নকলায় ছুটির দিনেও
মো. মোশারফ হোসাইন, শেরপুর প্রতিনিধি:
নকলায় ছুটির দিনেও ঃ সরকার চলতি বছরের বোরো মৌসুমের সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে প্রতিমণ বোরো ধান এক হাজার ৪০ টাকা করে কিনার ঘোষণা দিয়েছেন। এর ধাবাহিকতায় শেরপুরের নকলা উপজেলার কৃষকদের কাছ থেকে অন্তত এক হাজার ৮৩১ মেট্রিকটন বোরে ধান কিনবে সরকার। এর জন্য উপসহকারী কৃষি অফিসার (এসএএও)’রা শুক্র বার ও শনিবারসহ সকল ছুটির দিনে নিজ নিজ ব্লকের কৃষকের বাড়ি বাড়ি ঘুরে কৃষক বাছাইয়ের কাজ করছেন। সরকারের কাছে বোরো ধান বিক্রি করতে আগ্রহী কৃষকের তালিকা প্রেরনের সময় স্বল্পতার জন্য নভেল করোনা ভাইরাস (কভিট-১৯) এর ঝুঁকি মাথায় নিয়ে সকল ছুটিকে ওপেক্ষা করে কৃষকদের ধারে ধারে ঘুরে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন মাঠ পর্যায়ে কৃষকের কাছে কৃষি অফিসার খ্যাত উপসহকারী কৃষি অফিসারগন। করোনা ভাইরাসের কারনে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ঘুরে দাঁড়াতে শেরপুরের সকল স্তরের কৃষি কর্মকর্তারা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
সরকারি ছুটির দিন ১ মে শুক্রবার টালকী ইউনিয়নের টালকী ব্লকে ও ২ মে শনিবার বানেশ্বরদী ইউনিয়নের ভূরদী ব্লকে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপসহকারী কৃষি অফিসার সারোয়ার জাহান শাওন ও উপসহকারী কৃষি অফিসার আসাদুল হক বাবু সরকারের কাছে বোরো ধান বিক্রি করতে আগ্রহী কৃষকের বাড়িতে গিয়ে তাদের তথ্য সংগ্রহ করছেন। এই কাজটি তাদের দপ্তরের না হলেও তাঁরা সরকারের এমন উন্নয়ন মূলক কাজে মতো অনেক কাজে বরাবরের ন্যায় এবারও সহায়তা করে আসছেন। তাছাড়া এলাকা ঘুরে কৃষকদের আবাদি জমিসহ বাড়ির আঙ্গিনার আবাদ যোগ্য অনাবাদী জমিতে ফসল ফলানোর জন্য উৎসাহ প্রদান এবং চলতি বোরো মৌসুমের ধান কাটা, মাড়াই, সংরক্ষণ ও বোরো ধানের ব্যবস্থাপনা বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। খরিপ-১ মৌসুমে আউশ ফসলের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী কৌশলগত পদপে সমূহ বাস্তবায়ন করতে তাঁরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে, নভেল করোনা ভাইরাস সংক্রমণ, প্রতিরোধ ও প্রাদুর্ভাব জনিত কারণে সরকার ঘোষিত দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি কালীন সময়ে বিরাজমান দেশের অনেক এলাকা অবরুদ্ধ অবস্থায় আছে, এমতাবস্থায় যাতে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত না হয় তথা বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে ফসল উৎপাদনের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করতে কৃষকদের কাছে উপস্থিত হচ্ছেন সর্বস্তরের কৃষি কর্মকর্তারা। সরকার ঘোষিত আউশের প্রণোদনা প্রাপ্য কৃষকদের মাঝে বিতরণসহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজ করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষি অফিসার খ্যাত সকল উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা। মাঠ পর্যায়ে আউশ ধানের বীজতলা তৈরী ও বীজ বপণ এবং চাষের প্রয়োজনীয় পরামর্শসহ খরিপ-১ মৌসুমে শাক সবজি চাষে কৃষকদের পরামর্শ দিতে ব্যস্ত সময় কাটাতে দেখা যাচ্ছে।কৃষকদের মাঝে তাদের নিরলস সেবা দেওয়া দেখে বুঝার কোন উপায় নেই যে, দেশে নভেল করোনা ভাইরাস (কভিট-১৯) এর প্রাদুর্ভাব হয়েছে।
সচেতনতা সৃষ্টিতে কৃষি কর্মকর্তারা প্রচারণা চালাচ্ছেন অতি ব্যবহৃত ও পরিচিত সামাজিক গনমাধ্যম ফেসবুকেও। তাছাড়া কৃষকদের হাতে ভালোমানের সার বীজ তোলে দিতে রুটিন ওয়ার্কের অংশ হিসেবে নিয়মিত উপজেলার বিভিন্ন সার বীজ ও কীটনাশক দোকান পরিদর্শন করছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস ও অন্যান্য কৃষি কর্মকর্তাগন। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সারোয়ার জাহান শাওন জানান, সাধারনত কৃষকরা বোরো আবাদে যেসব সমস্যার সম্মূখিন হন, এর সমাধানে করণিয় পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি অতি ব্যবহৃত ও পরিচিত সামাজিক গনমাধ্যম ফেসবুকেও স্ট্যাটাস আকারে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া কৃষকরা ফোনের মাধ্যমেও তাদের কাছে সেবা নিচ্ছেন বলে তিনি জানান। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস জানান, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলায় হাইব্রিড জাতের ধান ৮ হাজার ২৫ হেক্টর, উফসী জাতের ৫ হাজার ৯৫ হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের ৫ হেক্টর জমিসহ মোট ১৩ হাজার ২৪৭ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। আর উৎপাদন লক্ষমাত্রা চালে ধরা হয়েছে হাইব্রিড প্রতি হেক্টরে ৪.৭৫ মেট্রিকটন, উফসী প্রতি হেক্টরে ৩.৯২ মেট্রিকটন ও স্থানীয় জাতের লক্ষমাত্রা চালে ধরা হয়েছে ১.৯৪ মেট্রিকটন। এরই মধ্যে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। নমুনা কর্তন অনুযায়ী লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অর্জন বেশি হবে বলে তিনি আশা করছেন।