মাঠে আছে কৃষিবিদরা
কৃষিবিদ খলিলুর রহমান ফয়সাল
মাঠে আছে কৃষিবিদরা :মহামারীর এই লক ডাওনের দিনে হাসপাতালে ডাক্তার, রাস্তায় পুলিশ তেমনি সারা বাংলাদেশের মাঠেঘাটে অফিস করছে কৃষিবিদরা। সকলে ঘরবন্দী থাকলেও কৃষিবিদদের ছুটি নেই। লকডাওনের পরে যাতে দূর্ভিক্ষ লেগে না যায়, কৃষকদের নিয়ে তাই রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে ফসলি মাঠে সময় কাটাচ্ছেন বাংলাদেশের কৃষিবিদরা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, “কোথাও এক ইঞ্চি জমিও যেন খালি না থাকে।” অল্প সময়ে, কম খরচে সর্বোচ্চ ফলন কিভাবে পাওয়া যায় কৃষিবিদরা সে প্রযুক্তিগুলোই পৌঁছে দিচ্ছেন কৃষকের দরজায়। করোনা সারা বিশ্বে মহামারী আকার ধারণ করেছে। ইতিহাস ঘাটলে মহামারীর সাথে দুর্ভিক্ষের প্রবল যোগসূত্র পাওয়া যায়। সুতরাং কৃষি পণ্য উৎপাদিত না হলে এবং সঠিকভাবে বাজারজাত না করলে বাংলাদেশকে দুর্ভিক্ষের কবলে পরতে হতে পারে। খাদ্য সংকট মোকাবেলায় তাই কৃষিবিদরা মাঠে রয়েছেন।
নোয়াখালীর বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উপকেন্দ্রের তরুণ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ কাওসার আলম নাদিমের সাথে কথা বলছিলাম। তিনি জানালেন, করোনা মোকাবেলায় ২৬ মার্চ থেকে বাংলাদেশের সকল সরকারি ও বেসরকারি অফিস সাধারণ ছুটির আওতায় আনা হলেও কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে সকল কৃষি কর্মকর্তাকে নিজ কর্মস্থলে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়। নাদিম জানিয়েছেন, ‘বর্তমানে সাধারণ ছুটি চলাকালীন সময়ে বিনার মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলামের নির্দেশে বিনা উপকেন্দ্র নোয়াখালীর অফিসার ইনচার্জ উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোঃ শেফাউর রহমান, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোঃ আশরাফুল আলম ও আমি এই তিনজনের টিম নোয়াখালীতে স্থাপিত বিনার বিভিন্ন পরীক্ষণের পরিচর্যা অব্যাহত রেখেছি। কৃষকের মাঠের সয়াবিন ও বোরো ধানের কি অবস্থা তা জানতে তাদের কাছে গিয়েছি, রোগবালাই সনাক্ত করে প্রেসক্রিপশন দিয়েছি, আরও কিভাবে ফলন বৃদ্ধি করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করেছি।’
নোয়াখালী, লক্ষীপুর,ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে আউশ মৌসুমের খরা সহিষ্ণু জাত বিনাধান-১৯ এর বীজ বিনামূল্যে পাঠিয়েছে কৃষিবিদরা। কৃষকদের বাড়িতে গিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে উঠান বৈঠক করছেন তারা। কৃষকদের তারা বুঝাচ্ছেন, অন্যান্য বছর আউশ মৌসুমে সেচ সংকটের কারণে ফসল না করলেও ভবিষ্যৎ খাদ্য সংকট নিরসনে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এবার তাদের এই মৌসুমেও ফসল করতে হবে। সেজন্য খরা সহিষ্ণু জাত বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে বীজ ও সার বিনামূল্যে দিচ্ছেন তারা।
কৃষকরা এখন অনলাইনেও চলে এসেছেন। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মেসেঞ্জারে ও ফোনে অনেকেই ফসল, সবজি ও ফল গাছের রোগবালাই এর প্রতিকার জানতে চাচ্ছেন। কৃষিবিদরা ফেইসবুক মেসেঞ্জারেই প্রেসক্রিপশন ও প্রতিকার কৌশল জানাচ্ছেন। তারা বিভিন্ন কৃষি উদ্যোক্তাকে বিশেষ করে শহরাঞ্চলের মানুষকে ছাদবাগান ও পতিত জায়গায় সবজি চাষে উৎসাহিত করছেন।
সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিত সুব্রত দেবনাথ জানালেন, আমাদের শুক্র-শনিবারেও ছুটি নেই। পিপিই তো নেই-ই উন্নতমানের মাস্ক এবং হ্যান্ডগ্লাভস্ও নেই। তবে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকদের কাছে আমরা পৌঁছাচ্ছি। এভাবে কাজ করতে গিয়ে করোনা আক্রমনের বড় ধরনের ঝুঁকি রয়েছে। তারপরও নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টাটা করে যাচ্ছি, দেশের জন্য অর্পিত দায়িত্ব পালন করছি। কৃষিবিদ নাদিম যোগ করেন, আমার দেশের একটি মানুষ যেন খাবারের অভাবে না মরে। করোনা পরবর্তী খাদ্য সংকট মোকাবেলার এই যুদ্ধে জয়ী আমাদের হতেই হবে।
বোরোতে বা রবি মৌসুমে দেশে যে উৎপাদন হয়েছে তা সন্তোষজনক। এখন আউশ ও আমনে বা খরিফ মৌসুমে যদি এই উৎপাদন নিশ্চিত করা যায় তবেই করোনা পরবর্তী খাদ্য সংকট আর থাকবে না। এই লক্ষ্যে দেশের সকল কৃষিবিদ ও কৃষিবিজ্ঞানীরা যে দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবী রাখে।
সহকারী পরিচালক, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট