খামারীদের ক্রান্তিলগ্নে
গোলাম মোস্তফা কামাল
খামারীদের ক্রান্তিলগ্নে ঃ কোভিড-১৯ এর সংক্রমণে সারা বিশ্বের মানব জাতি আজ হুমকির সম্মুখীন। সে সাথে আমাদের দেশও। কোভিড-১৯ বিস্তার দিন দিন বৃদ্ধিপাচ্ছে।মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তড়িৎ সিদ্ধান্তে সারাদেশে সাঃছুটি ঘোষণায় কোভিড-১৯ এর বিস্তাররোধ করতে যারপর নাই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। জানিনা আল্লাহ তায়ালা কবে এরথেকে মুক্তি দিবেন।
দেশের জনগণের খাদ্যে আমিষের চাহিদা মেটাতে খামারীদের বড় একটা ভুমিকা রয়েছে। গরুর দুধ আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে ভাইরাসের বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরিতে কার্যকর ভুমিকা পালন করে। বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী সারাদেশে দৈনিক দুধের চাহিদার ৬৯% বা ২৭,১২৩ মেঃটন দুধ উৎপাদন হচ্ছে যার কৃ্তিত্ব সকল খামারিদের।
এজন্য খামারীদের প্রতি সদয় দৃষ্টির জন্য সরকারের আশু পদক্ষেপ কামনা করে সকল অঞ্চলের ডেইরি খামারিরা যৌথভাবে যেন ৪% হারে ঋণের পরিবর্তে ৫% হারে ভুতর্কী ও প্রণোদনা পান সে জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বিনীত অনুরোধ করছি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবরে কিছু দাবী বা অনুরোধ/ প্রস্তাব সমুহঃ-
১) মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমরা সবসময়ই দেখেছি, দেশের বিভিন্ন বিপদকালীন সময়ে আপনিই বিচক্ষণতার সাথে সিদ্ধান্ত নিয়ে সমস্যা গুলি সুন্দরভাবে সমাধান করেছেন। তাই খামারীরা চাচ্ছি আপনি ডেইরি খাতটির দিকে একটু নেক নজর দেন। বিশেষ করে দুধ বিপনন এবং গবাদী পশুর খাদ্যের উচ্চমূল্যের বিষয়টি এবং ভারতের মতো আধুনিক প্রযুক্তিতে গরুর গোবর ও প্রশ্রাব কে কৃষি/ক্ষেতখামারের কাজে লাগিয়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্য সহ কৃষির পরিবর্তনের ব্যবস্থা নিন। এতে কৃষক ও খামারীরা উভয়ই লাভবান হবে দেশও এগিয়ে যাবে।
(২) মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দেশের এ ক্রান্তিলগ্নে এখনই পদক্ষেপ না নেয়া হলে ভবিষ্যতে দুধের ও মাংসের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিবে যা আপনার বিগত বছরের অর্জনে বিরুপ প্রভাব ফেলবে। কারন স্বাধীনতার পরবর্তী ৩৯ বছরে দুধ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল মাত্র ৩১%, আর মাত্র বিগত ১০ বছরে তা বেড়ে এখন উৎপাদন হচ্ছে ৬৯% । দেশে এখন চাহিদার তুলনায় ঘাটতি আছে মাত্র ৩১%। খামারীদের এ ক্রান্তিলগ্নে সহায়তা দিলে আগামী ৫/৬ বছরের মধ্যেই দুধে ভাতে বাংগালী ১০০% নিশ্চিত হবে ইনশাআল্লাহ।
৩) বেসরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত দুধ ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানসমূহ দুধ কেনা বন্ধ/সীমিত করায়, চা, মিষ্টির দোকান বন্ধ থাকায় দুগ্ধ খামারীদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। প্রতিদিন অর্ধেক দুধ ফেলে দিতে হচ্ছে। এতে দিনে প্রায় ৬৭ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। যা আগামী ২৪ এপ্রিল /২০২০ পর্যন্ত ১৩৮৭.৪০০ কোটি (তেরশ সাতাশি দশমিক চার কোটি) টাকায় দাঁড়াবে। বর্তমান পরিস্থিতিকে পুঁজি করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে গো খাদ্য উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে। যে সব প্রান্তিক খামারী দুধ বিক্রি করে সংসার চালায়, তারা দুধ বিক্রির টাকায় গরুর খাদ্য কিনতে পারছে না। এভাবে কিছুদিন চললে পুষ্টির অভাবে অনেক উচ্চ উৎপাদনশীল গাভী মারা যাবে। এতে দেশে দুগ্ধ ও মাংসে সংকট সৃষ্টি হবে। এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে সকল উপজেলা, জেলা সংগঠন যেন নিজ নিজ এমপির বা ডিসি মহোদয়ের মাধ্যমে স্মারক লিপি দিতে হবে ( যাতে চাডার্ট অফ ডিমান্ড থাকে)।
৪) বিশ্বের সকল দেশে যেমন ভারত সহ ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা প্রতি বছর ডেইরী খামারীদের সরাসরি হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়। যেমন ঃ- ভারত ১.৫ বিলিয়ন ডলার, আমেরিকা ২২ বিলিয়ন ডলার, কানাডা ১.২ বিলিয়ন ডলার এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ৫.৬ বিলিয়ন ইউরো, প্রতি বছর ভর্তুকি দেয়। তেমনি ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডেইরী খামারীদের ৪% সুূদ হারে ঋণের ৫% হারে যে ভুতর্কী ব্যাংকগুলোকে দিবেন, সেই ৫% ভুতর্কীর বরাদ্দ যেন সরাসরি সকল প্রকৃত খামারীকে নিজ নিজ ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে নগদ দেয়ার পদ্ধতি নিন।
৫) দেশের খামারীদের খামারের বিদ্যুৎ বিল কৃষির আওতায় আনতে হবে, কারন বর্তমানে খামারিরা প্রায় ৩ গুন বেশী হারে বাণিজ্যিক বিল প্রদান করছে।
৬) জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলায় দেশের কৃষি ও কৃষকের সর্বাঙ্গীন উন্নয়ন ও স্বনির্ভরতা। জাতির পিতার এ স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে খামারীদের অস্তিত্ব রক্ষায় ” খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়” থেকে সকল উপজেলা ও জেলাতে গো খাদ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য স্থানীয় ময়দার মিলগুলিকে মাসিক ভিত্তিতে নজরদারীর ব্যবস্থাকরণ ও ভুতর্কী দিয়ে গোখাদ্য (গমের ভুুসি ও ভুট্টা সহ সোয়ামিন মিল বা ঘৈল) সরবরাহের জন্য সকল ডিসি + ডিএলও, সকল ইউএনও + ইউএলও কে নির্দেশনা প্রদান করা জরুরী।
৫) খামারীদের হক মেরে বা খামারী সমিতির নাম ভাংগিয়ে ইতিপূর্বেই যে সব দুগ্ধ সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান বা শিল্প মালিকদেরকে বিশ্ব ব্যাংকের বিভিন্ন প্রকল্পের সিংহভাগ দেয়া হয়েছে তা যেন আর না করে ৭৫% বরাদ্দ খামারিদের মাঝে সমবন্টন পদ্ধতিতে ব্যবস্থা নিতে হবে।
৭) বিদেশি সকল গুড়ো দুধ আমদানি বন্ধ বা নিরুৎসাহিত করে ও প্রতিজেলায় গুড়োদুধ উৎপাদনের ব্যবস্থা নিতে হবে। এতে করে প্রতিজেলায় কর্মসংস্থানের সুষম ব্যবস্থা সহ দেশ ও খামারীদের উন্নয়ন তরান্বিত হবে।
লেখকঃ ব্যাংক কর্মকর্তা, সোনালী ব্যাংক লিঃ