কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে
মো. মোশারফ হোসাইন, শেরপুর প্রতিনিধি:
কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে ঃ শেরপুরের নকলায় মোট মূল্যের সরকারি তরফ থেকে অর্ধেক ভর্তুকি মূল্যে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে ধান কাটা পরিদর্শন করেছেন উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা পরিষদ ও কৃষি অফিসারগন। ৩ মে রোববার দুপুরের দিকে উপজেলার গনপদ্দী ইউনিয়নের বিহারীপাড় এলাকার আব্দুল জলিল আকন্দ এর সরকারি তরফ থেকে অর্ধেক ভর্তুকি মূল্যে প্রাপ্ত হারভেস্টারের মাধ্যমে চিথলিয়া এলাকার কৃষক মো. আমির উদ্দিনের বোরো ধান কাটা হয়। এই ধান কাটা নির্বাহী পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জাহিদুর রহমান, উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ মো. বোরহান উদ্দিন, উপজেলা কৃষি অফিসার (ইউএও) কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস প্রমুখ। এসময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্থানীয় গন্যমান্যসহ এলাকার অনেকে উপস্থিত ছিলেন। উপজেলা কৃষি অফিসার (ইউএও) কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জাহিদুর রহমানের নিজস্ব শ্লোগান “প্রধান মন্ত্রীর উপহার, অর্ধেক মূল্যে কম্বাইন হারভেস্টার” এর কার্যকারিতা ও উপকারিতা দেখে কৃষকরা এর প্রতি ঝুঁকছেন।
উপজেলার কৃষকদের চাহিদার ভিত্তিতে নতুন করে ২টি কম্বাইন হারভেস্টার ও ৮টি রিপারের অর্ডার করা হয়েছে। আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে এসকল আধুনিক কৃষিযন্ত্র নকলায় পৌঁছবে বলে তিনি জানান। হারভেস্টারের মালিক আব্দুল জলিল আকন্দ জানান, এ কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে ঘন্টায় এক একর জমির ধান কাটা মাড়াই, ঝাড়াই ও প্যাকেটজাত করা যায়। প্রতি একরে ৭ লিটার থেকে ৮ লিটার ডিজেল জ্বালানি হিসেবে খরচ হয়। হারভেস্টার দিয়ে দিনে ৮ একর থেকে ১০ একর জমির ধান কাটা, মাড়াই, ঝাড়াই ও প্যাকেটজাত করা সম্ভব। এতে ধান কাটা থেকে শুরু করে বস্তা বন্ধী করা পর্যন্ত কৃষকদের খরচ বাঁচে প্রায় ৬০ ভাগ এবং ৭০ ভাগ শ্রম কম লাগে। আর এর ট্যাংকিতে ১৫ মন ধান একসাথে রাখা যায়। কম্বাইন হারভেস্টার ব্যবহারের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে কম শ্রমিক দিয়ে একই সঙ্গে ধান কাটা, মাড়াই, পরিস্কার ও প্যাকেটজাত করা সম্ভব হওয়ায় কৃষকদের কাছে আধুনিক এ যন্ত্রের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। তিনি আরও জানান, কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে প্রতি একর জমির ধান কাটা থেকে শুরু করে প্যাকেটজাত করা পর্যন্ত ৫ হাজার টাকা করে কৃষকের কাছ থেকে নেওয়া হয়। তবে শহীদ পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে একর প্রতি এক হাজার টাকা কমে ৪ হাজার টাকা করে নেন বলে আব্দুল জলিল আকন্দ জানান। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গনপদ্দী ইউনিয়নের বিহারীপাড় এলাকার কৃষক আব্দুল জলিল আকন্দ ও নকলা পৌরসভার ইশিবপুর এলাকার মামুন আকন্দের মাঝে একটি করে ২টি কম্বাইন হারভেস্টার এবং উরফা ইউনিয়নের পিছলাকুড়ী এলাকার কৃষক মো. জহির উদ্দিন ও তারাকান্দা গ্রামের কৃষক মো. হামিদুল ইসলামের মাঝে সরকারি তরফ থেকে অর্ধেক ভর্তুকি মূল্যে একটি করে ২টি রিপার বিতরণ করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার (ইউএও) কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস জানান, প্রতিটি কম্বাইন হারভেস্টার এর বাজার মূল্য ২৮ লাখ টাকা এবং রিপার এর বাজার মূল্য এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। এসব আধুনিক যন্ত্রে সরকার কৃষকদের অর্ধেক মূল্য ভর্তুকি দিয়েছে। এতে প্রতিটি কম্বাইন হারভেস্টারের বিপরীতে ১৪ লাখ টাকা এবং প্রতিটি রিপারের বিপরীতে ৯০ হাজার টাকা জমা দিয়ে কৃষকরা এসব অত্যাধুনিত কৃষিযন্ত্র নিজের মালিকানা হিসেবে পেয়েছেন। তিনি আরও জানান, জাপানী প্রযুক্তিতে তৈরী করা সেন্সরবিশিষ্ট ইয়ানমার মডেলের কম্বাইন হারভেস্টার ও রিপার গুলো এসিআই মটরস দেশব্যাপী বাজারে নিয়ে এসছে। ধান কাটার মৌসুমে শ্রমিক সংকটের কথা বিবেচনা রেখে এসিআই মটরস এসকল আধুনিক কৃষিযন্ত্র বাজার জাত করেছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশের সকল কৃষকরে হাতে এসব আধুনিক যন্ত্র পৌঁছে যাবে বলে বিভিন্ন স্তরের কৃষি অফিসারসহ কৃষকরা আশা করছেন।