পোষা প্রাণীর চিকিৎসার চাহিদা :আধুনিকায়নের সাথে সাথে দিন দিন বাড়ছে বেসরকারি পর্যায়ে পোষা প্রাণীর চিকিৎসার চাহিদা।আধুনিকতার সাথে চলতে গিয়ে একান্নবর্তী পরিবারগুলো ভেঙে তৈরি হচ্ছে ছোট পরিবার। আর কাজের চাপে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছে মানুষ। এই নিঃসঙ্গতা কাটাতে বাড়ছে পোষাপ্রাণি পালন। এই তালিকায় কুকুর-বিড়ালের সাথে যোগ হচ্ছে খরগোশ, গিনিপিগ, হ্যামস্টারসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাণী। বাদ যাচ্ছেনা পাখিও। কবুতর, ময়না, টিয়ার সাথে যোগ হয়েছে ঘুঘু, বাজেরিগার, লাভ বার্ড প্রভৃতি। ক্রমবর্ধমান এসব পোষাপ্রাণির চিকিৎসা দিতে চাহিদা বাড়ছে ভেটেরিনারিয়ান তথা প্রাণিচিকিৎসকদের। সরকারি চিকিৎসক কম থাকায় দিন দিন বাড়ছে বেসরকারি ক্লিনিক ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে চিকিৎসা।
‘বেসরকারি ক্ষেত্রে পোষা প্রাণীর চিকিৎসা: সমস্যা ও সম্ভাবনা‘ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন এন্ড পাবলিক হেলথ বিভাগের চেয়ারম্যান, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসপন্ন পোষা প্রাণিচিকিৎসক ড. কে বি এম সাইফুল ইসলাম গত ২০ সেপ্টেম্বর বিকেলে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিভাসু) অনুষ্ঠিত চতুর্থ জাতীয় ডিভিএম ইন্টার্ন গবেষণা সম্মেলনে এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, পোষাপ্রাণির চিকিৎসা ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা এখনো অপ্রতুল। পোষাপ্রাণির চিকিৎসার জন্য সরকারিভাবে রোগ নির্ণয় করার সুযোগ থাকলেও সেখানে দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। অন্যদিকে বেসরকারিভাবে তা নেই বললেই চলে। তাই রোগ নির্ণয় করা অনেক ক্ষেত্রে কঠিন হয়ে পড়ে। তাই দক্ষ জনবল বৃদ্ধির পাশাপাশি রোগ নির্ণয়ে গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা ও প্রশিক্ষণশসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও বাড়ানোর প্রতি সংশ্লিষ্ট জোর দিতে হবে। তাহলে প্রাইভেট প্র্যাকটিশনার কিংবা চিকিৎসকেরা যথাযথভাবে চিকিৎসা দিতে সক্ষম হবেন।ড. সাইফুল আরো বলেন, ‘পোষা প্রাণী পরিবারের সদস্যদের মতোই। পরিবারের কারও অসুখ হলে আমরা যেমন দুশ্চিন্তায় পড়ি। তেমনি পোষা বিড়াল, কুকুর কিংবা অন্য কোনো প্রাণীর চিকিৎসা আমাদের ভাবিয়ে তোলে। কারণ পোষা প্রাণীর সঙ্গে আমরা সবকিছু এখন শেয়ার করি।’
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিভাসু) দুই দিনব্যাপী “৪র্থ জাতীয় ডিভিএম ইন্টার্ন গবেষণা সম্মেলন” এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান গত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ইং বুধবার সকালে অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. গৌতম বুদ্ধ দাশের সভাপতিত্বে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রইছুল আলম মণ্ডল। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডা. মো. ইসমাইল খান, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. হিরেশ রঞ্জন ভৌমিক, সিভাসুর প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য নীতীশ চন্দ্র দেবনাথ, ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. আবদুল হালিম, যুক্তরাষ্ট্রের টাফ্টস ইউনিভার্সিটির শিক্ষক গ্রেগোরি এম. উলফাস। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সিভাসুর বহিরাঙ্গন কার্যক্রম পরিচালক অধ্যাপক এ কে এম সাইফুদ্দীন।
সম্মেলনে সিভাসুর শিক্ষক, ইন্টার্ন ছাত্রছাত্রী, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টার্ন ও শিক্ষক প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেছেন। এতে বিভিন্ন পর্যায়ের গবেষকেরা প্রায় ৪০টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সম্মেলনে বিষয়সংশ্লিষ্ট ২৫টিরও অধিক পোস্টার প্রদর্শিত হয়। ২০১৬ সাল থেকে প্রতিবছর ওআইই এর অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের টাফটস কামিং ভেটেরিনারি স্কুলের সহযোগিতায় সিভাসু এ সম্মেলন আয়োজন করে আসছে।