মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
(২য় পর্ব)
রিপিট ব্রিডিং(Repeat breeding )
বাংলাদেশের গাভী গুলোর মধ্যে আরো একটই সমস্যা হল পুন পুন গরম হওয়া। একে বলা হয় রিপিট ব্রিডিং(Repeat breeding ) এই গাভী আপাতত দৃষ্টিতে কোন রোগে আক্রান্ত বলে মনে হয়না। প্রথম একটা বা দুইটা বাচ্চাও দিয়েছিল আগে। কিন্তু বর্তমানে তা আর গর্ভ ধারণ করছেনা। পর পর তিন বার বীজ দেখানোর পরেও আবার হীটে আসে। বাংলাদেশের ১৩-২২ শতাংশ ও ভারতে ১৯-২১ শতাংশ গাভী এবং মহিষ গাভী প্রায় ৬.৪৮ শতাংশ রিপিট ব্রিডার হিসেবে চিহ্নিত আছে।
যখন কোনো গাভী সঠিক সময়ে (১৮-২১ দিন) গরম হয় ও কোনো প্রকার অসুস্থতার লক্ষণ থাকে না এবং কমপক্ষে ২ বার প্রজনন করানোর পরেও গর্ভধারণে ব্যর্থ হয় তখন তাকে বার বার গরম হওয়া গাভী বলে।৩ বার প্রজনন করানোর পরেও গর্ভধারণে ব্যর্থ হওয়ার হার প্রায় ১০০%। এতে করে বাছুর প্রদানের সংখ্যা কমে যায়। বার বার প্রজনন করানো ও চিকিৎসা করানোর খরচ বেড়ে যায়। অনেক সময় উন্নত মানের গাভী অকালে বাতিল করতে হয়, ফলে খামারি মানসিক চাপে পড়েন ও অর্থনৈতিকভাবে খুব ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন। কারণগুলো বাস্তবপক্ষে কিছু ক্ষেত্রে ভুল সময়ে প্রজনন করানোর ফলে হয়ে থাকে। কিছু গাভীতে প্রজনন তন্ত্রের বার্সা ও ডিম্বনালির জটিলতা ও জরায়ু সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে।কাছাকাছি সময়ে গরম হওয়াএ ক্ষেত্রে গাভী প্রজনন করানোর ১৭-২৪ দিনের মধ্যেই আবার গরম হয়।
- কারণ-
এই গাভীর মধ্যে যদি কোন হরমোন এর ক্ষরণ ও কার্যকারীতা কম হয় তখন এই সমস্যা হতে পারে - নিষেকের অকার্যকারিতা
- আয়ানাটোমিক দিম্বক্ষরণ
- সঠিক সময়ে গরম হওয়া নির্ধারণ করতে পারেনা।
- জনন তন্ত্রে সংক্রমণ
- কৃত্রিম প্রজননের সমস্যা
- অপর্যাপ্ত নিম্নমানের সিমেন।
প্রধানত ৮১.৮৭ শতাংশ জীবাণু ঘটিত এবং অবশিষ্ঠ ১৮.১৩ শতাংশ সংক্রামক নয় এমন কোন কারণে প্রাণী গর্ভধারণ না করে পুনঃপুনঃ গরম হয়।
কঃ সংক্রমক কারণ
বিভিন্ন ধরণের জীবাণু দ্বারা এই রোগ হতে পারে। তার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য জীবাণু সমুহ হল- ক্যাম্পাইলোব্যকটর ফিটাস, স্টাফাইলোকোক্কাস এরিয়াস, স্ট্রেপ্টোকোক্কাস পাইয়জেন্স, করাইনিব্যকটেরিয়াম পাইয়োজেন্স, ব্যাসিলাস প্রজাতি, ইস্ক্রেসিয়া কোলাই, ট্রাইকোমোনাস ফিটাস, এবং ছত্রাক সহ আরো অনেক জীবাণু দ্বারা হতে পারে। তবে এদের প্রত্যেকের কিছু আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট আছে যা দেখে ডাক্তার সনাক্ত করে থাকেন।
অল্প পরিমাণে জীবানূর সংক্রামন এবং সাব ক্লিনিক্যাল এন্ড্রোমেট্রাইটিস এর কারণে গাভী বার বার গরম হয়।
লুটিয়াল গ্রন্থির কার্যকারিতা তাড়াতাড়ি বন্ধ হলে বা স্বাভাবিক বা নিয়মিত ঋতুচক্রের মতো করপাছ লুটিয়াম স্বল্পস্থায়ী হলে এমন হতে পারে।।
যদি ডিম দেরিতে নিঃসরিত হয় এবং প্রজননে বীজের মান ভালো না হয়।
কোন কারণে যদি পূর্বেই ভ্রুণ মারা যায় এবং তার যথাযথ চিকিৎসার অভাব হবে বা দুর্বল/নিম্নমানের ভ্রণ সৃষ্টি হলে।
জরায়ুর পরিবেশ ভালো না থাকলে। জরায়ুতে কোন সিস্ট বা টিউমার জাতিয় ফাব্রোসিস হলে
প্রাণির দেহে হরমোন ব্যবহারের ফলে ডিম্বাশয়ে সিস্ট অথবা অন্য কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে।
জন্মগত ত্রুটির কারণে গাভীর যোনি নালি বন্ধ থাকলে গাভী গরমের সময় যথারীতি প্রজনন করালেও শুক্রানূ ডিম্বানুর সাথে মিলিত হতে পারেনা।
জরায়ু সংক্রমণ সাধারণত ষাঁড় দ্বারা মিলনের সময়, অস্বাস্থ্যকর কৃত্রিম প্রজনন ও প্রসবের সময় ও পরে জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হয়ে থাকে।এছাড়াও কিছু বিষয় বার বার গরম হওয়াকে প্রভাবিত করে। যেমন-ওলান প্রদাহ রোগ বার বার গরম হওয়ার হার বৃদ্ধি করে ও উৎপাদন কমিয়ে দেয়। দুধ উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর। বাচ্চা প্রদানের সংখ্যার ওপর। জটিল প্রসবের ঘটনা। প্রথম প্রজনন করানোর আগে চিকিৎসা দেয়া প্রভৃতি।
রোগ নির্ণয়ঃ
১.ভ্যাজাইনাল স্প¦কুলামের সাহয্যে পরীক্ষা করে যোনি নালী ও জরায়ু গ্রীবার অস্বাভাবিকতা নির্ণয় করা।
২.রেক্টাল পরীক্ষার মাধ্যমে গাভীর ডিম্বাশয় ও জরায়ুর রোগ নির্ণয় করা যায়। সিরামে ফসফরাস হ্রাস মাত্রায় থাকে।
৩.ডিমাবশয়ে ফলিকুলার সিস্ট থাকলে ইস্টড়োজেনের প্রভাবে রক্তে নিউট্রোফিলের সংখ্যা খুবই বেড়ে যায়।
- চিকিৎসাঃ
যদি মনে হয় গাভী সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত তাহলে সে অনুষায়ী চিকিৎসা করতে হবে। - এক্ষেত্রে লুগলস আয়োডিন সলুশন প্রস্তুত করে জরায়ুতে প্রয়েগ করা। স্টক সলুশনে পরিস্রুত পানিতে পাতলা করে ২০ মিলিলিটার সলুশন জরায়ুর মধ্যে প্রয়োগ করতে হবে। লুগল’স আয়োডিন চিকিৎসায় ৬০-৭৫ শতাংশ পশূ গর্ভধারণ করে।
- প্রাথমিকভাবে গাভীর গরম হওয়ার সময় লিপিবদ্ধ করে বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে গাভীটি কাছাকাছি সময়ে গরম হচ্ছে অথবা দেরিতে গরম হচ্ছে।
- ৩ বার প্রজনন করানোর পরও গর্ভধারণ না করলে আবার প্রজনন করানোর আগে ভালোভাবে ভেটেরিনারি ডাক্তার দ্বারা পরীক্ষা করতে হবে।
- প্রজনন করানোর সময় গাভীকে ১০০-৫০০/স এহজয ১/স প্রয়োগ করা যেতে পারে।
- জরায়ুতে গরম হওয়ার সময় ৮ম ঘণ্টা ও ৪তম ঘণ্টায় প্রয়োগ করা যেতে পারে।
প্রতিরোধ:
১ সঠিক সময়ে প্রজনন করতে হবে। গরম হওয়ার ১২ ঘণ্টা পরে ও ১৮ ঘণ্টার মধ্যে।
২ গাভী গরম হলে দুধের খুব কমে যায়। এর মাত্রা নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসা দেয়া যায়।
৩ প্রজননকারীকে সতর্কতার সাথে গর্ভে বাচ্চা আছে কিনা তা দেখে নিয়ে তারপর প্রজনন করতে হবে।
৪ প্রজনন করানোর সময় গাভীকে কোনো প্রকার ধকল দেয়া যাবে না যেমন- অনেক দূর হেঁটে নিয়ে যাওয়া, খাদ্য পরিবর্তন করা ইত্যাদি।
৫ পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য দিতে হবে।
৬ ভালো বীজ ও দক্ষ প্রজননকারী দ্বারা প্রজনন করাতে হবে।
৭ প্রয়োজনে ২ বার প্রজনন করানো যেতে পারে।
৮ প্রজনন করানোর পর ৩ সেকেন্ড গাভীর ক্লাইটোরিসে ম্যাসেজ দিতে হবে।
৯ প্রজনন করানোর পর গাভীকে ঠান্ডা জায়গায় রাখতে হবে।
মিথ্যা গর্ভধারণঃ
গাভীকে দেখে মনে হতে পারে সেটা বাচ্চা পেটে নিয়ে আছে, হিটে আসাও বন্ধ থাকে। কিন্তু কিছুদিন পরে দেখা যায় সেটা আসলে প্রেগনেন্ট ছিলনা। এটা খুব পরিচিত না হলেও দেখা যায়।
কারণঃ
কোন কারণে যদি করপাস লুটিয়াম থেকেই যায় , যা প্রোজেস্টেরণহরমন নিশ্বরণ করে ফলে প্রেগ্নেন্সি দেখায়।
চিকিৎসাঃ
এক্ষেত্রে এক ডোজ ইস্ট্রজেন ইঞ্জেকশন দিতে হবে।
উপরের বিষয়গুলো খেয়াল করে গবাদী প্রাণী পালন করলে আমরা অবশ্যই লাভবান হতে পারবো। আর তা হবে নিজের পাশাপাশি দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করা। আমাদের দেশ আরো এগিয়ে যাবে।