নকলার জলপাই
মো. মোশারফ হোসেন, শেরপুর প্রতিনিধি:
নকলার জলপাই ঃ দেশীয় মৌসুমী বিভিন্ন ফল অন্যান্য ফলের চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি নিরাপদ হওয়ায় এর চাহিদা বরাবরই বেশি থাকে। তাই কৃষকরা মৌসুমী বিভিন্ন জাতের ফল চাষে ঝুঁকছেন। এতে দেশে মৌসুমী ফলের চাষ দিন দিন বাড়ছে। শেরপুরের নকলা উপজেলার মাটি যেকোন মৌসুমী ফল চাষের জন্য উপযোগী। তাই এখানকার কৃষকরা মৌসুমী ফল চাষে ঝুঁকছেন এবং সফল হচ্ছেন। এর ধারাবাহকিতায় নকলায় এবার জলপাইয়ের বাম্পার ফলন হয়েছে। এখানকার জলপাই বেশ বড়, সুন্দর ও সুস্বাদু হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলাসহ রাজধানী ঢাকাতেও এর যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। জলপাই চাষ ও ব্যবসাতে লাভ বেশি হওয়ায় অনেকে এই ফলের চাষ ও ব্যবসা করে লাভবান হচ্ছেন। দিন দিন এই ফলের চাষ ও ব্যবসায়ীর সংখ্যা বাড়ছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে নকলার জলপাই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবার করা হচ্ছে। মৌসুমী ফল জলপাই ব্যবসার সাথে জড়িত হয়েছেন উপজেলার অন্তত অর্ধশত পরিবার। তারা এই মৌসুমী ফলের আয়ে এবং লাভের টাকায় তাদের সংসার ও ছেলে মেয়ের শিক্ষা খরচ চালান।
মৌসুমী ফল ব্যবসায়ী নকলা পৌরসভাধীন বাজারদী এলাকার গোপাল চন্দ্র দাশ, ইশিবপুরের সুহেল মিয়া, তাড়াকান্দির সুলতান মিয়া, কুর্শাবাদাগৈড় এলাকার লিটন মিয়া, জালালপুর এলাকার শ্রী রতন চন্দ্র তিলক দাস, আব্দুল মিয়া, কব্দুল আলী, তারা মিয়া ও মস্তু মিয়া; চরকৈয়া এলাকার বাবুল মিয়া, আব্দুল আলী ও শহিদুল; কায়দা গ্রামের আবুল মিয়া, সাহাপাড়া এলাকার রুপচাঁন, ধনাকুশা এলাকার আসাদুলসহ অনেক মৌসুমী ফল ব্যবসায়ী জানান- তারা দীর্ঘদিন ধরে সারা বছর বিভিন্ন মৌসুমী ফলের ব্যবসা করে আসছেন। এর মধ্যে জলপাই, জাম্বুরা, আমড়া, আম, কাঁঠাল, বেল, জামসহ বিভিন্ন মৌসুমী ফল ব্যবসাতে তারা অধিক লাভবান হচ্ছেন। মৌসুমের শুরুতেই তারা বাড়ী বাড়ী ঘুরে অগ্রীম টাকা দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম দামে গাছ মালিকদের কাছে চুক্তিতে ফলসহ গাছ কিনে রাখেন। এসব ফল পরিপক্ক হলে গাছ থেকে পেড়ে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বিক্রি করেন তারা। তারা জানান, মাসে অন্তত ৮ থেকে ১০বার ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ট্রাকে করে মৌসুমী ফল সরবরাহ করেন। তাদের দেয়া হিসাব মতে, বছরে অন্তত শত’বার বিভিন্ন ফলের চালান পাঠানো সম্ভব হয়। প্রতিচালানে এক হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা করে তাদের লাভ থাকে। এতে করে প্রতি পাইকারের প্রতি বছরে ৫০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত লাভ হয়। এ লাভের টাকাতেই চলে তাদের সংসার ও ছেলে মেয়েদের শিক্ষা খরচ।
মৌসুমী ফল ব্যবসায়ী সুলতান মিয়া জানায়, তাদের মূলধন কম থাকায়, তারা ৩ জনে মিলে যৌথভাবে ব্যবসা করেন। এবছর তারা প্রত্যেকে ১০ হাজার টাকা করে মোট ৩০ হাজার টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছেন। এরমধ্যে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে অন্তত ২৮ টি গাছের জলপাই চুক্তিতে কিনেছেন। এইসব গাছের জলপাই গাছ থেকে পেড়ে ঢাকা সহ বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছাতে আরও ১৫ হাজার টাকা ব্যয় হবে বলে তিনি জানান। তবে মৌসুম শেষে এই ৩০ হাজার টাকার জলপাইয়ের একমাসের ব্যবসাতে তাদের ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা লাভ হবে বলে তিনি আশা করছেন।
বাজারদী এলাকার অন্য এক ব্যবসায়ী গোপাল চন্দ্র দাশ জানান, মৌসুমী ফলের ব্যবসাতে সময় কম ব্যয় হয়। মৌসুমের শুরুতে এলাকা ঘুরে গাছসহ ফল কিনে রাখেন, পরে ফল পরিপক্ক হলে দিন তারিখ ঠিক করে নিজেসহ প্রয়োজনীয় শ্রমিক দিয়ে গাছের ফল পেড়ে বাজারে বিক্রি করেন এবং রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা শহরে পাইকারি বিক্রি করেন। কুর্শাবাদাগৈড় এলাকার ব্যবসায়ী লিটন মিয়া জানায়, মৌসুমী ফলের ব্যবসার আয় দিয়েই তারা জীবন জীবীকা নির্বাহ করেন। তিনি বলেন- আমি একযুগ ধরে এই ব্যবসা করে সংসার ও সন্তানের শিক্ষা খরচ চালিয়ে আসছি।
মৌসুমী ফল ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি চালানে তাদের ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকার ফল যায়, আর তা থেকে অন্তত ৮ হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা তাদের লাভ হয়। তবে পরিবহণ ব্যয়, ফল পাড়ার শ্রমিক ও ফলের মালিকের খরচ বাদে প্রতি চালানে ৩ হাজার থকে ৪ হাজার টাকা তাদের হাতে লাভ থাকে। সরকার যদি সহজ ঋণে তাদের জন্য ব্যাংক লোনের ব্যবস্থা করে, তাহলে তাদের দেখা দেখি অনেকে এ ফলের ব্যবসা করে আত্ম নির্ভরশীল ও স্বাবলম্বী হতে পরবেন। ফলে কিছুটা হলেও বেকারত্ব কমবে বলে মনে করছেন অনেকে।
গাছ মালিক ভূরদী কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যান সংস্থার সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন, সদস্য জব্দুল মিয়া, ইসমাঈল হোসেন, বেলাল মিয়া ও কামাল হোসেন; জালালপুর এলাকার আইজুল হক, কুর্শাবাদাগৈড় এলাকার নূর ইসলামসহ অনেকে জানান, স্থানীয় পাইকাররা মৌসুমের শুরুতে আগাম টাকায় গাছের ফল কিনে নেওয়ায় তাদেরকে ফল বিক্রি নিয়ে ভাবতে হয়না, এমনকি বিক্রি করতে নষ্ট হয়না সময়। ফলে সবদিক বিবেচনায় তারাও বেশ উপকৃত হচ্ছেন বলে তারা জানান।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাশ জানান, নকলার মাটি জলপাইসহ যেকোন মৌসুমী ফল চাষের জন্য উপযোগী। উপজেলায় অগণিত ফলদায়ী জলপাই গাছ আছে। এসব গাছের জলপাই বেশ বড়, সুন্দর ও সুস্বাদু; তাই দেশের বিভিন্ন এলাকায় এখানে উৎপাদিত জলপাইয়ের বেশ চাহিদা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, যে কেউ জলপাই চাষ করে আত্ম কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে স্বাবলম্বী হতে পারেন। ফল চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষকদের নিয়মিত উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। কৃষকদের কৃষি অফিস থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ সেবা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে বলেও কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাশ জানান।
–প্রেরকের মোবাইল নং: ০১৭১২-৩৬৬ ১৭৬