ঝিনুক শিল্প : কর্মসংস্থানের পাশাপাশি রপ্তানীতে অপার সম্ভাবনা

ঝিনুক শিল্প

BFRI Pearl Culture Success research news pic-2
মো. ইউসুফ আলী, বাকৃবিঃ
ঝিনুক শিল্প আমাদের দেশে একটি সম্ভাবনাময় শিল্পের নাম। মাছ চাষের পাশাপাশি ঝিনুক চাষ করে আমরা পাই মহামূল্যবান বস্তু ‘মুক্তা’। সৌখিনতা ও আভিজাত্যের প্রতীক হলেও মুক্তা কিছুু জটিল রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এছাড়া মুক্তা উৎপাদনকারী ঝিনুকের খোলস অলংকার ও সৌখিন দ্রব্যাদির পাশাপাশি হাঁস-মুরগী, মাছ ও চিংড়ির খাদ্যের প্রয়োজনীয় উপাদান ক্যালসিয়ামের একটি প্রধান উৎস। উন্নত বিশ্বে ঝিনুকের মাংস মানুষের খাদ্য হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। সম্প্রতি ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ( বিএফআরআই) দেশে প্রথমবারের মত ইমেজ (প্রতিচ্ছবি) মুক্তা চাষে সফলতা পেয়েছেন। মিঠাপানির ঝিনুক থেকে পাখি, মাছ, নৌকাসহ বিভিন্ন বন্তুর নকশার দৃষ্টিনন্দন ইমেজ মুক্তা উৎপাদনে তারা ওই সফলতা পেয়েছেন। উদ্যোক্তা ও গ্রামীণ পর্যায়ে এ প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হলে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি রপ্তানী খাতেও ব্যাপক সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন ইনস্টিটিউটটির মহাপরিচালক।

বিএফআরআই মুক্তা বিজ্ঞানী ড. মোহসেনা বেগম তনু জানান, আমাদের দেশে দেশে মুক্তা উৎপাদনকারী ৫ প্রজাতির মিঠাপানির ঝিনুকের মধ্যে ২ প্রজাতির ঝিনুক (Lamellidens marginalis Ges L.corrianus) ইমেজ  মুক্তা উৎপাদনে অধিকতর উপযোগী। ইমেজ মুক্তা উৎপাদনের ক্ষেত্রে বড় আকৃতির স্বাস্থ্যবান ঝিনুক বাছাই করা হয়। পরে চ্যাপ্টা আকৃতির বস্তুর (মোম, প্লাষ্টিক, স্টিল) প্রতিচ্ছবি ঝিনুকে স্থাপন করে ঝিনুক পুকুরে ছেড়ে দেয়া হয়। ঝিনুক পুকুরে ছাড়ার পর থেকে ৭-৮ মাস পরই ওই নকশার উপর ঝিনুকের আঠালো রস পড়ে হুবহু ওই আকৃতির ইমেজ মুক্তা উৎপাদিত হয়। প্রতি শতাংশে ৮০-১০০টি ঝিনুক মজুদ করে ইমেজ মুক্তার উৎপাদন ও বৃদ্ধি সর্বোচ্চ পাওয়া গেছে। অপারেশনকৃত ঝিনুকের বেঁচে থাকার হার ৮০ শতাংশ পাওয়া গেছে। অপারেশনের পর প্রথম মাসে ঝিনুক থেকে ইমেজ বের হয়ে যেতে পারে। তাই অপারেশনের পর ১ম এক মাস ঝিনুক ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। ইমেজ মুক্তা আহরনের পূর্বে  পুকুরে পরিমিত পরিমাণে সার প্রয়োগ করতে হবে এবং পানির গুনাগুণ নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে। এতে ইমেজ মুক্তার ঔজ্জল্য ও গুণগতমান ভাল হয়।
দেশে ইমেজ মুক্তা উৎপাদনের সম্ভাবনার বিষয়ে ইনস্টিটিউটটির পরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, আমাদের জলবায়ু ও পরিবেশ ইমেজ মুক্তা উৎপাদনের উপযোগী। দেশে-বিদেশে ইমেজ মুক্তার ব্যাপক কদর রয়েছে। এর বাণিজ্যিক দিকও সম্ভাবনাময়।মাছে সাথে ঝিনুক চাষ করলে কোন খরচ ছাড়াই খামারিরা অধিক আয় করতে পারবে। স্বল্প পুঁজিতে গ্রামীণ মহিলাদের মুক্তা উৎপাদনে সহজেই সম্পৃক্ত করতে পারলে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হতে সহায়ক হবে।

এ প্রসঙ্গে ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মোহাম্মদ জাহের বলেন, আমাদের দেশে মুক্তা উৎপাদনকারী ঝিনুকের আকার ছোট হওয়ায় ভিয়েতনাম থেকে অপেক্ষাকৃত বড় ঝিনুক সংগ্রহের প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। তবে ইতোমধ্যেই দেশীয় ঝিনুক থেকে আমরা ইমেজ মুক্তা চাষে সফলতা পেয়েছি। উদ্যোক্তা ও গ্রামীণ পর্যায়ে এ প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হলে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি রপ্তানী খাতেও ব্যাপক সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *