তেলাপিয়া মাছ নিয়ে আর বিভ্রান্তির সুযোগ নাই- বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট

তেলাপিয়া মাছ নিয়ে

মো. আব্দুর রহTelapia Fishমান, বাকৃবি:

তেলাপিয়া মাছ নিয়ে সম্প্রতি কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে নেতিবাচক সংবাদে বিভ্রন্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)।রোববার দুপুরে বিএফআরআই’এর উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এএইচএম কোহিনূর স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানানো হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে তেলাপিয়া মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে ২.৯৮ লক্ষ মেট্রিক টন তেলাপিয়া মাছ উৎপাদন হয় যা অভ্যন্তরীণ মাছ উৎপাদনের শতকরা ১০.০৯ ভাগ। বাংলাদেশ ছাড়াও এশিয়ার চীন, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ প্রভৃতি দেশে প্রচুর পরিমাণে তেলাপিয়া মাছের উৎপাদন হয়ে থাকে। মাছটি পুষ্টিকর, সুস্বাদু এবং প্রতি ১০০গ্রাম মাছে ২৬ গ্রাম প্রেটিন, ২.৭ গ্রাম ফ্যাট, অল্প পরিমাণে ভিটামিন বি-৬, ভিটামিন বি-১২, পেন্টোথেনিক এসিড ও ওমেগা-৩ নামক ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায় যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই দরকারি। কিন্তু সম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি গণমাধ্যম কোন নির্ভর যোগ্য তথ্য উপাত্ত ছাড়াই একে স্লো পয়জনিক উল্লেখ করে সংবাদ প্রকাশ করেছে। যার ফলে ভোক্তাদের মনে এক ধরনের ভীতির সঞ্চার হয়েছে এবং তেলাপিয়া মাছ চাষীরা ক্ষতির সম্মুখিত হতে যাচ্ছে। স্বল্পসময়ে স্বল্প প্রোটিন সমৃদ্ধ সম্পূরক খাদ্য শুধুমাত্র চালের কুঁড়া খাবার হিসেবে প্রয়োগ করে সহজেই এ মাছ চাষ করা যায়। উপযুক্ত পরিবেশে চাষকৃত তেলাপিয়া মাছ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করলে তা মানবদেহের উপর কোন ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে না।

বিএফআরআইয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, খামারে মাছের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ, পানির গুণাগুণ উপাযোগী মাত্রায় থাকা এবং মাছের পুষ্টিসমৃদ্ধ ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা করা গেলে, খামার থেকে উৎপাদিত তেলাপিয়াসহ বিভিন্ন মাছে ক্ষতিকর কোন উপাদান থাকে না। এছাড়াও ময়মনসিংহ অঞ্চলের বেশ কিছু খামার থেকে তেলাপিয়া মাছ সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর কোন উপাদান পাওয়া যায় নি।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, তবে খামারিরা ট্যানারি বর্জ্য, পোল্ট্রি লিটার প্রভৃতি ক্ষতিকারক বর্জ্য পদার্থ তেলাপিয়া মাছকে খাবার হিসেবে দিলে তখন সেসব খামার থেকে উৎপাদিত তেলাপিয়া মাছের কিছু ক্ষতিকারক উপাদান জমা হতে পারে। আর ওই মাছ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করলে মানুষের শরীরের বিরুপ প্রভাব দেখা দিতে পারে। তাই তেলাপিয়া মাছের মত একটি সুস্বাদু, পুষ্টিসমৃদ্ধ ও সহজলভ্য তেলাপিয়া মাছ সম্বন্ধে কোন ধরনের বিভ্রান্ত এবং ভীত না হওয়ার জন্য ভোক্তাদের আহ্বান জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষনা ইনষ্টিটিউট এর তেলাপিয়া বিজ্ঞানিদের মতে, ‘তেলাপিয়া’ একটি সুস্বাদু কম চর্বিযুক্ত ও কম ক্যালরি সমৃদ্ধ মাছ। যারা সাধারণত মাছ পছন্দ করেনা তারাও এই মাছটি খেতে পারেন, কারণ অন্যান্য মাছের মতো আঁশটে গন্ধ এই মাছে থাকেনা। তেলাপিয়া মাছ উচ্চমাত্রার প্রোটিন সমৃদ্ধ এবং শরীরের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় সকল ধরনের এমাইনো এসিড এতে আছে। এছাড়াও এতে আছে ভিটামিন বি৬, ভিটামিন বি১২,সেলেনিয়াম,পটাসিয়াম,ফসফরাস,নিয়াসিন,পেন্টোথেনিক এসিড ও ওমেগা৩ ফ্যাটি এসিড।তেলাপিয়া মাছ সহজলভ্য এবং দামেও সাশ্রয়ী।
এবার তাহলে জেনে নেই তেলাপিয়া মাছের স্বাস্থ্য উপকারিতা গুলো:

১। শরীরের বৃদ্ধি ও বিকাশে
মানব শরীরের বৃদ্ধির জন্য প্রাণীজ প্রোটিন অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ, কোষ, কলা, ঝিল্লি ও পেশীর সঠিক বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত প্রোটিন ও এমাইনো এসিড প্রয়োজন।তেলাপিয়া মাছে উচ্চ মাত্রার প্রোটিন ও প্রায় সকল ধরনের এমাইনো এসিড আছে। এক টুকরো তেলাপিয়া মাছে ২৬ গ্রাম প্রোটিন থাকে।

২। ওজন কমাতে
তেলাপিয়া মাছে উচ্চমাত্রার প্রোটিন থাকলেও চর্বি ও ক্যালোরি কম থাকে। যারা ওজন কমাতে ডায়েট করছেন তাই ক্যালোরি গ্রহন কমাতে চান তাদের জন্য তেলাপিয়া আদর্শ খাবার হতে পারে।

৩। হাড়ের গঠনে
তেলাপিয়া মাছে ফসফরাস নামের খনিজ উপাদান আছে। এটি হাড়, নখ ও দাঁতের গঠনের জন্য অপরিহার্য । ফসফরাস এই অঙ্গ গুলোকে মজবুত ও টেকসই করে। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে হাড়ের ঘনত্ব কমতে থাকে ফলে অস্টিওপোরোসিস হতে পারে। ফসফরাস অস্টিওপোরোসিস এর বৃদ্ধিকে ব্যাহত করে।

৪। প্রোস্টেট ক্যান্সার নিবারণে
অন্যান্য মাছের মতো তেলাপিয়াতেও প্রচুর সেলেনিয়াম নামক খনিজ উপাদানটি আছে যা প্রোস্টেট ক্যান্সার এর ঝুঁকি কমায়। সেলেনিয়াম এ এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করতে পারে।

৫। হৃদপিণ্ডের সুস্থতায়
তেলাপিয়া মাছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড থাকে যা মানুষের কারডিওভাস্কুলার সিস্টেম থেকে কোলেস্টেরল ও ট্রাই গ্লিসারাইড লেভেল কে কম করে। ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও বিভিন্ন ক্রনিক অসুখ সৃষ্টিতে বাধা প্রদান করে। তেলাপিয়ার পটাশিয়াম রক্তচাপ কমিয়ে হৃদপিণ্ড কে সুস্থ রাখে।

৬। অকালবার্ধক্য রোধে
তেলাপিয়া মাছের সেলেনিয়াম ভিটামিন সি ও ভিটামিন ই কে উদ্দীপিত করে যা ত্বকের গুণগত মান উন্নত করে ও বলিরেখা দূর করে।

৭। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায়

তেলাপিয়া মাছের সেলেনিয়াম শ্বেত রক্ত কণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি করে জীবাণুর ও টক্সিনের কার্যকারিতা নষ্ট করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে । সেলেনিয়াম থাইরয়েড এর কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

 

 

2 thoughts on “তেলাপিয়া মাছ নিয়ে আর বিভ্রান্তির সুযোগ নাই- বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট

  1. মিনার February 9, 2020 at 11:13 pm

    অসাধারণ টিপস , আপনার টিপসটি অনেক ভালো লেগেছে । সত্যি আমি টিপসটা জানতে পেরে অনেক খুশি হয়েছি । আশা করছি সামনে আরো মজার কিছু শিখবো । ধন্যবাদ পোষ্ট শেয়ার করার জন্য ।

    Reply
  2. Advisory Editor February 24, 2020 at 8:02 pm

    Thank you very much

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *