মো. মোশারফ হোসেন, নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি:
বেগুনি রঙের ধানে নতুন আশা : শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার বিস্তীর্ন এলাকার যেদিকে নজর যায় সেদিকেই শুধু বোরো ধান ক্ষেতের সবুজের সমারোহ নজরে পড়ে। সবুজ ধানের মাঠের কোন স্থানের কিছু অংশ অন্য রঙের হলে তা সবার নজরে আসবে এটাই স্বাভাবিক। তেমনি উপজেলার গনপদ্দী ইউনিয়নের বারইকান্দি এলাকার সৌখিন কৃষক মো. শামছুর রহমান আবুলে বেগুনি রঙের ধানের ক্ষেত সবার নজর কাড়ছে।
ছবি দেখে মনে হতে পারে ফটোশেসন করা ধানক্ষেত বা দূর থেকে দেখে মনে হবে ধানের ক্ষেতে বুঝি কোন রোগ বালাই লেগেছে অথবা পোকার আক্রমণে সারাক্ষেতের ধান বেগুনী হয়ে গেছে। আসলে এর কোনটিই নয়। এটি এমন একটি ধানের জাত, যার পাতার রঙটাই বেগুনী। শুধু পাতার রঙ, ধানের ও চালের রঙও বেগুনী বা পার্পল। তাই কৃষকদের কাছে এখন পর্যন্ত এই ধানের পরিচিতি বেগুনী রঙের ধান বা পার্পল রাইস নামেই।
পরিক্ষামূলক এ ধান চাষে আবুলকে নকলা উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে নিয়মিত সার্বিক পরামর্শ প্রদানসহ ধান ক্ষেতটি বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। সড়কের ধারে ওই ধান ক্ষেতটি হওয়ায় এবং রং বেগুনি দেখে পথচারিদের নজর কেড়েছে। বর্তমান সময়ে ক্ষেতটির গোছাগুলি উফশী জাতের ধরনের মত। গাছের পাতার রং বেগুনি হওয়ায় পুরু ক্ষেত বেগুনি আকার ধারন করেছে।
কৃষক ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শামছুর রহমান আবুল জানান, গত বছর পত্রিকায় বেগুনি রঙের ধানের আবাদে সফলতার খবর দেখে ওই ধান চাষ করার তার আগ্রহ জাগে। পরে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস এর সহযোগিতায় চলতি বোরো আবাদের জন্য সুদূর কুমিল্লা জেলার কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার কৃষক মঞ্জুরুলের কাছ থেকে ৫ কেজি বেগুনি রঙের ধানবীজ এনে একবিঘা জমিতে আবাদ করেন। ক্ষেতে ধান গাছের বর্তমান অবস্থা দেখে কৃষক আবুলসহ কৃষি কর্তকর্তারা আশা করছেন অন্যান্য ধানের তুলনায় ফলন ভালো হবে। নজর কাড়া বেগুনি রঙের এই ধানে নকলার কৃষকদের নতুন আশা জাগিয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস জানান, এ বেগুনি রঙের ওই ধান চাষীকে নিয়মিত সার্বিক পরামর্শ প্রদানসহ ধান ক্ষেতটি তদারকি করা হচ্ছে। ধানটির ফলন ভাল হলে এর বিস্তার ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। এখন এর ফলন কি রকম হবে তা জানতে ধান কাটা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে তিনি জানান। তবে কুমিল্লা এলাকার অজ্ঞাত এক কৃষি অফিসারের দেওয়া তথ্য ও পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের বরাত দিয়ে তিনি জানান, বেগুনি রঙের এই ধান বিদেশী জাত নয়, দেশীয় জার্মপ্লাজম।
স্থানীয় ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলমের পরামর্শ মোতাবেক তিনি অত্যন্ত যতœ সহকারে অংকুরোগদম করে তারপর বীজতলায় ফেলেন। পরে ৪০ দিন বয়সের চারা প্রতিগুছিতে একটি করে চারা দিয়ে একবিঘা জমিতে রোপন করেন। প্রতি গোছায় ১৫ তেকে ২০টি কুশি হয়েছে। গাছের উচ্চতা হয়েছে আনুমানিক ৭০ থেক ৭৫ সে.মি.। ধান গাছগুলো গাঢ় বেগুনী রংঙের। কিন্তু কচি পাতাগুলো সবুজ রঙের যা পর্যায়ক্রমে পার্পল (বেগুনি) রং ধারন করে।
গত বছরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী মাঠ পর্যায়ের অবস্থা বিবেচনায় ধানটির জীবনকাল ১৪৫ থেকে ১৫৫ দিন এবং ফলন একরে ৫৫ থেকে ৬০ মণ। যা আনুমানিক শতাংশে ২০ কেজি (৪ থেকে ৫ টন প্রতি হেক্টরে) হতে পারে। কৃষি কর্মকর্তারা ধারনা করছেন, এই ধানের চালের রং শতভাগ বেগুনী হলে ধানটি উচ্চমূল্যের হবে। তবে কৃষক আবুল জানান, বীজ সংগ্রহকালীন সময়ে চালের রংটা বেগুনি রঙের দেখেছেন