খামারীদের সুদিনের গল্প
এম এম হাসিব হাসান
খামারীদের সুদিনের গল্প ঃ গত ৬ মাস আগে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার একজন খামারির সাথে হঠাৎ দেখা হয়।গল্প ছলে উঠে আসে নানা কথা। সেই গল্পে উঠে আসে একজন খামারির দুঃখ দূর্দশার নানা চিত্র।তার মধ্য সব থেকে বড় কষ্ট যে মিডিল ম্যানদের দৈরত্বে খামারীরা দুধের ন্যায্য মূল্য না পাওয়া। লোহাগড়া উপজেলা একটা পৌরসভাও এখানে দুধের প্রচুর চাহিদা সত্ত্বেও মিষ্টি ব্যবসায়িদের কারনে খামারীরা ৩০-৩২ টাকায় দুধ বিক্রি করতে বাধ্য হয়। কিন্তু খামারীরা এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি চাই।এমন সময় আমি উনাদের প্রস্থাব প্রদান করি খামারিদের একত্রিত হওয়ার এবং সকল খামারি মিলে কিছু একটা করার।আর সেটা খামারিরা লুফে নেয়। বাংলাদেশ ডেইরী ফার্মারস এসোসিয়েশন এর দিক নির্দেশনা মোতাবেক আমি খামারিদের সাথে বার বার আলোচনায় বসি কি করলে খামারির মুক্তি মিলবে।খামারিদের নিকট থেকে বিভিন্ন প্রস্তাব উঠে আসে। তার পরিপেক্ষিতে আমি সহ লোহাগড়া এর সিনিয়র খামারিরা মিলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে তারা সকলে সমবায় সমিতি করবে। আর এই সমিতির মাধ্যমে অন্তত বিকালের দুধ তারা বাজারে নয় অন্য কোথাও বিক্রি করবে। যেই কথা সেই কাজ। অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে খামারিরা একটা সমিতি করে। সমিতির সদস্যরা মিলে চাদার মাধ্যমে অফিস রেডি করে নানা রকম প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও কিনে নেয়।খামারিদের এক্যবদ্ধ হওয়া দেখে যশোরের জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন এর সফল প্রোজেক্ট থেকে দুধের ক্যান, ফ্যাট মাপা মেশিন সহ অনুষঙ্গিক জিনিষ পত্র দিয়ে সাহায্য করে।এতে করে খামারিরা আরো বেশি উৎসাহ পায়।
অপর দিকে আমি নিজে মিল্ক ভিটার চেয়ারম্যান মহোদয় শেখ নাদির হোসেন লিপু সাহেবের এর সাথে নিজ উদ্যোগে দেখা করে খামারিদের দূর্দশার কথা বলি। উনি সব শুনে শুধু বললো তুমি আমার মিল্ক ভিটার চিলিং সেন্টারে দুধ আনার ব্যাবস্থা করো তার জন্য যত সাহায্য লাগে সব করা হবে। তার পরিপেক্ষিতে গত কাল বিকালে খামারিরা তাদের সমিতির অফিসে নিজ উদ্যোগে প্রায় ৩০০ লিটার দুধ কালেকশন করে লোহাগড়া থেকে ১৬ কিমি দূরে আমার এলাকার কাশিয়ানীর চিলিং সেন্টারে দেওয়ার ব্যাবস্থা করি।
এতে করে দেখা গেলো খামারিরা যে দামে এলাকায় দুধ বিক্রি করতো তার থেকে প্রায় ১৪-১৫ টাকা লিটার প্রতি বেশি দামে বিক্রি করতে সক্ষম হয়।বিভিন্ন রকম সু্যোগ প্রদান করায় খামারিদের চোখে মুখে আশার আলো ফুটে উঠে।বিক্রির নিশ্চয়তা পাওয়ার অনেক খামারি তাদের খামারের গরু বাড়ানোর স্বপ্ন দেখছে। সব থেকে আশার কথা যে সকল মধ্যস্ত্বভোগীরা খামারীদের অবজ্ঞার চোখে দেখতো, নানা রকম ভাবে খামারিদের দুধের উপর আইন জারি করতো তারাই যখন জানতে পারছে খামারিরা এক হয়ে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে ঠিক তখনি তারা নমনীয় হতে শুরু করেছে।বাজারে দুধের দামে পরিবর্তন আনা শুরু করেছে।
এই পরিস্থিতি দেখার পর দেশের খামারীদের নিকট আমার একটাই অনুরোধ আপ্নারা সংগঠিত হবেন।নিজেদের দাবী আদায়ে দেশের আনাচে কানাচে খামারীদের সংগঠন গড়ে তুলুন।আর তার জন্য যা করা প্রয়োজন সব করবে বাংলাদেশ ডেইরী ফার্মারস এসোসিয়েশন (BDFA)আর এই সংগঠনের কিছু নিবেদিত প্রান। বাংলাদেশ ডেইরী ফার্মারস এসোসিয়েশন দেশের খামারীদের স্বার্থে যে কোন সময় যে কোন কিছু করতে সর্বদা সদা প্রস্তুত।
লেখকঃ সেক্রেটারি,বাংলাদেশ ডেইরী ফার্মারস এসোসিয়েশন,কাশিয়ানী শাখা।