ডেইরী এবং ফ্যাটেনিং নিয়ে ধারাবাহিক প্রশ্ন-উত্তর পর্ব :০১

ডেইরি প্রশ্ন উত্তর

শাহ এমরানঃ স্বপ্ন ডেইরী এন্ড ফিসারিজ

ডেইরী এবং ফ্যাটেনিং নিয়ে অনেক ভাই অনেক প্রশ্ন করেন যার উত্তর প্রত্যেককে আলাদাভাবে দেয়া সম্ভব হয়না। তাই ধারাবাহিক কিছু সাধারন প্রশ্ন যা সবাই করেন তার উত্তর লেখার চেস্টা করলাম।ভুল হলে ক্ষমা করবেন। আমি নিজেই আসলে খুব ভালো জানি বলে মনে হয়না, অনেক কিছু জানা বোঝা এখনো বাকী, তাই মাঝে মাঝে চিন্তায় পড়ে যাই। আমি আপনাদের মতই নতুন, তবে দশ মাঠে আর দশ ঘাটে পানি খাওয়া হয়েছে। যা লিখছি আমার ব্যক্তিগত বাস্তব কিছু অভিজ্ঞতা। অনেকের পছন্দ হবে, অনেকের হবেনা। আমার যদি সম্ভব হতো প্রতিদিন আপনাদের কারো না কারো ফার্মে গিয়ে দেখে কিছু শেখার, আমি সত্যি যেতাম। কিন্তু বাস্তবতা অনেক সমস্যা ফেলে দেয়। আমার সব লেখা ছোট করে নতুনদের জন্য, বড়দের জন্য নয়। এই লেখাই আমার যুদ্ধ বাংলাদেশের ডেইরী এন্ড ফ্যাটেনিং সেক্টরকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য।

প্রশ্ন ০১: আমি বিদেশে থাকি। কিছু টাকা জমিয়েছি, দেশে এসে ফার্ম করতে চাই। ফার্ম করে কি সংসার খরচ চালাতে পারবো?

উত্তর: ধরে নিলাম আপনি ৩০ লাখ টাকা জমিয়েছেন। প্রথেমেই বলবো, না আপনি পারবেন না সংসার খরচ চালাতে। কারন আমি চাইনা আপনি এই টাকার পুরোটা এই খাতে বিনিয়োগ করেন এখন। দেশে আসার আগেই আপনি ছোট করে ৫ লাখ টাকা দিয়ে শুরু করতে পারেন। দেশে আপনার পরিবারের পক্ষ থেকে যদি কেউ থাকে তারা দেখাশুনা করবে। এই ক্ষেত্রে খুব কম খরচে একটা গোয়াল ঘর সাথে ২ টা ১২-১৪ লিটার দুধের গরু বাছুর সহ এবং ৩-৪ টা ছোট দেশী ষাড় বাছুর কিনতে পারেন। ঘাস চাষ অবশ্যই করতে হবে খরচ কমিয়ে আনার জন্য। দুধের গরুগুলো ৭-৮ মাস দুধ দেবে, এটা দিয়ে সব গরুর খাবার খরচ, এবং ১ জন কর্মচারীর বেতন হয়ে গিয়ে যা থাকবে তা জমিয়ে রাখবেন। ডেইরী ব্যবসা লাভবান তখনই হবে যদি আপনার গরুগুলো প্রতি বছর বাচ্চা দেয় এবং খরচ কমিয়ে আনতে পারেন। এটাই মূল মন্ত্র। আপনার গরু ২ টি দুধ দেয়া বন্ধ করে দিলে ৪-৫ মাস ড্রাই সময়টা জমানো টাকা খরচ করবেন বা ১-২ টা ষাড় বিক্রি করে দিলেন, পাশাপাশি দানাদার খাবার কমিয়ে ঘাস খর খাইয়ে খরচ কমানোর চেস্টা করবেন।এই সময়টা চালিয়ে নিয়ে যাওয়াটাই কঠিন। ৪-৫ মাস পরে আবার বাচ্চা দিলে আবার দুধ বিক্রি করে আগের অবস্থায় চলে আসতে পারবেন।

এই ক্ষেত্রে যদি ষাড় বাছুর গুলো না কিনে আপনি শুধু মাত্র ২ টা দুধের গরু দিয়েও শুরু করতে পারেন। এগুলোর দুধ দেয়া বন্ধ হয়ে গেলে আবার ২ টা কিনবেন। এভাবে একটা সাইকেল করে নিলে দুধের টাকা দিয়েই খাবার খরচ মিটিয়ে হয়তো কিছু টাকা হাতে থাকতে পারে। দুধের দাম কত, কোথায় কিভাবে বিক্রি করবেন তা আগে থেকে জেনে বুঝে ডেইরী শুরু করবেন।

এভাবে কমপক্ষে ৩-৪ বছর যাবার পর একটা ভাল অবস্থানে যখন চলে আসবে, তখনই আপনি দেশে চলে আসতে পারবেন। এই ব্যবসা না বুঝে আগেই দেশে চলে আসবেন না প্লিজ।

প্রশ্ন ০২: আমি কি ডেইরী শুরু করবো নাকি ফ্যাটেনিং?

উত্তর: কোনটা শুরু করবেন তা নির্ভর করবে আপনার আর্থিক, পারিপার্শ্বিক এবং অবস্থানগত সুযোগ সুবিধার কথা বিবেচনা করে। আপনার এরিয়াতে যদি দুধের দাম ভালো থাকে, আপনি যদি ভালো দুধের গরু জোগাড় করতে পারেন, ডাক্তার বা পশু হাসপাতাল কাছেই থাকে আপনি ডেইরী করতে পারেন। তবে ফার্ম শুরু করা যতনা কঠিন তার থেকে বেশী কঠিন এর ব্যবস্থাপনা কৌশল। ফ্যটেনিং এর ক্ষেত্রে যদি শুধু কোরবানীকে লক্ষ্য রেখে আগান তাহলেও ঝুকি আছে। কারন কোরাবানীর বাজার নিয়ন্ত্রন করে ভারতের গরুর যোগান। আপনি আমি এই ঈদের বাজারে গরুর দাম কোনভাবেই নির্ধারন করতে পারবোনা। তাই যদি ১২ মাস ধরে বিক্রি চালিয়ে যেতে পারেন ফ্যাটেনিং এ ঝুকি অনেক কমে যাবে।

প্রশ্ন ০৩: ডেইরী ফার্মের সফলতার মূল দিক কি কি?

উত্তর: ৩ টা দিক সব থেকে গুরুত্ত পূর্ন: ১) গরুকে প্রতি বছর বাচ্চা দিতে হবে। ২) ফার্মের খাবার খরচ কমিয়ে আনতে হবে ৩) নিজের উপস্থিতি

গরু যদি ৫ লিটার দুধ ও দেয়, কিন্তু প্রতি বছর বাচ্চা দেয় তাহলে ফার্ম লাভবান হবে। পাশাপাশি খরচের লাগাম কে কঠিনভাবে ধরে রাখতে হবে। এজন্য ঘাস চাষ করতে হবে, সাইলেজ করতে হবে। আর নিজের উপস্থিতি, এর কোন বিকল্প নেই।

প্রশ্ন ০৪: #  গরু হিটে আসার পর কয়েকবার সিমেন বা বীজ দেয়া হয়েছে, বীজ রাখছেনা!! কি করা যায়?

উত্তর: হয়তো যে এ আই কর্মী সিমেন পুশ করছে তিনি এক্সপার্ট নয়, হয়তো যে সিমেন যে টেম্পারেচার এ রাখার কথা তা রাখা হয়নি, নস্ট হয়ে গেছে। যার এরিয়াতে ভালো এ আই কর্মী নাই, এভাবে বার বার সময় নস্ট না করে ভাল জাতের ষাড় দিয়ে পাল দিতে হবে। ফার্মে একটা ভালো জাতের ফ্রিজিয়ান বা শাহীওয়াল ষাড় রাখা এজন্যই খুব জরুরী। গরু প্রতি বছর বাচ্চা না দিলে ফার্ম লোকসান হবেই। অত্যন্ত জরুরী এটা।

আরো খবর পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিনঃকৃষিসংবাদ.কম https://web.facebook.com/krishisongbad/

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *