গরু মহিষ ও ছাগল এর ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ ব্যবস্থাপনা পর্ব-২

গরু মহিষ ও ছাগল এর ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ

গরু মহিষ ও ছাগল এর ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ

কৃষিবিদ ফরহাদ আহাম্মেদ

ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ

গরু ও মহিষের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে রোগগুলো হচ্ছে বাদলা, তড়কা, গলাফুলা, ওলান প্রদাহ, নিউমোনিয়া, সাদা বাহ্য, প্যারাটাইফয়েড, নাভির রোগ, ডিপথেরিয়া ও প্লুরো নিউমোনিয়া রোগ হয়। ছাগলের নিউমোনিয়া, বাদলা, তড়কা ও ওলান পাকা রোগ হয়।
বাদলা রোগ
কারণ : ক্লসট্রিডিয়াম চোভিয়াই  নামক ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে হয়।
লক্ষণ : ১. দেহের মাংসল অংশ ফুলে যায় এবং হাঁটতে কষ্ট হয়।
২. আক্রান্ত স্থান কালো হয়।
৩. বিভিন্ন অঙ্গ অবশ হয় এবং ঘাড় ফুলে যায়।
৪. ফুলা স্থানে চাপ দিলে পচ্ পচ্ শব্দ হয়।
৫. ফুলা স্থানে পচন ধরে। ফুলা স্থান কাটলে কালো রক্ত বের হয়।
৬. দেহের তাপমাত্রা ১০৫ – ১০৭ ডিগ্রী ফারেনহাইট হয়।
৭. পশুর আহারে অনীহা হয় এবং জাবর কাটা বন্ধ হয়।
৮. দেহের লোম খাড়া হয়। শ্বাস কষ্ট হয়।
৯. চোখ ও নাক দিয়ে পানি পড়ে।
১০. পশুর কোষ্ঠ কাঠিন্য হয়। পেটে ব্যথা হয়।

প্রতিরোধ : ১. পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন স্বাস্থ্য সম্মত লালন পালন ব্যবস্থা করা।
২. সুস্থ পশুকে ৬ মাস বয়সে টিকা দিতে হবে।
৩. মৃত পশু মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।
৪. আক্রান্ত পশু সুস্থ পশু থেকে পৃথক করা।
প্রতিকার : এণ্টিবায়োটিক ইনজেকশন দিতে হবে।

তড়কা রোগ
কারণ : ব্যাসিলাস এ্যানথ্রাসিস  নামক ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে হয়। এর অন্যান্য নাম হচ্ছে ধড়কা, উবাল মুড়কি, পলি বা পীত জ্বর। পশু পাখির মাংস, পানি, ঘাস, খড় ইত্যাদির মাধ্যমে ছড়ায়।

লক্ষণ : ১. দেহের লোম খাড়া হয়। দেহে কাঁপুনি উঠে।
২. শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত ও গভীর হয়। দাঁত কটমট করে।
৩. দেহের তাপমাত্রা ১০৬ – ১০৭ ডিগ্রী ফারেনহাইট হয়।
৪. নাক, মুখ, প্রস্রাব ও মলদ্বার দিয়ে রক্তক্ষরণ হয়।
৫. ঘন ঘন পাতলা মলত্যাগ করে। মল আলকাতরার মত হয়।
৬. পশু খুব উত্তেজিত হয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়ে মারা যায়।
৭. লক্ষণ প্রকাশের আগেই পশু মারা যায়।
৮. দেহ দ্রুত পচতে থাকে এবং পেট ফুলতে থাকে।
৯. মরার পর রক্ত জমাট বাঁধে না।
১০. ক্ষুধা মন্দা হয়। নাক দিয়ে মাটির ঘ্রাণ নেয়।
প্রতিরোধ :
১. পশুর চামড়ার নিচে টিকা দিতে হবে। গরু বা মহিষের জন্য ১ সিসি এবং ছাগল ভেড়ার জন্য ০.৫ সিসি করে ছয়মাস বয়সে প্রথম এ টিকা দিতে হয়।
২. সুস্থ পশু অসুস্থ পশু থেকে পৃথক রাখা।
৩. মৃত পশু মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।
৪. পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জীবাণু পরিবেশে পশু পালন করতে হবে।
প্রতিকার : কোন চিকিৎসা বা প্রতিকার নেই।

গলাফুলা
গলাফুলা গরু ও মহিষের ব্যাকটেরিয়া সংক্রামক রোগ। ছাগল ও ভেড়াতেও এ রোগ হতে পারে। এ রোগের প্রচলিত কিছু নাম আছে, যেমনÑ ব্যাংগা, ঘটু, গলবেরা ইত্যাদি।
কারণ : ব্যাকটেরিয়া জীবাণু দ্বারা রোগ সংগঠিত হয়ে থাকে। রোগ জীবাণু সুস্থ পশুর নাকে, গলায় বাসা বেঁধে থাকে। পরে নিঃশ্বাস বা খাদ্যের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করে রোগ সৃষ্টি করে।

লক্ষণ : ১. মাথা, গলা, গলকম্বল, বক্ষস্থল, কণ্ঠ, পা, লেজের গোড়া ফুলে যায়।
২. অনেক ক্ষেত্রে পশুর মলদ্বার এবং যোনিমুখও ফুলে যায়।
৩. ফুলা জায়গায় হাত দিয়ে গরম অনুভূত হয়, চাপ দিলে ডেবে যায় এবং পশু ব্যথা অনুভব করে।
৪. চোখের প্রদাহ হয় এবং চোখ হতে অনবরত পানি পড়ে।
৫. ২-৩ দিনের মধ্যে পশু মারা যায়।
৬. পশুর নিউমোনিয়া হয়। ফুসফুসের প্রদাহ হয়, সাথে শুকনা কাশি থাকে।
৭. নাক দিয়ে শ্লেষ্মা ঝরে, পশুর শ্বাস কষ্ট হয়। শ্বাস ত্যাগের সময় শব্দ হয়।
৮. আক্রান্ত পশু পাতলা মলত্যাগ করে। মলের সাথে রক্ত মিশ্রিত থাকে।
৯. অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কয়েকদিনের মধ্যে পশু মারা যায়।

প্রতিরোধ ও প্রতিকার : ১. অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ইনজেকশন দ্বারা চিকিৎসা করাতে হয়।
২. পশুকে নরম পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়াতে হবে।
৩. স্বাস্থ্যসম্মত লালনপালন ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. সুস্থ অবস্থায় পশুকে নিয়মিত প্রতিরোধক টিকা দিতে হবে।
৫. মৃত পশুকে পুড়িয়ে ফেলতে হবে অথবা গর্ত করে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।

ওলান প্রদাহ বা ওলান পাকা রোগ
অধিক দুগ্ধ প্রদানকারি গাভী এবং ছাগীতে এ রোগ বেশি হয়।
কারণ : ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে হয়। অস্বাস্থ্যকর স্যাঁত স্যাঁতে বাসস্থান, ময়লা অপরিচ্ছন্ন হাত দ্বারা দুধ দোহন, বাঁটে বা ওলানে আঘাত, ওলানে দুধ জমাট বেঁধে থাকা প্রভৃতি কারণে নানাবিধ রোগ জীবাণু সংক্রমিত হয়ে রোগ সৃষ্টি করে।
লক্ষণ : ১. ওলান ফুলে যায়।
২. হাত দ্বারা ওলান স্পর্শ করলে গরম অনুভূত হয় এবং পশু ব্যথা পায়।
৩. বাঁট দিয়ে রক্ত মিশ্রিত বা পুঁজপূর্ণ দুধ বের হয়।
৪. অনেক পশুতে দুধ প্রথমে পাতলা লালচে রঙের হয় পরে আবার হলদে ঘন হয়ে থাকে।
৫. পশুর দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে ওলান শক্ত হয়ে যায়।
৬. ওলান এবং বাঁটে অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতের সৃষ্টি হয়।
৭. অনেক ক্ষেত্রে রক্ত দূষিত হয়ে পশু মারাও যেতে পারে।
৮. পশুর দুধ কমে যায় এমনকি বন্ধ হয়ে যায়।
৯. পশু খাওয়া বন্ধ করে নিস্তেজ হয়ে ঝিমাতে থাকে।
১০. পশু দুর্বল হয়ে যায়।
প্রতিরোধ ও প্রতিকার
১. পশুকে নরম ও পরিষ্কার বিছানায় থাকার ব্যবস্থা করতে হবে।
২. পশুর ওলানে বা বাঁটে কোনো ক্ষত থাকলে তার চিকিৎসা করাতে হবে। ক্ষতে যাতে মাছি বসতে না পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. ওলানের সমস্ত দুধ বের করে বাঁটের মধ্য দিয়ে ওলানে ওষুধ প্রয়োগ করে ওলান হাত দিয়ে হালকা মালিশ করে দিতে হবে।
৪. ওলানে ওষুধ প্রয়োগের পরেই পশুকে অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ ইনজেকশন দিতে হবে।
৫. স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থাগুলো পালন করতে হবে।
৬. দুধ দোহনের পূর্বে দোহনকারীর হাত ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। ওলান হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। প্রয়োজনে জীবাণুনাশক ওষুধ ব্যবহার করতে হবে।
৭. নিয়মিত ওলানের দুধ দোহন করতে হবে। অথবা বাছুরকে খাওয়াতে হবে। ওলানে যাতে দুধ জমে না থাকে সে ব্যবস্থা করতে হবে।
৮. আক্রান্ত পশুর দুধ দোহনকারী দ্বারা সুস্থ পশুর দুধ দোহন করানো যাবে না।
৯. ওলানে ওষুধ প্রয়োগের পর ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত দুধ খাওয়া যাবে না। দুধ দোহন করে ফেলে দিতে হবে।

নিউমোনিয়া
কারণ : ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে হয়। ঠাণ্ডা পরিবেশে অল্প বয়সে গরু, মহিষ ও ছাগলের বাচ্চার এ রোগ হয়।
লক্ষণ : ১. ঘন ঘন নিঃশ্বাস ছাড়ে এবং নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
২. নাক দিয়ে তরল পদার্থ বের হয় এবং প্রচণ্ড শুকনো কাশি হয়।
৩. দেহের তাপমাত্রা বাড়ে এবং হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়।
৪. পশু খাওয়া ছেড়ে দিয়ে মারা যায়।
প্রতিরোধ ও প্রতিকার : ১. আক্রান্ত পশুকে শুকনো, উষ্ণ ও পরিষ্কার জায়গায় রাখা।
২. ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে ওষুধ খাওয়াতে হবে।
৩. ঘরে আলো বাতাসের ব্যবস্থা করা।
৪. স্বাস্থ্যসম্মত লালন পালন ব্যবস্থা করা।
৫. জন্মের পর গাভী বাছুরের দেহ চাটার ব্যবস্থা করা।
৬. সুস্থ পশুকে টিকা দিতে হবে।

ককসিডিওসিস বা রক্তআমাশয়
কারণ : আইমেরিয়া নামক প্রোটোজোয়া দ্বারা এ রোগ হয়। বাছুরে এ রোগ বেশি হয়।
লক্ষণ : ১. দুর্গন্ধযুক্ত পাতলা পায়খানা হয়।
২. পায়খানার সাথে রক্ত ও মিউকাস থাকে।
৩. পশুর শ্বাস কষ্ট হয়।
৪. মলত্যাগের সময় পশু কোঁথ দেয় এবং ব্যথা অনুভব করে।
৫. খাওয়া বন্ধ করে।
৬. পশু খুব দুর্বল হয়।
৭. দেহে জলীয় অংশ কমে যায়।

প্রতিরোধ প্রতিকার/চিকিৎসা : ১. পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জীবাণুমুক্ত পরিবেশে লালন পালন করতে হবে।
২. পশুর থাকা-খাওয়ার স্থান সর্বদা শুষ্ক ও ঠাণ্ডা রাখতে হবে।
৩. আক্রান্ত পশুর বিছানাপত্র পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
৪. চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করাতে হবে।

কিটোসিস রোগ
কারণ : রক্তে গ্লুকোজের অভাব হলে কিটোসিস রোগ হয়। শর্করা জাতীয় খাদ্য হজমে সমস্যা হলে রক্তে এসিটোন বা কিটোন নামক বিষাক্ত দ্রব্য জমা হয়ে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এই বিষক্রিয়ার ফলে কিটোসিস রোগ হয়। বাচ্চা প্রসবের পর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এ রোগ হয়।

লক্ষণ : ১. মাংসপেশী খিঁচুনি, অস্বাভাবিক চলাফেরা, দাঁতকাটা এবং সবসময় কিছু চাটতে দেখা যায়।
২. গাভীর দুধ, প্রস্রাব, শ্বাস-প্রশ্বাসে এসিটোনের গন্ধ পাওয়া যায়।
৩. মাঝে মাঝে গাভী একস্থানে দাঁড়িয়ে চারদিকে ঘুরে।
৪. দৈহিক ওজন কমে যায়।
৫. গাভীর দুধ উৎপাদন কমে যায়।
৬. ক্ষুধামন্দা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।
৭. পক্ষাঘাত হয়ে পশু মারা যায়।
৮. পাতলা পায়খানা হতে পারে।
৯. পশু উদ্দেশ্যহীনভাবে চলাফেরা করে।

প্রতিরোধ ও প্রতিকার/ চিকিৎসা
১. পশুকে সবসময় সুষম খাদ্য খাওয়াতে হবে।
২. আক্রান্ত পশুকে কম চর্বিযুক্ত ও সহজপাচ্য খাদ্য খাওয়াতে হবে।
৩. প্রসবের পর অধিক দুধদানকারী গাভীকে খাবারের সাথে প্রতিদিন ৩৫০ মি.লি. প্রোপাইলিন স্লাইকল ৮ সপ্তাহ মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।

যক্ষ্মা রোগ
কারণ : রোগের জীবাণু দুধ ও মাংসের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করে বিষাক্ততা সৃষ্টি করে।
লক্ষণ : ১. ফুসফুসে আক্রান্ত হলে কাশি ও শ্বাসকষ্ট হয়।
২. অন্ত্রে আক্রান্ত হলে ডায়রিয়া মাঝে মাঝে কোষ্ঠ কাঠিন্য হয়।
৩. ওলানের যক্ষ্মায় ওলান ফুলে কিন্তু ব্যথা হয় না।
৪. পশু সহজেই বাধ্য হয় ও নিয়ন্ত্রণে আসে।
৫. দেহের তাপমাত্রা হ্রাস বৃদ্ধি হয়।
৬. আক্রান্ত পশুর ক্রমেই স্বাস্থ্য খারাপ হয়।

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা/ প্রতিকার
১. বাছুরকে যক্ষ্মা আক্রান্ত গাভীর দুধ খাওয়ানো যাবে না।
২. পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জীবাণুমুক্ত পরিবেশে লালন পালন করা।
৩. যক্ষ্মা রোগাক্রান্ত ব্যক্তিকে গবাদি পশুর তত্ত্বাবধানে দেয়া যাবে না।
৪. দুধ দোহনের আগে ওলান এবং দোহনকারীর হাত গরম পানি দিয়ে ধুইয়ে নিতে হবে।
৫. পশু চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা করাতে হবে।

পশুর পরজীবী রোগ
বাহ্যিক পরজীবী : গরু, মহিষ, ছাগল ভেড়াসহ বিভিন্ন গবাদিপশুর দেহের ত্বকে আঠালি, উকুন, মাছি, মাইটস, কেডস পরজীবী হিসেবে বাস করে। এগুলোর বর্ণনা নিচে দেয়া হলো :
ক. আঠালি : ১. প্রায় সকল গবাদি পশু আঠালি দ্বারা আক্রান্ত হয়।
২. আঠালি পশুর ত্বকে বাস করে, রক্ত চুষে খায়।
৩. বিভিন্ন জীবাণু সংক্রমণে সহায়তা করে।
৪. অধিক আক্রমণে ত্বকে ক্ষত সৃষ্টি হয়।

খ. উকুন : গৃহপালিত পশুতে ১. কামড়ানো উকুন ও
২. রক্ত চোষা উকুন আক্রমণ করে।
১. কামড়ানো উকুন : উকুন কামড়ালে পশুর দেহ খুব চুলকায়। ফলে পশু শক্ত জিনিসের সাথে শরীর ঘষে ক্ষতের সৃষ্টি করে। কামড়ানো উকুন সাধারণত কুঁজের উপর ও লেজের গোড়ার চারদিকে বাস করে।
২. রক্ত চোষা উকুন : রক্তচোষা উকুন কামড়িয়ে দেহ থেকে রক্ত চুষে খায়। রক্ত চোষা উকুন পশুর ঘাড়ের দুই পাশে, বক্ষস্থলে, উরুর ভেতরে, লেজের গোড়ায়, মাথায়, নাক, চোখ ও কানের চারপাশে জমাট বেঁধে আটকিয়ে থাকে। উকুন কামড়ানোর জন্য পশুর দেহ বাড়ে না, দুধ কমে যায় এবং কর্মশক্তি হারিয়ে ফেলে।

গ. মাছি : ১. গৃহপালিত পশুকে বিভিন্ন ধরনের মাছি আক্রমণ করে যেমনÑ মহিষের মাছি, আস্তাবলের মাছি, ঘোড়ার মাছি, উড়ন্ত মাছি ইত্যাদি।
২. কিছু মাছি পশুর দেহে কামড় দিয়ে রক্ত চুষে খায়।
৩. কিছু মাছি পশুর দেহের ক্ষতে ডিম পাড়ে।
৪. ডিম থেকে লার্ভা হয়, ফলে ক্ষতে পচন ধরে, ক্ষত শুকায় না।
৫. ক্ষতে বিভিন্ন রোগজীবাণু সংক্রমিত হয়ে রোগ সৃষ্টি হয়।
৬. কিছু মাছি দেহে চুলকানির সৃষ্টি করে।
৭. চুলকানোর জন্য দেহ শক্ত কিছুতে ঘষে বা জিহবা দিয়ে চেটে ঘায়ের সৃষ্টি করে।
৮. পশুর খাওয়া এবং দুধ দোহনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।

ঘ. মাইটস : ১. মাইটস পশুর দেহে সংক্রামক চর্মরোগের সৃষ্টি করে।
২. আক্রান্ত পশু বিরক্ত হয়।
৩. পশুর ত্বকের ক্ষতি করে।
৪. পশুর স্বাস্থ্য খারাপ হয়, কর্মক্ষমতা ও উৎপাদনক্ষমতা কমে যায়।
৫. পশুর দেহ চুলকানোর জন্য শক্ত জিনিসের সাথে গা ঘষে।

ঙ. কেডস : ১. ছাগল ও ভেড়ায় এ জাতীয় পরজীবী আক্রমণ করে।
২. এরা আঠালির মত পশুর রক্ত চুষে খায় এবং দেহ খুব চুলকায়।
৩. চুলকানোর জন্য শক্ত বস্তুর সাথে দেহ ঘষে ক্ষতের সৃষ্টি করে।

প্রতিরোধ ও প্রতিকার/ চিকিৎসা (সব পরজীবীর জন্য) :
১. নিয়মিত দেহ ঘষে গোসল করাতে হবে।
২. প্রতিদিন দেহ চিরুনি দিয়ে ব্রাশ করে দিতে হবে।
৩. পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন লালন পালন করতে হবে।
৪. নেগভুন/এসানটল/নিওসিডোল দেহে প্রয়োগ করতে হবে।
৫. ঘরের মেঝে জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
অন্তঃপরজীবী : অন্তপরজীবী হলোÑ গোলকৃমি, ফিতাকৃমি, পাতাকৃমি, সুতাকৃমি, ইত্যাদি।
গোলকৃমির লক্ষণ : ১. পশুর ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়।
২. দেহের ওজন কমতে থাকে।
৩. মাঝে মাঝে পাতলা পায়খানা হয়।
৪. দেহের লোম এলোমেলো হয়।
৫. রক্ত শূন্যতা দেখা দেয়।
৬. পশু পুষ্টিহীনতায় ভোগে।
৭. পশু মারা যায়।
প্রতিরোধ ও প্রতিকার/চিকিৎসা : ১. বাছুরের বয়স তিন মাস হলেই নিয়মিত কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে।
২. পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জীবাণুমুক্ত লালন পালন করতে হবে।
৩. গোয়াল ঘর শুকনা ও জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে।
৪. কাদা পানিযুক্ত বা স্যাঁত স্যাঁতে মাঠের ঘাস পশুকে খাওয়ানো যাবে না।
৫. ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক ওষুধ খাওয়াতে হবে।
ফিতাকৃমির লক্ষণ : ১. খাদ্য হজমে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়।
২. পশুর মাঝে মধ্যে পেটফুলা ও উদরাময় হয়।
৩. স্বাস্থ্যহানি হয়।
৪. গিড হলে পশু মাথা বাঁকা করে ঘুরতে থাকে।
৫. মস্তিষ্কের যে স্থানে গিড হয় সে স্থানের হাড় নরম হয়।
৬. আক্রান্ত হাড়ে স্পর্শ করলে ব্যথায় চিৎকার দেয়।
৭. অধিক কৃমি হলে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে পশু মারা যেতে পারে।
প্রতিরোধ ও প্রতিকার/চিকিৎসা : ১. বাছুরের বয়স তিন মাস হলেই নিয়মিত কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে।
২. পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জীবাণুমুক্ত লালন পালন করতে হবে।
৩. গোয়াল ঘর শুকনা ও জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে।
৪. কাদা পানিযুক্ত বা স্যাঁত স্যাঁতে মাঠের ঘাস পশুকে খাওয়ানো যাবে না।

লেখক: কৃষি প্রাবন্ধিক, সহকারী অধ্যাপক, কৃষিশিক্ষা, শহীদ জিয়া মহিলা কলেজ, ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল। বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক প্রাপ্ত লেখক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *