Site icon

আইপিএম কৃষি স্কুলের প্রশিক্ষণে হাজারো কৃষক আজ স্বাবলম্বী

কৃষি স্কুলের প্রশিক্ষণে
মোঃ মোশারফ হোসেন, নকলা (শেরপুর) :

কৃষি প্রধান এদেশের গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম চালিকা শক্তি হলো কৃষি খাত। জাতীয় অর্থনীতিতে কৃষির অবদান অপরিসীম। আর তাইতো এ খাতকে আরও দ্রুত সচল করতে কৃষকদেরকে বিভিন্ন প্রশিক্ষনের মাধ্যমে দক্ষ ও অভিজ্ঞ করে গড়ে তোলতে দেশ ব্যাপী কৃষি স্কুল স্থাপন করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আইপিএম কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্প। ওই প্রকল্পের আওতায় স্থাপিত স্কুল গুলোতে কৃষকদের উন্নত চাষাবাদের মাধ্যমে ফল ও মাঠফসল উৎপাদনের বিষয়ে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। দিন দিন এস্কুল গুলো জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কৃষকদের কাছে অন্য কৃষক কৃষানিরা হাতে কলমে প্রশিক্ষণ নিয়ে চাষাবাদ করছেন। এর ফলশ্রুতিতে এদেশ আজ খাদ্যে সয়ংসম্পূর্ণ। প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর স্বপ্ন নয়। গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে। তার অংশ হিসেবে শেরপুরের নকলা উপজেলায় কৃষক মাঠ স্কুলে প্রশিক্ষণ নিয়ে পাঁচ সহ¯্রাধিক কৃষক কৃষানি প্রশিক্ষণ লব্ধ জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, উপজেলায় ৩২ হাজার ৪৫টি কৃষক পরিবার রয়েছে। তার মধ্যে কৃষি প্রশিক্ষণ ও সেবাদানের সুবিধার্থে ১টি পৌরসভা ব্লক ও ৯টি ইউনিয়নকে ২৭টি ব্লকসহ মোট ২৮টি ব্লকে ভাগ করে ১৪২টি কৃষক মাঠ স্কুলের মাধ্যমে এপর্যন্ত অন্তত ৫হাজার ৫০জন কৃষক কৃষানিকে প্রশিক্ষণ করানো হয়েছে। তাতে ৪০টি করে আইসিএম এবং এফএফসি স্কুলে ৫০জন করে মোট ৪হাজার কৃষক কৃষানি ও ৪২টি আইপিএম স্কুলে ২৫জন করে মোট ১হাজার ৫০জন কৃষক কৃষানিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ২০১৭ সালের মে মাস পর্যন্ত স্থাপিত ১৪২টি স্কুলের আওতায় ২৮টি ব্লকে আবাদী ধানের জমি ১১হাজার ৭০০হেক্টর, সবজি ২হাজার ৩৪৫হেক্টর ও ফলের বাগান ১হাজার ৩৪৫হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে। তার মধ্যে গনপদ্দী ইউনিয়নের ৩টি ব্লকে ৮টি স্কুলের আওতায় আবাদী জমির পরিমাণ ধান ১হাজার ১০০হেক্টর, সবজি ১৭৫হেক্টর এবং বিভিন্ন ফলের বাগান ১২৫হেক্টর; নকলা ইউনিয়নের ৩টি ব্লকে ৯টি স্কুলের আওতায় আবাদী জমির পরিমাণ ধান ১হাজার ৪২৫হেক্টর, সবজি ৭৫হেক্টর এবং বিভিন্ন ফলের বাগান ৫৫হেক্টর; উরফা ইউনিয়নের ৩টি ব্লকে ১২টি স্কুলের আওতায় আবাদী জমির পরিমাণ ধান ১হাজার ৩৬০হেক্টর, সবজি ৭৫হেক্টর এবং বিভিন্ন ফলের বাগান ৯৫হেক্টর; গৌড়দ্বার ইউনিয়নের ৩টি ব্লকে ১৯টি স্কুলের আওতায় আবাদী জমির পরিমাণ ধান ৭০০হেক্টর, সবজি ১১০হেক্টর এবং বিভিন্ন ফলের বাগান ৪০হেক্টর; বানেশ্বরদী ইউনিয়নের ৩টি ব্লকে ১৬টি স্কুলের আওতায় আবাদী জমির পরিমাণ ধান ১হাজার ১৫হেক্টর, সবজি ১৫০হেক্টর এবং বিভিন্ন ফলের বাগান ১২০হেক্টর; পাঠাকাটা ইউনিয়নের ৩টি ব্লকে ১৬টি স্কুলের আওতায় আবাদী জমির পরিমাণ ধান ১হাজার ১২০হেক্টর, সবজি ৫৫০হেক্টর এবং বিভিন্ন ফলের বাগান ১৮০হেক্টর; টালকী ইউনিয়নের ৩টি ব্লকে ১৭টি স্কুলের আওতায় আবাদী জমির পরিমাণ ধান ১হাজার ১৮০হেক্টর, সবজি ১৪০হেক্টর এবং বিভিন্ন ফলের বাগান ১১০হেক্টর; চরঅষ্টধর ইউনিয়নের ৩টি ব্লকে ৯টি স্কুলের আওতায় আবাদী জমির পরিমাণ ধান ১হাজার হেক্টর, সবজি ৫০০হেক্টর এবং বিভিন্ন ফলের বাগান ২৭৫হেক্টর; চন্দ্রকোণা ইউনিয়নের ৩টি ব্লকে ১৬টি স্কুলের আওতায় আবাদী জমির পরিমাণ ধান ১হাজার ১৫০হেক্টর, সবজি ৩৭০হেক্টর এবং বিভিন্ন ফলের বাগান ২৭৫হেক্টর; পৌরসভায় ব্লকে ২০টি স্কুলের আওতায় আবাদী জমির পরিমাণ ধান ১হাজার ৬৫০হেক্টর, সবজি ২০০হেক্টর এবং বিভিন্ন ফলের বাগান ৭০হেক্টর। আইসিএম এবং এফএফসি স্কুলে ৫০জন প্রশিক্ষানার্থীর মধ্যে ২৫ জন পুরুষ ও ২৫জন মহিলা প্রশিক্ষণ নিতে পারেন এবং আইপিএম স্কুলে ২৫জনের মধ্যে কমপক্ষে ৫ জন কৃষানি থাকা আবশ্যক। ভুরদী আইপিএম কৃষক মাঠ স্কুল হতে প্রশিক্ষন নেওয়া ভুরদী খন্দকার পাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যান সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ছাইদুল হক, সাধারণ সম্পাদক হেলাল, সহসভাপতি শাখাওয়াত হোসেন, কোষাধক্ষ বেলায়েত, সদস্য ঈসমাইল, নাছিমা ও তাহমিনা; পোলাদেশী ক্ষুদ্র কৃষক আইপিএম ক্লাবের সভাপতি কিতাব আলী ও সাধারণ সম্পাদক হালিমসহ অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বসতবাড়িতে বা উপযুক্ত জমিতে আধুনিক পদ্ধতিতে ধান ও শাক সবজি চাষ, ফলজ ও কাষ্ঠল বাগান করা ও পরিচর্যা, মাছ চাষ, গবাদি পশু পাখি পালন, ফসলের পোকামাকড় দমন পদ্ধতি ও এসবের উপকার-অপকারসহ ফসল ও গবাদি পশু পাখির বিভিন্ন রোগের লক্ষণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেছেন। এখন আর সাধারণ সমস্যায় কৃষি কর্মকর্তা বা পশু ডাক্তারের কাছে দৌঁড়াতে হয়না। নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমেই অনেক সমস্যার সমাধান দিতে পারেন তারা। এতে করে টাকা ও সময় বেচেঁ যাচ্ছে। অন্যান্য কৃষকদের ফসল বা পশু পাখির কোন সমস্যা হলে তাদের কাছে পরামর্শ নিতে আসেন। তাদের পরামর্শে অনেকেই উপকৃত হয়েছেন। পরামর্শ নিতে আসা মরাকান্দার আবেদালী জানান, সে যেকোন কৃষি সমস্যায় ভূরদী খন্দকার পাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যান সংস্থা হতে পরামর্শ নেন। তিনি বলেন, কৃষি মাঠ স্কুলের প্রতিটি কৃষক একজন কৃষি ডাক্তারে পরিণত হয়েগেছেন। বানেশ্বরদী ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন, কৃষি উৎপাদনকে আরও তরান্বিত করতে দেশের প্রতিটি কৃষককে আধুনিক কৃষি শিক্ষায় শিাক্ষত করে তোলাসহ নতুন নতুন কৃষি সমস্যা সমাধানে আধুনিক চিকিৎসা ও প্রযুক্তিগুলোর সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া আবশ্যক। এবিষয়ে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, আধুনিক কৃষি পদ্ধতি ও প্রযুক্তি গ্রামের কৃষকদের মাঝে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ হাতে নিয়েছে সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর জানান, উপজেলায় ৩২ হাজার ৪৫টি কৃষক পরিবারের মধ্যে এপর্যন্ত ৫হাজার ৫০জনকে কৃষক মাঠ স্কুলের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। মাধ্যমে গ্রামিন অর্থনীতির চাকাকে সচল ও দৃঢ় করতে সারাদেশ ব্যাপী কৃষক মাঠ স্কুলের মাধ্যমে কৃষকদের পর্যায়ক্রমে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদে কৃষি বিষয়ে প্রশিক্ষিত করে তোলা হচ্ছে। কৃষক মাঠ স্কুলের সুফলতায় কৃষি খাতে উৎপাদন ও আয় পর্যায়ক্রমে বাড়ছে। এ উদ্যোগ সারা দেশের প্রতিটি গ্রামে ছড়িয়ে দিতে পারলে কৃষি উন্নয়নে আমাদের ধারাবাহিকতা অক্ষুণœ থাকবে বলে মত দিচ্ছেন কৃষি গবেষক ও কৃষি বিজ্ঞানীসহ সুধীজনরা।

 

Exit mobile version