
গ্রন্থনাঃ শাহ এমরান, স্বপ্ন ডেইরির স্বত্তাধিকারী
অভিজ্ঞ ভাইদের পরামর্শ দেয়া হলো:
১) গ্রীষ্মকালে দুধ প্যাকেট করে সরাসরি দূরবর্তী বাজারে পাঠানো যাবে না। প্যাকেট করে ডিপ ফ্রিজে রেখে পরের দিন সাপ্লাই দিন- তাহলে নষ্ট হবে না। শক্ত ফ্রোজেন হওয়ার দরকার নেই- ঠান্ডা হলেই চলবে। ফর্মুলাটি হচ্ছে- যত দ্রূত সম্ভব দুধকে ফ্রিজে ঢুকাতে হবে। কারন স্বাভাবিক তাপমাত্রায় প্রতি মিনিটে কাচা দুধে ব্যাকটেরিয়াল কাউন্ট বাড়তে থাকে। দুধ বালতিতে দোয়ানোর পর বালতিটি একটি বড় গামলার পানিতে বসিয়ে রাখুন। কারন ওলানের দুধ গরম থাকে- ঠান্ডা না করে প্যাকেট করা যাবে না। সম্ভব হলে গামলাটিতে হোস পাইপ দিয়ে পানি ফ্লো করাতে পারেন- তাহলে দ্রূত ঠান্ডা হবে। এবার দুধ দ্রূত প্যাকেটে ভরে ডিপ ফ্রিজে ঢুকান। যত দ্রূত পুরো প্রক্রিয়াটি করতে পারবেন, আপনার ফ্রীজে রাখা দুধ তত বেশী দিন ভাল থাকবে। ফ্রীজে রাখলেও দুধ কিন্তু সাথে সাথেই ঠান্ডা হয়ে যায় না। দুধ দোহনের পর প্যাকেটে ভরে ফ্রিজে রাখতে যত দেরী করবেন- দুধে ব্যাকটেরিয়াল লোড তত বাড়তে থাকবে- সাথে নষ্ট হওয়ার প্রবণতাও বাড়বে। অনেক সময় দুধ দেরিতে ফ্রিজে ঢুকালে, ফ্রিজে ঢুকানোর সময় হয়তো দুধ ভাল ছিল কিন্তু ফ্রিজে ঢুকানোর পর ঠান্ডা হতে সময় লাগায় ততক্ষণে দুধ নষ্ট হয়ে যায় এবং পরে নষ্টটাই ঠান্ডা হয়।
২) পার্থ সারথী ভাইয়ের সাথে কথা হল। উনার ফ্রিজের থার্মোস্ট্যাট রেগুলেটর মিডিয়ামে (৪ এ) দেয়া ছিল। এটা সর্বোচ্চ অর্থাৎ ৭ এ দেয়ার জন্য পরামর্শ দিলাম। এতে ঠান্ডা বেশী হবে। একদিনে সব প্যাকেট ফ্রোজেন হবে না- কিছু কিছু প্যাকেট তরল থাকবে- এতে সমস্যা নেই।
উনি ফলের খোলা ক্রেটে দুধ পরিবহন করেন। যাতায়াতে ৫ ঘন্টা লাগে- ৫০-৬০ কিমি. দূরে যান। যেতে যেতে দুধের ঠান্ডা কমে যায়। গন্তব্য স্হানে পৌছে দুধ বিলি করতে আরও কিছু সময় লাগে। যারা দুধ নেন তারা ফ্রিজে রাখলে সেটি পুনরায় ঠান্ডা হতে আরও ২-৪ ঘন্টা লাগবে। এই লম্বা সময়ের কারনেই দুধ ফেটে যায়। উনার পরিবহন পদ্ধতিতে পরিবর্তনের পরামর্শ দিলাম। উনাকে তাই বস্তার ভিতর টিনের চালের নিচে যে ইনসুলেটর সিট দেয়া হয় তা ডাবল লেয়ারে দিয়ে দুধ পরিবহনের পরামর্শ দিলাম। আমি নিজেও এভাবে পরিবহন করছি। আমার খামারের বেশ কিছু দুধ শেরপুর থেকে ২০৫ কিমি. পথ পাড়ি দিয়ে বাসের বক্সে করে কোন সমস্যা ছাড়াই ঢাকার তেজগাও তে যায়।
★★আইস বক্স বা মাছ পরিবহনের শোলার বক্সে পরিবহন করলেও দুধ ভাল থাকবে কিন্তু বেশী পরিমানে পরিবহন করা যায় না। একটি ৫০ কেজির বড় বস্তায় ইনসুলেটর সিট দিয়ে ৪৫-৫০ কেজি পর্যন্ত দুধ পরিবহন করা যায়।
★★পানি বরফ করে সাপোর্ট দেয়ার পরামর্শটিও ঠিক আছে- কিন্তু সমস্যা হল ফ্রিজে দুধ রেখেই তো জায়গা শেষ- বরফ কোথায় রেখে করবে??
আমি আজ থেজে ৯বছর আগে যখন খামার দিই তখন এই সমস্যায় পরি। তখন অনেক মাথা খাটিয়ে একটা বুদ্ধি বের করি।গরমের সময় বিদ্যুত ও যেত প্রচুর। তাই সব দুধ ১-৫ ঘন্টা লেগে যেত পেক করতে। তাই ফ্রিজে ১ লিটার এর -২০ টা বোতলে পানি ভরে বরফ করে রাখতাম। দুধ দোহন করার পর এই বোতল গুলো দুধের বালতি বা কাইরায় দিয়া রাখতাম।ব্যাস সব দুধ ঠানডা। আসতে আসতে সব প্যাক করতাম টেনশন ছাড়াই। আর কিছু সাদা পানি ভরে প্যাক করে বরফ করতাম। তা দিয়া দুধের প্যাক এর সাথে সাজিয়ে পরিবহন করতাম।এটা হলো ছোট খামারীদের জন্য।
সকালের দুধের জন্য
আপনি প্রথমে দুধের প্যাকেটে পানি ভরে ২০ লিটার আইস প্যাক বানান। এর পর ড্রামে অন্য প্যাক দুধের সাথে সেগুলা পরিবহন করুন ।
মোটামুটি ১০০ লিটার ক্যারি করার বক্স পাওয়া যায় ঢাকায় ।
বিকালের দুধ
বিকালের দুধ এর ক্ষেত্রে Khalid H Sarker Robin ভাইয়ের কথা টা মেনে চলুন।
যদি বিকালের দুধ ৩০ + হয় এবং আপনার ডিপ ফ্রিজার যদি ৩০০ লিটার ক্যাপাসিটি হয় তবে বিকালের দুধ ভোরের আগেই প্রায় বরফ হয়ে যাওয়ার কথা । তবে দুধ প্যাক করার আগে অবশ্যই ঠাণ্ডা করে নিবেন ।