, এলজি তৈরি করে। সাধারণত বাজারে বিভিন্ন নামে প্রবায়োটিক কিনতে পাওয়া যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে ভাল
১. Ever fresh-pro এটি ইণ্ডিয়ার তৈরি ৫০০ গ্রামের কৌটায় পাওয়া যায়। ইদানিং এটার নকল বের হয়েছে তাই বিশ্বস্ত দোকান থেকে কিনতে হবে। দাম-১২০০/- টাকা
২. Aqua life-Pro এটি ভিয়েতনামে প্রস্তুত
৩. Aqua life-S এটিও ভিয়েতনামে প্রস্তুত
৪. Pond Care-SKF বাংলাদেশে তৈরি তবে দাম খুব বেশী ৫০ গ্রামের দাম ৫০০ টাকা এর মধ্যে যে কোন একটি ব্যবহার করতে পারেন।
প্রশ্নঃ ৫। জাহান রিপা লিখেছেন লিচুর মাজরা পোকা নিয়ে জানতে চাই
উত্তরঃ মাজরা পোকা লিচুর অন্যতম শত্রু পোকা। পূর্ণ বয়স্ক পোকা হচ্ছে মথ। এ পোকার কীড়া ফলের বোটার দিকে গর্ত করে ঢুকে শাঁস ও বীজ খেয়ে ফেলে। এ পোকায় আক্রান্ত ফল বাজারে অপেক্ষাকৃত কম দামে বিক্রি হয়। ফেব্রুয়ারি–এপ্রিল মাসে এদের আক্রমণ হয়ে থাকে।
লক্ষণঃ পরিপক্ব অবস্থার বোঁটার দিকে খয়েরি রঙের গুঁড়ো গুঁড়ো দেখা যায়, পাকা লিচুর বীজ ছিদ্র অবস্থায় পাওয়া যায়। খোসা ছড়ালে শাঁস কিছুটা নষ্ট বা পচা দেখা যায় এবং ফলের ওপর কোন কোন জায়গায় ছিদ্র দেখা যায়। গাছের ডালে গুঁড়ি গুঁড়ি মালার মতো দেখা যায়। হাত দিলে ডালের ওপর থেকে সেটি সরে আসে এবং নিচে ডালের মধ্যে ছিদ্র দেখা যায়।
প্রতিকারঃ বালাই সহিষ্ণু জাতের লিচুর চারা লাগাতে হবে। অনেক গুলো লিচুর জাত রয়েছে যেগুলো লাগালে লিচু ফলের মাজরা পোকার আক্রমণ কম হয়। সুস্থ পোকামাকড় ও রোগবালাই মুক্ত চারা লাগাতে হবে। লিচু গাছের চারিদিক সর্বদা আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। লিচুর ফল গুটি হওয়ার পর বা ফুল ফোটার ২০-২২ দিন পর থেকে ফল সংগ্রহ করা পর্যন্ত ১৫ দিন পর পর ২-৩ বার করে রিজেন্ট ৫০ এসসি/, রিপকর্ড ১০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।