ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ পক্ষে কৃষি কাজে করনীয় নানা দিক

কৃষি কাজে করনীয় নানা দিক


# বকুল হাসান খাঁন #

বোরো ধানের পরিচর্যা, সেচ ও সার প্রয়োগ : এ সময় উফশী বোরো ধানের জমিতে আগাছা বাছাই করে ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করা যেতে পারে। ধানের চারা রোপণের ১৫-২০ দিনের মধ্যে প্রথম কিস্তি এবং ৩০-৪৫ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় কিস্তি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগের সময় জমিতে অবশ্যই হালকা পানি সেচ দিতে হবে এবং জমির সকল আইল বেঁধে দিতে হবে যাতে পানি বের না হতে পারে। ইউরিয়া ছিটিয়ে জাপানিজ রাইচ উইডার দিয়ে মাটি নিড়িয়ে দিলে ইউরিয়ার কার্যকারিতা বেড়ে যাবে। ধানের ফলন আরও বেশি বৃদ্ধি করতে চাইলে চারা লাগানোর ৭-১০ দিনের মধ্যে চারটি গুছির মাঝ খানে ১টি করে মেগা গুটি ইউরিয়া মাটিতে পুঁতে দিলে গাছ বেশি নাইট্রোজেন গ্রহণ করতে পারে। এতে ফলন প্রায় ২০%-২২% বেশি হবে। মনে রাখবেন গুটি ইউরিয়া কেবল ১ বার প্রয়োগ করতে হয়।

বোরো ধানের পামরি পোকা এবং মাজরা পোকার দমন : বোরো ধানের চারা কচি অবস্থায় কালো, ছোট, কাঁটাযুক্ত পামরি পোকার আক্রমণ হতে পারে। এ পোকা পাতার আগা থেকে নিচের দিকের সবুজ অংশ খেয়ে পাতা ঝাঁঝরা করে ফেলে। এতে গাছের আগা শুকিয়ে যায়। পাতার মধ্যে পোকার ডিম, কীড়া বা ছোট গ্রাব লেগে থাকতে পারে। তাই আক্রান্ত গাছের শুকিয়ে যাওয়া পাতার ১ মুঠি পরিমাণ কেটে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। এতে পোকার বংশ বৃদ্ধি কমে যাবে। এর পর প্রয়োজনে ম্যালাথিয়ন, সুমিসাইডিল, ডেসিস এ জাতীয় ওষুধ স্প্রে করা যেতে পারে। চারার বসয় ৫/৬ সপ্তাহ হলে মাজরা পোকার আক্রমণ হতে পারে। এ পোকার কীড়া গাছের কাণ্ড ছিদ্র করে ভেতরে ঢুকে নরম অংশ খেয়ে ফেলে। এতে আগাছা শুকিয়ে যায়। হাত দিয়ে ধরে টান দিলে শীষ উঠে আসে। মাজরা পোকার মথ ডিম পেড়ে বংশ বৃদ্ধি করে। এছাড়া এ সময় সবুজ পাতা ফড়িংও দেখা যেতে পারে। এরা ছোট, লম্বা, সবুজ বর্ণের এবং ডানার ২ পাশে ছোট ২টি কালো দাগ দেখতে পাওয়া যায়। এরা টুংরো ভাইরাস রোগ ছড়ায়। তাই এসব পোকা দমনে হাত জাল ব্যবহার করে ধরে মেরে ফেলতে হবে। প্রয়োজনে নিকটস্থ উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ মতো কীটনাশক স্প্রে করা যেতে পারে।

মরিচ, মিষ্টি আলু, তরমুজ, বেগুন, ক্ষিরা গাছের পরিচর্যা এবং সার প্রয়োগ : মরিচ, মিষ্টি আলু, তরমুজ, বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, ক্ষিরা গাছের গোড়ার আশপাশ নিড়িয়ে আগাছা পরিস্কার করে দিতে হবে। গোড়ার চারদিকে অথবা দু’পাশে হাত লাঙ্গল বা ছোট কোদাল দিয়ে সরু নালা তৈরি করে ইউরিয়া এবং পটাশ সার প্রয়োগ করে পানি সেচ দিতে হবে। মরিচ, মিষ্টি আলু, বেগুন গাছের গোড়ায় দু’পাশের মাটি টেনে আইল অথবা কেলি বেঁধে দিতে হবে। মাটিতে রস সংরক্ষণে তরমুজ, মিষ্টি কুমড়া, ক্ষিরা গাছের গোড়ায় খড়কুটা দিয়ে ঢেকে মালচিং দিতে হবে। সপ্তাহে ২/৩ দিন গোড়ায় পানি দিতে হবে। তাতে রস সংরক্ষণ থাকবে।

গম, আলু,ডাল জাতীয় ফসলের জমিতে ইঁদুর দমন : গম, আলু, ডাল জাতীয় ফসলের জমিতে ইঁদুরের ব্যাপক আক্রমণ হতে পারে। ইঁদুর যতটুকু খাওয়ার জন্য সংগ্রহ করে তার চেয়ে বেশি অংশ নষ্ট করে। তাই সময়মতো ইঁদুরের গর্তে পানি ঢেলে, ফসটকসিন জাতীয় টেবলেট প্রয়োগে চলাচল পথে অথবা গর্তের মুখে বিশ্বস্ত এবং ভাল ওষুধ কোম্পানির তৈরি বিষটোপ প্রয়োগ করে অথবা শুঁটকিতে জিংক ফসফাইড লাগিয়ে রেখে দিলে ইঁদুর খেয়ে মারা যাবে। ইঁদুরের কলে শুঁটকি, নারিকেল, টুকরা আলু দিয়েও ইঁদুর ধরে মারা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *