মো. মোশারফ হোসেন, নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি :
নকলায় পাট চাষ ঃ শেরপুর জেলার নকলা উপজেলায় চলতি বছর আউশ ধানের আবাদ প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায়, পাটের আবাদ নেমে এসেছে প্রায় অর্ধেকে। তথ্য মতে, গত বছরের চেয়ে উপজেলায় আউশ আবাদ বেড়েছে ১৩৫ হেক্টর পক্ষান্তরে পাট চাষ কমেছে ২০০ হেক্টর। তবে পাটের বাম্পার ফলনে কৃষকরে মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।
কৃষি অফিসের তথ্য মতে, এবছর উপজেলায় আউশ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২২০ হেক্টর জমি এবং উৎপাদিত ধান থেকে ৫৫৭ মেট্রিকটন চাল পাওয়ার সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭৫ হেক্টর আবাদ বেড়ে অর্জন হয়েছে ২৯৫ হেক্টর। আর গেল বছর আউশ আবাদের লক্ষ্য মাত্রা ও অর্জন ছিল ১৬০ হেক্টর জমি। গেল বছরের চেয়ে এবছর আউশের আবাদ বেশি হওয়ায় স্বাভাবিক কারনেই উপজেলায় পাটের আবাদ কমেছে। আউশ ধানের আবাদ বৃদ্ধি পাওয়ায় চলতি বছর পাটের আবাদ হয়েছে ২২০ হেক্টর, অথচ গেল বছর উপজেলায় পাট চাষ করা হয়েছিল ৪২০ হেক্টর জমিতে।
চলতি মৌসুমে পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে বলে জানান উপজেলার বিভিন্ন এলাকার পাট চাষীরা। পাটের বাম্পার ফলন দেখে কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, এবার উপজেলার ৯ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ৪২০ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছিল। কিন্তু আউশের দাপটে অর্জন হয় মাত্র ২২০ হেক্টর। তারমধ্যে তোষা পাট ১১০ হেক্টর, দেশি পাট ৩৫ হেক্টর এবং কেনাফ পাট চাষ করা হয়েছে ৭৫ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবার বাম্পার ফলন হয়েছে, তাছাড়া কৃষকরা ভালো দাম পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আশা করছেন কৃষি কর্মকর্তাগন।
সরেজমিনে উপজেলার মোছারচর, বানেশ্বরদী, ভূরদীসহ বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা যায়, বাতাসের সাথে তাল মিলিয়ে দোল খাচ্ছে লিকলিকে সবুজ পাটগাছ। বর্ষার বৃষ্টিতে যৌবন পাওয়া সতেজতা ছড়িয়ে চোখের সামনে তুলে ধরেছে প্রাকৃতিক মুগ্ধতা। পাটের ফলন ভাল পেতে কৃষকদেরও পরিচর্যার অভাব নেই। ঘুরতে ঘুরতে দেখা মেলে পাট কাটা অবস্থায় মোছারচর এলাকার হাসেম, আবুল, কালামসহ বেশ কয়েকজন পাট কাটা শ্রমিকের সাথে। তারা বলেন, এবার পাট চাষ কম হয়েছে। তবে সবাই পাট কাটতে পারেন না। তাই পাট কাটা শ্রমিকের মজুরি কমেনি। তাদের দৈনিক মজুরি ৫৫০ টাকা থেকে ৬৫০ টাকা। যেখানে অন্যান্য শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। বানেশ্বরদীর মোস্তাফিজুর রহমান খান, আবুল হোসেন ও আমিন মিয়া, চন্দ্রকোণা ইউনিয়নের সাজু সাঈদ সিদ্দিকী ও রফিকসহ অনেক পাট চাষীরা জানান, পাটের গাছ খুব ভাল হয়েছে, ফলন খুব ভাল হবে। প্রয়োজনীয় শ্রমিকও মিলছে, কিন্তু বৃষ্টি-পাত কম হওয়ায় পাট জাগ দিতে কিছু সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হুমায়ূন কবীর জানান, নকলা উপজেলায় আউশ আবাদ লক্ষমাত্রা অতিক্রম করায় গত বছরের চেয়ে এবছর পাটের আবাদ কমেছে সত্য, তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চলতি মৌসুমে কৃষকরা হেক্টর প্রতি ৭৪ মণ থেকে ৮৭ মণ করে পাট পাবেন বলে তিনি আশা করছেন।