মো:রাসেল ইসলাম,দিনাজপুর প্রতিনিধি :
দিনাজপুরে গত ক‘বছর থেকে আমন আবাদ করে লোকসান গুনলেও এবার বাম্পার ফলনের পাশাপাশি ধানের ভালো দাম পাওয়ায় দিনাজপুরের কৃষকরা খুশি। কৃষকরা জানান, গত কয়েক বছর ধরে আমন ও বোরো ধান আবাদ করে ন্যায্যমুল্য পায়নি তারা। ধান কাটার ভরা মৌসুমে সঠিক দাম না থাকলেও জরুরী প্রয়োজন মেটাতে বাধ্য হয়েই তাদের ধান বিক্রি করতে হয়। আর এ ধান চলে যায় মধ্যস্বত্বভোগী ও মিল মালিকদের কাছে।
মধ্যস্বত্ব ভোগী ও মিল মালিকদের হাতে ধান চলে যাওয়ার পর বাজারে বৃদ্ধি পায় ধানের দাম। এতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কৃষকের ফলানো ধানের লাভ ভোগ করে মধ্যস্বত্বভোগী ও মিল মালিকরা। বেশ ক’বছর ধরেই এই পরিস্থিতি বিরাজ করায় ধান চাষে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে ধানের জেলা দিনাজপুরের কৃষকরা। কিন্তু চলতি আমন মৌসুমে শুরু থেকেই বাজারে আমন ধানের দাম বেশ ভালো।জেলার ধানের হাটে গিয়ে গিয়ে দেখা যায়, ৭৫ কেজি ওজনের মোটা গুটি স্বর্ণ ধান বিক্রি হচ্ছে ১৪৫০ টাকা থেকে ১৫’শ টাকা দরে, চিনিগুড়া ২৭৫০টাকা, কাটারী ২৭৫০টাকা, সম্পা কাটারী ১৭৫০ থেকে ১৮’শ টাকা এবং বিনা-৭ ধান বিক্রি হচ্ছে ১৬’শ টাকা বস্তা (৭৫ কেজি) দরে। অন্যান্য বারের তুলনায় এবার ধানের ফলনও হয়েছে ভালো।
কৃষকরা জানান, অনুকুল আবহাওয়া আর সার- কীটনাশকসহ ধান আবাদের অন্যান্য উপকরনের সরবরাহ ঠিকমত পাওয়ায় এবার তারা আমনের ভালোফলন পেয়েছে। ভালো ফলনের পাশাপাশি বাজারে ধানের এই ভালো দাম পেয়ে খুশী দিনাজপুর জেলার কৃষকরা। বোচাগঞ্জ উপজেলার বনহরা গ্রামের কৃষক মো:আব্দুর রহমান জানান, তিনি প্রতি বিঘা (৫০ শতাংশ) জমিতে গুটি স্বর্ণ ধান আবাদ করে ফলন পেয়েছেন ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা। আর এক বিঘা জমিতে ফলন পেয়েছেন ১৭ বস্তা ধান। উৎপাদন খবচ বাদ দিয়ে গুটি স্বর্ণ ধান আবাদ করে উৎপাদন খবচ বাদ দিয়ে তার লাভ হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার টাকা।
একই কথা এদিকে বিরল উপজেলার মৌচুষা গ্রামের কৃষক মো:শামসুুুউদ্দিন জানালেন, গত কয়েক বছর ধরে ধানের দাম না পাওয়ায় ধান আবাদে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছিলাম। কৃষি কাজ ছাড়া উপায় নেই ভেবে লোকসান গোনার পরও বাধ্য হয়ে ধান আবাদ করতে হচ্ছিল। পাশাপাশি অন্যান্য ফসল আবাদ করার চিন্তা করছিলো তারা। কিন্তু এবার যে ধানের মুল্য তারা পেয়েছে, এটা অব্যাহত থাকলে তারা বরাবরের মতো ধানই আবাদ করবেন। দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপপরিচালক গোলাম মোস্তাফা জানান, দিনাজপুর জেলার ১৩টি উপজেলায় এবার ১ লাখ ৫৪ হাজার ৬০৭ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়। এবার হাইব্রিড অর্জিত হিয়েছে ২৭ হাজার ৮ শত ৮৩ মেট্রিক টন, উফশী ৭ লক্ষ ৪৪ হাজার ৮৮ মেট্রিকটন, স্থানীয় ধান ১২ হাজার ৩শত ৪৮ মেট্রিকটন। মোট ৭৪৪৭১৯ মেট্রিক টন আমন ধান উৎপাদন হয়।