খামারে গবাদীপশুর দানাদার খাদ্যকে নিরাপদ করণের উপায়

গবাদীপশুর দানাদার খাদ্যকে

গবাদীপশুর দানাদার খাদ্যকে

রাজিব রাজু
গবাদীপশুর দানাদার খাদ্যকে ঃআমাদের দেশে গবাদীপশুর খাদ্য হিসেবে দানাদার খাদ্যর প্রচলন খুবই ব্যাপক। তবে দানাদার খাদ্য গবাদীপশুর প্রকৃত খাবার নয়। আমরা গবাদীপশুর পুষ্টি চাহিদা মেটানোর জন্য দানাদার খাবারের সাথে বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন ও মিনারেল ফুড সাপ্লিমেন্ট হিসেবে দিয়ে থাকি, কারণ দানাদার খাদ্যের মধ্যে থেকে সব পুষ্টি উপাদান গবাদীপশু গ্রহণ করতে পারেনা। আপাতত যতদিন পুষ্টিগুণসম্পন্ন গবাদিপশুর প্রকৃত খাদ্য (সজিনা পাতা হতে পারে উৎকৃষ্ট) নিশ্চিত করতে না পারছি, ততদিন শষ্যদানাকে পুষ্টিকর ও নিরাপদ করে তুলতে পারি। অঙ্কুরিত শষ্যদানা গবাদীপশুর নিরাপদ খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
কেন অঙ্কুরিত শষ্য দানা?
একটি বীজ (বা শষ্য) এর মধ্যে অনেক পুষ্টিরগুণ আছে, কিন্তু তাদের অনেকেই অ্যান্টি-নিউট্রিয়েন্ট (যেমন ফায়োটিক এসিড) দ্বারা সঙ্কুচিত হয়। এটি প্রায় একটি ছোটখাটো গুপ্তধনের সিন্দুকের মতো, কিন্তু এটি খোলার সঠিক চাবির সন্ধান পেতে সক্ষম হতে হবে। অঙ্কুরোদগম প্রক্রিয়া একটি বীজ/শষ্যদানা কে জীবন্ত করে করে তোলে, যেন একটি জিবন্ত গাছ। এই প্রক্রিয়া এন্টি-নিউট্রিয়েন্টকে দুরে সরিয়ে রাখে, এটি পরিবর্তিত হয় ভিতরে এবং বাইরে, এবং যখন আপনি সেই বীজ/শষ্যদানাটি খেয়ে থাকেন, তখন আর আপনি কেবলমাত্র একটি বীজ খাচ্ছেন না, পরিবর্তে আপনি একটি জীবন্ত ক্ষুদ্র উদ্ভিদ খাচ্ছেন। বীজ থেকে ক্ষুদ্র উদ্ভিদে পরিবর্তন হওয়ার প্রক্রিয়াটি সহজ, কিন্তু যে পরিবর্তনগুলি হয় তা বিশাল।
Phytic অ্যাসিড ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, লোহা, তামা, এবং দস্তা সঙ্গে সংযুক্ত অবস্থায় থাকে, যা আপনাকে ঐসকল পুষ্টি ‘গ্রহণ/শোষণ’ অসম্ভব/কঠিন করে তোলে। এটি আপনার হজম প্রক্রিয়ায়/পাচনতন্ত্রে বাধা সৃষ্টি করে। অঙ্কুরোদগম প্রক্রিয়ায় শষ্যদানা থেকে আপনি খুব কার্যকরভাবে phytic অ্যাসিড এর কার্যকারিতা প্রশমিত (neutralize)করতে পারবেন।এছাড়া অঙ্কুরিত শষ্যদানা হজম প্রক্রিয়াকেও সহজ করবে।

শষ্যদানায় পানি লাগার ১০ থেকে ১২ ঘন্টা পর বিভিন্ন এনজাইম বিক্রিয়া শুরু করে। যার ফলে amino acids তৈরী হয়ে থাকে। জীবন ধারনের জন্য Essential Amino Acids এর সংখ্যা ২০ টি। সদ্য গজানো Grammenae (অর্থাৎ ধান,গম, কাউন, চিনা, মিলেট জাতীয় একবীজপত্রী শষ্য গোত্র) চারায় ১৯ টি essential amino acids থাকে (বাকি ১ টি প্রানীদেহে হয়, উদ্ভিদে হয়না)।

আপনাদের সুবিধার্থে অঙ্কুরিত শষ্যদানা উৎপাদন পদ্ধতিটি নিম্নে দেয়া হল-
১) প্রথমেই আপনি যে বীজগুলো(যেমন- গম, ভুট্টা ইত্যাদি) অঙ্কুরিত করবেন বলে ভাবছেন সেগুলো ভালভাবে পানিতে ধুয়ে নিন।
২) এরপর একটি পাত্রে পরিস্কার পানিতে বীজ গুলোকে গমের ক্ষেত্রে ৮-১২ঘণ্টা এবং ভুট্টার ক্ষেত্রে ২০-২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন…
৩) এভাবে ভিজিয়ে রাখার পর বীজগুলোকে পুনরায় পানিতে কয়েকবার করে ধুয়ে নিন এবং শষ্যদানা থেকে পানি নিঙরিয়ে নিন…
৪) এবারে একটি পরিষ্কার কাপড় ভিজিয়ে নিন এবং এটি দিয়ে বীজসমৃদ্ধ পাত্রটি ঢেকে ফেলুন অথবা ভেজা কাপড় দিয়ে শষ্যদান পুটলি বেধে ছায়াযুক্ত এমন একটি স্থানে রেখে দিন যেখানে তাপমাত্রা খুব বেশি নয়। এভাবে ২৪ ঘন্টার মধ্যেই আপনার শষ্যদানা অঙ্কুরিত হবে।
৫)এবার অঙ্কুরিত শষ্যদানা ধুয়ে নিয়ে গবাদীপশুকে পরিবেশন করুন পুষ্টিকর sprouted grain/অঙ্কুরিত শষ্যদানা।
গবাদীপশুর নিরাপদ উৎপাদনের স্বার্থেই অঙ্কুরিত শষ্যদানার ব্যবহার করা আমাদের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে।

**যতদিন বিকল্প খাবার নিশ্চিত না হচ্ছে এবং দানাদার খাওয়াতে হবে, ততদিন অঙ্কুরিত শষ্যদানা খাওয়ান। শুধু হাইড্রোপনিক ঘাসেও হবে, তবে সব পুষ্টি পরিপূণ মিটবে না তাতে ক্ষতিও হবেনা। আপনি শুধু হাইড্রোপনিক ঘাস খাইয়েও উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পাবেন এবং অন্যান্য অনেক খরচ কমে যাবে। সাথে সজিনা যোগ করতে পারলে দুধের উৎপাদন ৬৫% পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। আবার মোটাতাজাকরণের ক্ষেত্রে গরুর ওজন প্রতিদিন ১.৫ কেজি পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যায়।

Advisory Editor

Advisory Editor of http://www.krishisongbad.com/

Learn More →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *