Site icon

ধানে লোকসান বাঁচাতে বিকল্প ফসল আবাদে ঝুঁকছে মাগুরার কৃষকরা

কৃষি সংবাMagura Farmerদ ডেস্কঃগত দুই বছর আগেও যেসব জমিতে বোরো ধানের শীষ বাতাসে দোল খেত এখন সেখানে শোভা পাচ্ছে ফুল-ফলসহ ডাল জাতীয় নানা ফসল। গত কয়েক বছর ধরে ধান চাষে লোকসান হওয়ায় লাভজনক বিকল্প ফসল আবাদে ঝুঁকছে মাগুরার কৃষক। এতে ধানের আবাদ আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে। এসব ফসল আবাদ করে কৃষক লাভবান হলেও দীর্ঘ মেয়াদে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলার চার উপজেলায় ৩৭ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত আবাদ হয়েছে মাত্র ১৫ হাজার ১০০ হেক্টরে।

বোরোর বদলে এবার লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় সরিষা দেড় হাজার হেক্টর, পেঁয়াজ চার হাজার হেক্টর, মসুর চাষ হয়েছে অতিরিক্ত প্রায় ১২ হাজার হেক্টরে।

কৃষি বিভাগের ধারণা, মার্চ পর্যন্ত বোরো চাষ সর্বোচ্চ ২৫ হাজারে উন্নীত হতে পারে। ফলে ৪০ শতাংশ জমিতে বোরো আবাদ হবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছে কৃষি বিভাগ।

কৃষকদের কাছে জানা গেছে, গত কয়েক মৌসুমে তারা ধানের ন্যায্যমূল্য পাননি। প্রতিমণ ধান উৎপাদনে তাদের খরচ হয়েছে ৫০০ টাকা। সেখানে মণ প্রতি বিক্রয় মূল্য এসেছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা। এ কারণে তারা বিকল্প ফসল চাষে ঝুঁকছেন। অথচ মশলা তেলবীজ ও ডালজাতীয় সব ফসলে আশাতীত দাম পেয়েছেন কৃষক।

সদরের বেলনগরের কৃষক আক্কাচ আলী বলেন, ‘গত বছর আমি ছয় বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। বিঘাপ্রতি খরচ ছিল ১২ হাজার, কিন্তু ধান বিক্রি হয় ১০ হাজার টাকায়। এ কারণে এ বছর ধান চাষ বাদ দিয়ে ফুল, পেঁয়াজ, মসুর, সরিষা চাষ করছি।’

এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষে ১০ হাজার টাকা খরচ করে প্রায় ৪০ হাজার টাকার ফসল তোলা সম্ভব বলে জানান তিনি।

সদরের শ্রীরামপুরের কৃষক আসগর আলী বলেন, দুই বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করে ২০ হাজার টাকা উঠানোই কষ্ট। সেখানে আপেল কুল আবাদ করে বিঘাপ্রতি ৫০ হাজার টাকার বেশি আয় করেছেন তিনি। সামনের বছরে তিনি কুলের আবাদ আরও সম্প্রসারণ কবেন বলে জানান।

কৃষক আসগরের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন সদর উপজেলার আরও ১০ কৃষক। তাদের সবাই ধান চাষ ছেড়ে আম, কুল, পেয়ারা, পেঁপে, ফুল, সবজি, সরিষা ও পেঁয়াজ চাষ করেছেন বলেও জানিয়েছেন।

সদর উপজেলার আবালপুর এলাকার ফুল চাষি মোবাশ্বের আলী জানান, তিনি চার বিঘা জমিতে চাইনিজ গাঁদা ফুলের চাষ করেছেন। বোরো ধানের চেয়ে তিনগুন লাভ পেয়েছেন। সরেজমিন দেখা গেছে, জেলার অধিকাংশ কৃষি জমিতে এখন নানা জাতের ফল, ফুল ও সবজির বাগান গড়ে উঠছে। আম, লিচু, পেয়ারা, কুলসহ নানা জাতের সবজি ও রবি শস্য আবাদের দিকে ঝুঁকছেন কৃষক।

মহম্মদপুর উপজেলা সদরের চালকল ব্যবসায়ী রবীন্দ্রনাথ সাহা, ধান ব্যবসায়ী লিয়াকত শেখ ও সদরের পুরাতন বাজারের চাল আড়ৎদার বলাই কুরি জানান, ভারত থেকে এলসির মাধ্যমে চাল আসায় দেশের কৃষকরা ধানের দাম পাচ্ছেন না। এ অবস্থা চলতে থাকলে কৃষকরা পুরোপুরি ধান চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে।
কৃষি বিভাগের সূত্র বলছে, প্রধান ফসল ধানের আবাদ কমে যাওয়া কৃষির জন্য অশনি সংকেত। অন্য ফসলে কৃষক কম সময়ে লাভ পাওয়ায় ধানের আবাদ ছেড়ে দিচ্ছে। বিষয়টি কৃষির জন্য দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতির কারণ হতে পারে।

মাগুরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুব্রত চক্রবর্তী ধানের নায্যমূল্য না পাওয়ার বিষয় স্বীকার করে বলেন, শস্য বহুমুখীকরণের জন্য কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, যার ফলে ফুল, গম, পেঁয়াজ প্রভৃতির মতো বিকল্প ফসলের চাষ বাড়ছে। বিকল্প ফসল চাষ বাড়লেও দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় কোনো সমস্যা হবে না বলে জানান তিনি। রাইজিং বিডি।।

কৃষির আরো খবর জানতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিনঃকৃষিসংবাদ.কম

 

 

Exit mobile version