বিশেষ সংবাদদাতা, জামালপুর থেকেঃ
মৃত্তিকা দিবস ২০১৯ : আজ ৫ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখ মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, জামালপুরের উদ্যোগে বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস-২০১৯ পালিত হয়। সকাল ১০.০০ টায় মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, জামালপুর থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (আরএআরএস) এ গিয়ে শেষ হয়।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামালপুর জেলা প্রশাসন এর পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক জনাব কবির উদ্দীন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. মঞ্জুরুল কাদির, বিএডিসির উপপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ রিয়াজুল ইসলাম এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আব্দুল হামিদ। এছাড়াও বাংলাদেশ সুগার ক্রপ ইন্সটিটিউট জামালপুর কেন্দ্রের পিএসও ড. মোহিতুল আলম, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট জামালপুর কেন্দ্রের কর্মকর্তা, কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীবৃন্দ সহ অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ।
পরে আরএআরএস জামালপুরের সেমিনার কক্ষে বিশ্ব মৃত্তিকা দিবসের উপর এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত আলোচনা সভায় বিশ্ব মৃত্তিকা দিবসের উপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, আঞ্চলিক গবেষণাগার জামালপুরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. মোঃ নূরুল হুদা আল মামুন । তিনি তার উপস্থাপনায় বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এবারো ডিসেম্বরের ৫ তারিখে বিশ্ব ব্যাপি পালিত হচ্ছে জাতি সংঘের অধীন কৃষি ও খাদ্য সংস্থা (FAO) কর্তৃক ঘোষিত বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস-২০১৯ । এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো- Stop Soil Erosion, Save Our Soil অর্থাৎ ‘আমাদের ভবিষ্যৎ, মৃত্তিকার ক্ষয়রোধ’ । প্রতিনিয়ত মাটি ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। আর এ বাস্তবতাকে সামনে রেখে উদযাপিত হচ্ছে বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস। তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য মাটিকে সংরক্ষণ করে সীমিত জমি থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণে ফসল উৎপাদনের জন্য মাটিকে বিচক্ষণতার সাথে ব্যবহার করা দরকার। এ জন্য মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষার লক্ষ্যে মাটিতে পর্যাপ্ত জৈব সার দিতে হবে। মাটি পরীক্ষা করে সুষমমাত্রায় সার প্রয়োগ করতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জনাব কবির উদ্দীন বলেন, মাটি মায়ের মতন। আমরা যত উন্নতি সাধন করি না কেন আমাদেরকে মাটির কাছে ফিরে যেতে হবে। মাটির সঠিক পরিচর্যা না নিলে মাটির উর্বরতা মান ঠিক রাখা সম্ভব হবেনা। তিনি আরো বলেন, মৃত্তিকা বিজ্ঞানী ও কৃষিবিদদের আগামি দিনের চ্যালেঞ্জ বিষয়ে ও মাটি অবক্ষয়ের কারণগুলো সবাইকে অবহিত করতে আরো আলোচনা ও সভা করতে হবে। মাটি দূষণের অন্যতম কারণ পলিথিন। সেজন্য পলিথিন ব্যবহার, উৎপাদন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এব্যাপারেও সবাইকে অবহিত করতে হবে।
সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্য পেশ করেন আরএআরএস এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. মঞ্জুরুল কাদির। তিনি সকলকে মৃত্তিকা দিবসের শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন আমরা উদ্ভিদ নিয়ে যত গবেষণাই করি না কেন আমাদেরকে মাটির পরিচর্যা করতে হবে। মাটির স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সুষম সারের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের দেশের অনেক কৃষক এখনো মাটির স্বাস্থ্য ও পরীক্ষা সম্পর্কে অবহিত নন। তাদেরকে মাটি পরীক্ষার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএডিসির উপপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ রিয়াজুল ইসলাম বলেন, আমাদের সবাইকে মাটির ক্ষয় রোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।
মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, জামালপুর জেলা কার্যালয়ের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ জাহাঙ্গীর আলমের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন ডিএই জামালপুরের অতিরিক্ত উপপরিচালক কৃষিবিদ আব্দুল হামিদ । তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত আবাদি জমি কমে যাচ্ছে। বাড়ছে মানুষ। কৃষির জন্য এটা এক বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মাটির স্বাস্থ্য ঠিক রেখে কৃষি কাজে সবাইকে উদ্যোগ নিতে হবে। পরে আগত সকল সুধীজনদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন অনুষ্ঠানের সভাপতি কৃষিবিদ ড. মোঃ শওকতুজ্জামান, উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, জামালপুর। তিনি বলেন, মৃত্তিকার স্বাস্থ্য যে ভাবে দিন দিন ক্ষতিক্ষস্থ হচ্ছে তাতে এখনই সকলকে সচেতন হতে হবে। সবাইকে মৃত্তিকা দিবসের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করে বলেন, আগামি দিনের জন্য মৃত্তিকাকে সুস্থ রেখে যাওয়া আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য।