মো. আব্দুর রহমান:
তপ্ত দুপুরের ক্যাম্পাসে ইতিমধ্যে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। বৃষ্টির রিমঝিম শেষ হতে না হতেই হুড়হুড় করে সবাই গাড়িতে উঠা শুরু করে দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ বিজয়’৭১ এর সামনে দাঁড়ানো পরপর তিনটি বাস যেন কানায় কানায় ভরপুর; ভেটেরিনারি অনুষদের প্যাথলজি বিভাগের আয়োজনে তিন দিনের শিক্ষা সফরের উদ্দেশ্য উত্তরবঙ্গের রাজধানী বগুড়া।
প্যাথলজি বিভাগের তিন জন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক যথাক্রমে প্রফেসর ড. প্রিয় মোহন দাস, প্রফেসর ড. মো. রফিকুল ইসলাম ও ড. রোখসানা পারভীন মিথুন ম্যামের নেতৃত্বে বাসগুলো ছুটতে শুরু করেছে অজানার পানে। রাস্তার দু’ধারে সারি সারি গাছগুলোকে পিছনে যখন ছুটে বাসগুলো চলছিল তখনই বাসের মধ্যে শুরু হয়ে গেছে গান আর নাচ। কফি হাউজের আড্ডা থেকে শুরু করে চুমকি চলেছে একা পথে… এ যেন থামার নয়।
গান আর নাচ মিতালি যখন ফুরিয়ে আসছিলো তখন বাস গিয়ে থামলো কড্ডার মোড়ে। কড্ডার মোড়ে হালকা চা-নাশতা করে আবারো শুরু হইহূল্লোড় আর নাচ-গান। রাস্তার চারদিকে কৃষ্ণচূড়া আর সুবিশাল ভবন গুলো যেন বলে দিচ্ছিলো আমরা চলো এসেছি উত্তরবঙ্গের রাজধানী বগুড়া। অত:পর টানা পাঁচ ঘন্টার বেশি সময় বাসের ঝাকুনি হজম করে আমরা পৌঁছালাম পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (আরডিএ) ক্যাম্পাসে।
নিয়নবাতি আর শিক্ষাথীদের পায়ের আওয়াজে পল্লী উন্নয়ন একাডেমী যেন আজ নতুন রূপ পেয়েছে। রাতের আরডিএ যেন এক নিস্বর্গ পল্লী। আরডিএ ক্যাম্পাসের হোস্টেলে সবাই যে যার মতো রুমে গিয়ে কিছুটা ফ্রেশ হয়ে আবার কনফারেন্স রুমে জমায়েত হয়েছে। দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ঔষধ কম্পানী এসএকএফ এর আয়োজনে সেমিনারে সবাই ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে বসে আছে। ক্লাসের বকবকানি শুনতে শুনতে অভ্যস্থ শিক্ষার্থীদের কাছে সেমিনার যেন ক্লাস ছাড়া আর কিছুই নয়। সেমিনার শেষে রাতের খাবারের জন্য সবাই আবার ক্যাফেটেরিয়ার দ্বিতীয় তলায় হাজির। রাতের খাবারটা কোন মতে শেষ করে সবাই ক্লান্ত শরীর নিয়ে নিজ নিজ রুমে ফিরে গেল।
সকাল ৭টা বাজতে না বাজতে শুরু হয়ে গেছে ডাকাডাকি; যেতে হবে পোল্ট্রি ফার্ম ভিজিট করতে। সবাই মিলে ক্যাফেটেরিয়া থেকে সকালের নাস্তা করে আবার বাসে চেপে বসলাম। আরডিএ থেকে বেশ কয়েক কিলোমিটার দূরে মাড়িয়া নামক এলাকায় পোল্ট্রি ফার্ম ভিজিট করতে সবাই রওনা দিয়েছে। পোল্ট্রি ফার্ম এসে কিছু শিক্ষার্থী যখন ফার্ম মালিকদের প্রশ্ন করে জর্জরিত করছিল তখন কিছু শিক্ষার্থী নিজেদের মতো ফটো তুলছিল। মিথুন ম্যামের সাথে যখন সবার ফটো তোলা শেষ তখন ম্যাম নিজেই ক্যামরা হাতে নিয়ে সবার গ্রুপ ফটো তুলে দিলেন যা দেখে সবাই কিছুটা অবাক বনে গেল। এরপর আরো একটি ফার্ম ভিজিট শেষে আবারো ফিরে এলাম মমতা আর সৌন্দর্যে ঘেরা আরডিএ ক্যাম্পাসে।
এভাবেই ফার্ম ভিজিট, বিভিন্ন সেমিনার, আরডিএ ক্যাম্পাসে আড্ডা, ঘোরাঘুরি, ছবি তোলা আর আরডিএ অডিটোরিয়ামে বন্ধুদের আয়োজনে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করার মধ্য দিয়ে সময়গুলো বেশ ভালই কাটছিল। আজিজ, কংগ্রিভ, আনন্দ, সম্রাট, রুস্তম, শাওন, আকাশ, প্রিভা কিংবা সিমন্তীদের চমৎপ্রদ অভিনয়, গান আর নৃত্যে বেশ ভালই কেটেছিল সেদিনের সেই সন্ধ্যাটা। আরডিএ ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য, বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা আর ঘোরাঘুরির কাছে হেরে গিয়ে অনেকেই সেখানে থেকে যাবার বায়না ধরেছিল কিন্তু অত:পর চলে আসলো সেই বিদায়ক্ষণ। দুপুরের খাবার খেয়ে বিকেল ৩টার দিকে সবাই মিলে বাসে উঠলাম; এবার বাকৃবিতে ফেরার পালা।
আরডিএ ক্যাম্পাসে ভিতরের সারি সারি গাছের পাতাগুলো যেন বলছিল বিদায় বন্ধু, দেখা হবে আরেকবার। পথিমধ্যে গেলাম বগুড়ার ঐহিত্যবাহী মহাস্থানগড়। বগুড়া শহরের ১৮ কি.মি. অদূরে মহাস্থানগড় অবস্থিত। এখানে পূর্বে রাজা পশুরামের রাজ্য ছিল। এরপর দেখলাম মহাস্থানগড় জাদুঘর যেখানে মহাস্থানগড় খননের ফলে মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও সেন যুগের বিভিন্ন দ্রব্যাদিসহ অনেক দেবদেবীর মূর্তি সংরক্ষিত আছে। সবার শেষে শাহ সুলতান বলখীর মাজার দেখলাম আর খেলাম বগুড়ার ঐহিত্যবাহী দই। দই এর জন্য বগুড়া আজ সারাদেশে প্রসিদ্ধ।
গাড়ি চলে না চলে না রে.. গাইতে গাইতে আমরা রাত ৯টার মধ্যে পৌঁছে গেলাম আমাদের প্রাণের বাকৃবিতে। যাবার সময় সকলের মধ্যে যে আনন্দ আর উদ্দিপণা ছিল তা ৩দিনের স্মৃতি কাটিয়ে ফেরার পথে কিছুটা ম্লান হয়ে গেছিলো, শুধুমাত্র আবার ফিরে আসার প্রতিক্ষায়।
*******************
মো. আব্দুর রহমান
শিক্ষার্থী,
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ-২২০২।
মোবাইল: ০১৭৫৫-২৪৬৬৮৯