মো. মোশারফ হোসেন, নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি:
কৃষি সংস্থার সবাই ঃ মেধা, ইচ্ছা শক্তি আর অভিজ্ঞতা থাকলে কোন বাধাই কাউকে থামিয়ে রাখতে পারে না। এমনটাই প্রমান করেছেন শেরপুরের নকলা উপজেলার বানেশ্বরদী ইউনিয়নের “ভূরদী খন্দকারপাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থা”র সদস্যরা। এ সংস্থার ২৫ সদস্যের সবাই তাদের মেধা, ইচ্ছা শক্তি আর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে প্রত্যকে একজন কৃষি বিষয়ক পরামর্শদাতায় পরিণত হয়েছেন। তাদের পরামর্শে এলাকার কৃষকরা উপকার পাওয়ায় অনেকে তাদের কৃষকরে ডাক্তার বলে ডাকেন।
জানা গেছে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আইপিএম কৃষক মাঠ স্কুলের মাধ্যমে ২০১৪ সালে ১৪ সপ্তাহের কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ নেন তারা। ওই প্রশিক্ষণ জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে এবং কৃষি তথ্য সেবা কেন্দ্রে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কৃষি সমস্যা বিষয়ে পরামর্শ নিয়ে তারা আজ সবাই একেকজন কৃষি ডাক্তারের মতো সুনাম অর্জন করেছেন। প্রতি শুক্রবার সন্ধ্যায় আলোচনায় বসেন তারা। সেখানে কৃষি বিষয়ক বিভন্ন সমস্যা নিয়ে আলাপ আলোচনা করেন। নিজেদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সমস্যা সমাধান দিতেন। সমস্যা সমাধানে কোন প্রকার দ্বিমত সৃষ্টি হলে, ওই বিষয়ে সরাসরি কৃষিতথ্য সেবার ১৬১২৩ নাম্বারে ফোন দিয়ে জেনে নিতেন তারা। আর কৃষিতথ্য সেবার দেওয়া পরামর্শ তাদের সংস্থার নিদৃষ্ট ডায়েরীতে লিখে রাখতেন।
পরবর্তী মৌসুমে একই সমস্যা দেখা দিলে তারা নিজেরাই ডায়েরীতে লিখে রাখা পরামর্শ অনুযায়ী কৃষি মাঠে ব্যবহার করতেন। দীর্ঘ দিন এভাবে চলতে থাকায়, অর্জিত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তারা সবাই যেন কৃষি ডাক্তারে পরিণত হয়েছেন। তাতে সুফল পাচ্ছেন এলাকার কৃষকরা। তাদের দেওয়া পরামর্শে লাভবান হওয়ায় ভূরদী, ছাল্লাতুলা, খন্দকারপাড়া, বানেশ্বরদী, কান্দাপাড়া, পোলাদেশী, কায়দা, মোছারচর, মোজার, বাউসা, কবুতরমারি, আন্দাড়িয়াসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার কৃষকরা তাদের কৃষি সমস্যায় দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে সরাসরি ভূরদী খন্দকারপাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার সদস্যদের সরণাপন্ন হতে থাকেন। ওই সংস্থার কৃষকদের পরামর্শ সফল হওয়ায় সুনাম ছড়িয়ে পড়ছে উপজেলা ছাড়িয়ে জেলা পর্যায়ে। অনেকেই তাদের কৃষি ডাক্তার বলে ডাকেন। এ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অনেক সুবিধাভোগী এসব তথ্য জানান।
সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্ব মো. ছাইদুল হক জানান, কৃষি প্রধান এই সোনার বাংলাদেশে অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি কৃষি কাজের সাথে জড়িত থাকতে পেরে এবং কৃষি বিষয়ক সাধারণ সমস্যা গুলো নিজেরা সমাধান দিতে পেরে তারা সবাই গর্ববোধ করেন। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. মোশারফ হোসেন জানান, ২০১৪ সালে নকলা কৃষি অফিসের আওতায় ১৪ সপ্তাহের কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ শেষে তারা মনস্থির করেন যে, এলাকায় কৃষকদের জন্য কিছু করবেন। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। আইপিএম কৃষক মাঠ স্কুলের প্রশিক্ষণার্থী ও স্থানীয় কৃষকের পরামর্শ ক্রমে ২০১৫ সালের পহেলা সেপ্টেম্বরে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ভূরদী খন্দকারপাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যান সংস্থা’ নামে সম্পূর্ণ স্বেচ্ছা সেবী একটি সংগঠন। স্বেচ্ছা শ্রমে এলাকায় কৃষি বিষয়ক সমস্যা সমাধান ছাড়াও অল্প পরিসরে শুরু করেন সামাজিক বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজ। তার মধ্যে কৃষিপণ্য উৎপাদন ও বিপনন, বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ, মাদক রোধ, বৃক্ষ রোপন, রাস্তার ভাঙা অংশে মাটি ভরাট, রাস্তা ভাঙন রোধ উল্লেখযোগ্য।
আর এসবের ব্যয়ের বিষয়ে তারা জানান, প্রয়োজন অনুসারে আমরা সবাই এলাকার লোকজনদের নিয়ে আলোচনা করে, প্রয়োজনীয় টাকা সংগ্রহ করে এসব কাজ করেন তারা। তাছাড়া অনেকে স্বপ্রণোদিত হয়েও তাদের সাথে আর্থিক শেয়ার করেন। উন্নয়ন মূলকা এসব কাজে বিশেষ করে এলাকার চাকরীজীবীরাই আর্থীক ভাবে বেশি সহযোগিতা করেন বলে জানান সংস্থার কর্মকর্তাসহ এলাকাবসীরা। ও সংস্থার সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন জানান, কৃষি বিষয়ক উন্নয়ন মূলক কার্যক্রমসহ যেকোন জাতীয় অনুষ্ঠানে তাদের অংশ গ্রহন উপজেলা, জেলা ও বিভাগ ছাড়িয়ে কৃষি অধিদপ্তর পর্যন্ত সুনাম কুড়িয়েছে। ‘ভূরদী খন্দকারপাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যান সংস্থা’র সদস্যদের প্রচেষ্ঠায় ২০১৮ সালে ২৬ হাজারের বেশি ইঁদুর নিধন করে উপজেলায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছিলেন। এবছরো ইঁদুর নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন বলে তিনি জানান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস বলেন, দেশের প্রতিটি এলাকায় এমন কৃষি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হলে, অর্থনীতিতে কৃষি বিভাগের ভুমিকা আরো বাড়বে। তাছাড়া প্রতিটি কৃষক নিজেরাই একেকজন কৃষি বিষয়ক পরামর্শদাতা হিসেবে পরিণত হবে। এতেকরে বিভিন্ন স্তরের কৃষি অফিসারদের চাপ কমবে, কিন্তু বাড়বে কৃষি উৎপাদন। তাই দেশের প্রতিটি কৃষক মাঠ স্কুলকে কেন্দ্র করে ‘ভূরদী খন্দকারপাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যান সংস্থা’র মতো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রতিষ্টা করার পক্ষে মতদেন কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস।