Site icon

অনুর্বর জমিতে কেনাফ চাষ হতে পারে আয়ের অন্যতম উৎস

মো: ছাব্বির হোসেনঃKenaf Flower

জমিঃ পললভূমির উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি, চালা ও পাহাড়ি ঢালু জমি কেনাফ চাষের উপযোগী। এছাড়া উপকূলীয় এলাকায় কেনাফের আবাদ করা যেতে পারে। তবে, মাঝারি থেকে গভীরভাবে প্লাবিত জমি এবং অধিক কর্দম কনা সমৃদ্ধ এটেল মাটি কেনাফ চাষের জন্য উপযোগী নয়। যে সকল অনুর্বর ভূমিতে পাট কিংবা আউশ ফসলের আবাদ করা যায় না, সেখানে স্বল্প  যত্নে কেনাফ আবাদ করে ভাল ফলন পাওয়া যায়।

জাতঃ বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট এইচসি-২, এইচসি-৯৫ ও বিজেআরআই কেনাফ-৩ নামক তিনটি  উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছে। তন্মধ্যে এইচসি-২ জাতের কেনাফের চাষ প্রনালী নিম্নে তুলে ধরা হল-

এইচসি-২ জাতটি ‌‌‌‌‌‍‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‍‌‘জলি কেনাফ’ নামেও পরিচিত। গাছের উচ্চতা কম-বেশি ৬ মিটার। ফুল হলদে রংয়ের। ফল ডিম্বাকৃতি, যা পাকার পরে ফেটে যায়। বীজ ত্রিকোনাকৃতির, কালচে খয়েরী বর্নের।  ১৪০-১৫০ দিনে আঁশ ফসল ফসল কাটা যায়। বীজ থেকে শতকরা ২০ ভাগ ভোজ্য তেল পাওয়া যায়। এ জাতটি আলোক সংবেদনশীল অর্থাৎ ফুল আসা ও পরিপক্কতা বপন সময়ের উপর নির্ভরশীল।

বপনকালঃ আঁশ উৎপাদনের জন্য চৈত্র মাসের শুরু থেকে বৈশাখের মাঝামাঝি নাগাদ বীজ বপন করা যায়। বীজ উৎপাদনের জন্য শ্রাবন-ভাদ্র মাসে বীজ বপন করা হয়। তবে বীজের জন্য ভাদ্র মাসে বপন করা হলে আশ্বিন বা কার্তিকের বৃষ্টি থেকে  বীজ ফসল রক্ষা পায় এবং উৎকৃষ্ট মানের বীজ পাওয়া যায়।

জমি প্রস্তুতঃ কেনাফ বীজের আকার বড় হওয়ায় চাষ দিয়ে মাটি তত মিহি না করলেও চলে। এর শিকড় মাটির বেশ গভীরে প্রবেশ করে। তাই গভীর চাষ দিলে ভালো। মাটির প্রকৃতিভেদে ২-৩ বার চাষ ও মই দিতে হয়। পাহাড়ী ঢালু জমি কর্ষণের আবশ্যকতা নেই। উত্তমরূপে আগাছা বাছাই করতে হবে। বীজ সারিতে কিংবা ছিটিয়ে বপন করা হয়। ৩০ সেমি পর পর সারি করে বীজ বুনতে হয়। সারিতে বপন করলে ১১-১২ কেজি এবং ছিটিয়ে বপন করলে ১২-১৪ কেজি বীজ প্রয়োজন। রোগ জীবানুমুক্ত ভালো মানের বীজ ব্যবহার করা আবশ্যক। প্রয়োজনে বীজ শোধন করে নেওয়া যেতে পারে।

সার প্রয়োগঃ মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে কিংবা উপজেলা নির্দেশিকা থেকে  মাটির উর্বরতামান জেনে পরিমানমত সার প্রয়োগ করতে হবে। একান্ত সম্ভব না হলে হেক্টরপ্রতি ১৩২ কেজি ইউরিয়া, ২৫ কেজি টিএসপি ও ৪০ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। জৈব সার প্রয়োগ করা উত্তম। হেক্টরপ্রতি ৩-৫ টন গোবর করা যেতে পারে। প্রতি টন গোবরের জন্য ১১ কেজি ইউরিয়া, ৮ কেজি টিএসপি ও ৬ কেজি এমওপি কম প্রয়োগ করতে হবে। গোবর কিংবা অন্যান্য জৈব সার, অর্ধেক ইউরিয়া, সমুদয় টিএসপি ও এমওপি জমি প্রস্তুতির সময় প্রয়োগ করে অবশিষ্ট ইউরিয়া বীজ বপনের ৪৫ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে।  ইউরিয়া প্রয়োগের পরপর মাটি আলোড়িত করে দেয়া আবশ্যক ।

পরিচর্যাঃ পাটের চেয়ে কেনাফ চাষে  অনেক কম পরিচর্যা দরকার হয়। চারা গজানোর পর সময়মত নিড়ানী ও গাছ পাতলা করে দিতে হয়। চারা গাছের বৃদ্ধির প্রথম দিকে জমি অবশ্যই  আগাছামুক্ত রাখতে হবে।

ফসল সংগ্রহঃ

আঁশ সংগ্রহঃ চার মাস পর থেকে সুবিধাজনক  সময়ে ফসল কাটা যায়। তবে, কেনাফ গাছে ফুল আসলেও গাছের বৃদ্ধি থেমে যায় না। তাই আঁশ উৎপাদনের জন্য সম্ভব হলে পাঁচ মাস বয়সে ফসল কাটা হলে অধিক ফলন পাওয়া যায়। আঁশ ফসলের জন্য পাটের ন্যায় সরু ও মোটা গাছ পৃথক করে আঁটি বেঁধে পাতা ঝরিয়ে পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হবে। জাঁক কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে দেওয়া ভালো। পরিষ্কার পানিতে আঁশ ধুয়ে বাঁশের আড়ায় শুকাতে হবে। এইচসি-২ জাতটি হেক্টরপ্রতি ৬.৮ টন পর্যন্ত ফলন দিয়ে থাকে। আঁশের জন্য এই জাতের কেনাফ ১৪০-১৫০ দিনে কর্তন করা যায়।

কাগজ শিল্পের পাল্প তৈরিঃ পাল্প তৈরির জন্য কিংবা কেনাফ কান্ড খুটি হিসাবে ব্যবহার করতে হলে ফুল আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা উত্তম। কাগজের পাল্প তৈরির ক্ষেত্রে কর্তিত কেনাফ হালকা আঁটি বেঁধে দাঁড় করিয়ে রেখে ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হয়।

বীজ সংগ্রহঃ কেনাফ ফল কিছুটা কাঁটাযুক্ত। বীজের জন্য ফসল কেটে ২-৩ দিন রোদে শুকিয়ে নিলে ফলগুলো ফেটে যায়। অতঃপর লাঠি দিয়ে মারিয়ে সহজেই বীজ সংগ্রহ করা যায়।

বীজ শুকানোঃ কেনাফ বীজ সরাসরি পাকা মেঝে কিংবা ভিজা মাটিতে রেখে শুকানো অনুচিৎ। তাতে বীজের সজীবতা নষ্ট হয়। পাকা মেঝের উপর পলিথিন বা পাটের বস্তা বিছিয়ে বীজ শুকাতে হবে। পাকা মেঝে না থাকলে গোবর দিয়ে লেপে মাটিতে বীজ শুকানো যেতে পারে। শুকানো কয়েকটি বীজ দাঁতের ফাকে নিয়ে চাপ দিলে কট করে শব্দ করে ভেঙে গেলে বুঝা যাবে বীজ কাংখিত পর্যায়ে শুকিয়েছে।

বীজ সংরক্ষণঃ কেনাফের বীজ পাটের তুলনায় আদ্রতাকাতর। তাই শুকানো বীজ ঠান্ডা করে পলিথিন মুড়িয়ে প্লাস্টিক বা টিনের পাত্রে মুখ ভলোভাবে বন্ধ করে সংরক্ষণ করা হলে   দীর্ঘদিন ভালো থাকে।

কৃষির আরো খবর জানতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিনঃকৃষিসংবাদ.কম

Exit mobile version