কৃষি গবেষণা কেন্দ্র
কৃষি সংবাদ ডেস্কঃ
গোপালগঞ্জে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের পূর্তকাজ উদ্বোধন করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক, এমপি। রবিবার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষ থেকে অনলাইনে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থা বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের (বারি) আওতায় এ গবেষণা কেন্দ্রটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন মন্ত্রী। এসময় কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: মেসবাহুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো: আরিফুর রহমান অপু, অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) মোঃ হাসানুজ্জামান কল্লোল, ঊর্ধ্বধন কর্মকর্তা,সংস্থাপ্রধানসহ প্রকল্প পরিচালকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী বক্তৃতায় কৃষিমন্ত্রী বলেন, গোপালগঞ্জ জেলাটি উন্নয়নের দিকদিয়ে কিছুটা বঞ্চিত। তার কারণ হলো ১৯৭৫ এর পরে সামরিক ও স্বৈরাচারী শাসকরা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় ছিল এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান হওয়ার কারণে ঐ সময়ে গোপালগঞ্জে উন্নয়নের কোন ছোঁয়া লাগে নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর অর্থনীতির বিভিন্নক্ষেত্রে গোপালগঞ্জের উন্নয়নের চেষ্টা করছেন। কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, এই কৃষি গবেষণা কেন্দ্রটি স্থাপিত হলে গোপালগঞ্জসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ভূমির প্রকৃতি ও জলবায়ু অনুযায়ী কৃষি প্রযুক্তি ও ফসলের জাতের উদ্ভাবন প্রভৃতি বিষয়ে গবেষণাকাজ ত্বরান্বিত হবে। এখানে গবেষণা শুরু হলে দক্ষিণাঞ্চল অনেক উপকৃত হবে। বাংলাদেশের একেক জেলার ভূ-প্রকৃতি একেক রকম; সে জন্য এলাকভিত্তিক গবেষণা হওয়া দরকার; সে লক্ষ্যেই এই গবেষণা কেন্দ্রটি স্থাপন করা হচ্ছে।
পরে ধান-চালের দামের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এই বছর কয়েক দফা লাগাতার বন্যা ও ৫ মাসব্যাপী অতি বৃষ্টিতে আউশ ও আমন ধানের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে প্রায় ১ লক্ষ ৫ হাজার হেক্টর জমির আমন ধান নষ্ট হয়েছে। তাতে করে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫ থেকে ২০ লক্ষ মেট্রিক টন ধান কম উৎপাদন হয়েছে। এ কারণে চালের দাম কিছুটা বেশি। বিশেষ করে কৃষক পর্যায়ে ধানের দাম অনেক বেশি। এই ঘাটতি মেটাতে সরকার ৫-৬ লক্ষ মেট্রিক টন চাল আমদানি করবে। কারণ এই ঘাটতি না মেটাতে পারলে মিলার, আড়াতদার ও চাল ব্যবসায়ী যারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করে তারা চালের দাম বাড়ানোর সুযোগ পাবে। ইতিমধ্যে, এই ভরা মৌসুমের সময়ও নানান কারসাজি করে মিলাররা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
ড. রাজ্জাক বলেন, সরকার চালের বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে চাল আমদানির শুল্ক কমিয়ে ২৫% করা হয়েছে। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি প্রাইভেট সেক্টরকেও চাল আমদানির সুযোগ দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে আমদানি করা চাল বাজারে আসা শুরু হয়েছে। পাশাপাশি, ওএমএসের আওতায় চাল বিক্রির কার্যক্রম চলছে। চালের কিছুটা ঘাটতি রয়েছে, দ্রুত আমদানি করে এই ঘাটতি মেটাতে পারলে এবং বাজারে সরবরাহ বাড়াতে পারলে চালের মূল্য স্বাভাবিক হয়ে আসবে এবং নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতায় আসবে। দেশে খাদ্য নিয়ে কোন সমস্যা হবে না। কারণ, দেশের প্রতিটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা দিতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ও সচেষ্ট। সেজন্য সরকার সরকারি-বেসরকারিভাবে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যাতে একটি মানুষও ক্ষুধার্থ না থাকে। একটি মানুষকেও যাতে না খেয়ে থাকতে না হয়।
ভবিষ্যতেও যাতে খাদ্য নিয়ে কোন সমস্যা না হয় সেজন্য সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, আগামী বোরো মৌসুমে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সর্বাত্মক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এই বছর ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ বাড়ানো হবে এবং ২ লক্ষ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড ধান চাষের কার্যক্রম চলছে। ইতোমধ্যে উৎপাদন বাড়াতে প্রায় ৭৬ কোটি টাকার হাইব্রিড ধানবীজ বিনামূল্যে কৃষকদের দেওয়া হয়েছে। আশা করি আগামী মৌসুমে বোরোর বাম্পার ফলন হবে।
এর পরে মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের (এডিপি) বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা সভা অনুষ্টিত হয়। সভায় জানানো হয়, চলমান ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপিতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় ৬৮টি প্রকল্পের অনুকূলে মোট ২ হাজার ৩৬১ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি হয়েছে ২২%। যেখানে জাতীয় গড় অগ্রগতি প্রায় ১৮%।