এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, দক্ষিণাঞ্চল থেকে ফিরে :
আমন ধানের চাষে লক্ষ্যমাত্রা :দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাগেরহাট স হ ১০ জেলার উপজেলায় এবার রোপা আমন ধানের আবাদ ভাল হওয়ায় ফলনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সময় মতো বর্ষণ কৃষকের মাঝে এনে দিয়েছে স্বঃস্তি।
চলতি মৌসুমে আমন আবাদের শুরুতে জমি তৈরি এবং ধানের চারা রোপন করতে হয়েছে জমিতে সেচ দিয়ে। সে সময়ে কৃষকদের মাঝে হতাশা বিরাজ করলেও, তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। সেচ দিয়ে আবাদ করার চিন্তায় চিন্তিত ছিল কৃষক।
এদিকে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় আমন আবাদের চেহারা পাল্টে গেছে। ধানের ক্ষেতে এখন সবুজের সমারোহ। অনেক জমির ধানে থোড় দেখা গিয়েছে। মাঝে মাঝে টানা বর্ষনে এখন প্রতিটি জমিতে বৃষ্টির পানি জমে আছে। তাই ধানের শীষ বেড় হওয়ার সময় জমিতে যে পরিমান পানি থাকা দরকার তার চেয়ে বেশি পানি রয়েছে। এতে ধানের ফলন আশাতীত হবে বলে কৃষকদের মাঝে দেখা দিয়েছে আনন্দ।
আমাদের বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবিরের পাঠানো তথ্যর ভিতিতে জানা যায় সরেজমিনে বাগেরহাটে কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, মাঠের পর মাঠ আমন ধানের সবুজ বর্ণে ছেয়ে আছে। গ্রামের কৃষক তৌহিদুল ইসলামের সাথে জমির আইলে দাঁড়িয়ে কথা হলে তিনি জানান, আমন আবাদের চেহারা দেখে এবার মন ভরে যায়। আবহাওয়া ঠিকঠাক থাকলে শুধু ফলন ঘরে তোলার অপেক্ষা।
গ্রামের কৃষক মো. কাদের শেখ, জানান, সময় মতো যদি সরকারী ভাবে আমন ধান সংগ্রহ অর্থাৎ সরকারী খাদ্য গুদামে ধান কেনা শুরু করা হয় তাহলে কৃষকদের ধানের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত হবে।
কৃষকরা জানান, প্রতিবছর দেখা যায় ধান কাটা-মাড়াই করার অনেক পড়ে সরকারী ভাবে ধান ক্রয় শুরু করা হয়। সে সময় কৃষকের আবাদের ধান ব্যবসায়ীদের গুদামে চলে যায়। এতে কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত ধানের ন্যায্য মুল্য থেকে বঞ্চিত হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দশ জেলায় ৬ লাখ ৮২ হাজার ৯৩৭ হেক্টর জমিতে ১৭ লাখ ৭১ হাজার ৫২৮ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
জেলাওয়ারী রোপা ধান চাষ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে-যশোর জেলায় ১ লাখ ৩০ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে ৩,৫২,৫৩৭ মেট্রিক টন, নড়াইল জেলায় ৩০ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে ৭৫ হাজার ৬৩৩ মেট্রিক টন, ঝিনাইদহ জেলায় ৮৭ হাজার ৯২ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৮৭৩ মেট্রিক টন, মাগুরা জেলায় ৫০ হাজার ২২৬ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৩৫ হাজার ১৬৪ মেট্রিক টন, কুষ্টিয়া জেলায় ৭৫ হাজার ৪৩ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৩২ হাজার ৯০ মেট্রিক টন, মেহেরপুর জেলায় ২৩ হাজার ৮০৪ হেক্টর জমিতে ৬৪ হাজার ১৬১ মেট্রিক টন, চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৪২ হাজার ৩৯১ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ১৪ হাজার ৯৭৮ মেট্রিক টন, সাতীরা জেলায় ৯৮ হাজার ৯৯৩ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৬৬ হাজার ৭৩৯ মেট্রিক টন, খুলনা জেলায় ৭৫ হাজার ৩৫৪ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৮৫ মেট্রিক টন এবং বাগেরহাট জেলায় ৬৯ হাজার ৬৮ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৬৮ মেট্রিক টন।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মাঠ পর্যায়ে কর্মরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে আবাদ কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছেন। কৃষি ব্যাংকসহ সকল বাণিজ্যিক ব্যাংক আবাদ কার্যক্রম সফল করতে কৃষকদের জন্য প্রয়োজনীয় লোনের ব্যবস্থা করে রেখেছে।
কৃষকরা এ প্রতিনিধিকে জানান, রোপা আমন বৃষ্টি নির্ভর ফসল বলে সেচ লাগেনা। তাই আমন আবাদ করে তারা লাভবান হবেন।
চরাঞ্চলে সদ্য পলি মাটি পড়া জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে ব্যাপক ভাবো। ধানের আবাদে কোন প্রকার রোগ বালাই নেই। বাগেরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আফতাব উদ্দিন জানান, আবাদ কালীন সময়ে কৃষকদের সর্বপ্রকার পরামর্শ দেওয়ার জন্য তিনি সহকারী কৃষি অফিসার (বিএস) দের নির্দেশ দিয়েছেন।
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ গ্রামের প্রান্তিক চাষি মো. আব্দুল খালেক শেখ জানান, তিনি ২বিঘা জমিতে রোপা আমনের চাষ করেছেন। এবারে ভাল ফলন পাওয়া যাবে বলে তিনি আশাবাদী।
বাগেরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আফতাব উদ্দিন জানান,
কৃষি কর্মকর্তাদের নিয়মিত তদারকি এবং কৃষকদের আগ্রহে প্রতি বছর এ অঞ্চলে ইরি-বোরো ধান ও পাট কাটার পর রোপা ও বোনা আমন ধান আবাদ করে থাকেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। এ অঞ্চলে উৎপাদিত ধান এলাকার খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য জেলায় রফতানী করা হয় বলে তিনি জানান।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে আরও জানা যায়, সারা বাংলাদেশে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের ৪০.১৫ হেক্টর জমিতে এবং স্থানীয় জাতের ১২.০৪ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে মোট ১২৮.৩৬ মেট্রিক টন।