নার্সারিতে বিদ্যমান চারা গাছ ও ফুল ফলের গাছে সময়মত সেচ দেওয়া জরুরি। প্রয়োজনীয় সময় গাছে কৃত্রিম উপায়ে সেচের মাধ্যমে পানি সরবরাহ এবং অতিবৃষ্টি বা অন্যান্য কারণে গাছের গোড়া থেকে পানি অপসারণের ব্যবস্থা করা অত্যন্ত- জরুরি পানি ব্যবস্থাপনা বলতে সেচ ও নিষ্কাশন উভয়কেই বুঝায়। ফল গাছের জন্য পানি ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পানির অপর নাম জীবন কথাটি সকল জীবের ন্যায় গাছের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। পানির অভাবে গাছের বৃদ্ধি ও ফলন ব্যাহত হয় এমন কি মৃত্যুও ঘটতে পারে। তাই শুষ্ক মৌসুমে ফলগাছে সেচের ব্যবস্থা করা একান্ত জরুরি। আবার কিছু ফলগাছ যেমন পেঁপে, কলা, তরমুজ, আনারস, কাঁঠাল, ইত্যাদি জলাবদ্ধতায় অত্যন্ত সংবেদনশীল, এমনকি বেশি দিন জলাবদ্ধতা থাকলেমারাও যেতে পারে। এসব ফলগাছের জন্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা অত্যাবশ্যক।ফলগাছে কখন সেচ দিতে হবে তা নির্ভর করে গাছের বৃদ্ধি, আবহাওয়া এবং মাটিরঅবস্থা ইত্যাদিও উপর।
পানি সেচ পদ্ধতি (Methods of irrigation)
১) ওভারহেড বা বর্ষণ সেচ (Overhead/Sprinkler irrigation)
এ পদ্ধতি প্রাকৃতিক বৃষ্টির মতই গাছের উপরে বা জমির উপরে পানি বর্ষণ বাসিঞ্চন করা হয়। উঁচুনিচু জমির জন্য এ পদ্ধতি খবুই উপযোগী। যে কোন ফলবাগানেরএ পদ্ধতিতে সেচ দেয়া যায় তবে সাধারণত ছোট আকারের গাছের জন্যই বেশিকার্যকরী। এ পদ্ধতির একটা বড় অসুবিধা হল যে বাতাসের বেগ বেশি হলে সেচকৃতপানির সমবন্টন হয় না। বর্ষণ সেচ আবার দুই প্রকার যথাঃ (ক) ঘুর্ণায়মান নজলপদ্ধতি ও (খ) ছিদ্রযুক্ত নজল পদ্ধতি। প্রথম পদ্ধতিতে সেচ নলের মাথায় একটাঘূর্ণায়মান নজল বাসানো থাকে এবং নির্দিষ্ট সময় পর ঘুরে ঘুরে পানি সিঞ্চনহতে থাকে। আনারসের জন্য এ পদ্ধতি সবচেয়ে ভাল। ছিদ্রযুক্ত নজল পদ্ধতিতেএকটানা বৃষ্টি পাতের মতো পানি উপর থেকে গাছে পড়ে।
২) ভূ-পৃষ্ঠে সেচ (Surface irrigation)
এ পদ্ধতিতে জমির উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত করা হয়। তুলনামূলকভাবে সহজ ও সস্তাবলে এ পদ্ধতিটি আমাদের দেশে বেশি জনপ্রিয়। তবে এ পদ্ধতিতে সেচের পানিরসমবন্টন হয় না। উঁচু-নিচু জমিতে এ পদ্ধতিতে সেচ দেয়া অসুবিধাজনক, এতে পানিরঅপচয়ও বেশি হয়। পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, এ পদ্ধাতিতে সেচকৃত পানির মাত্র২০% গাছ ব্যবহার করতে পারে বাকি ৮০% অপচয় হয়। ভূ-পৃষ্ঠে সেচ বিভিন্নপ্রকারের হতে পারে। যেমনঃ
ক) প্লাবন পদ্ধতি (Flood Methods)
সাধারণত সমতল জমিতে এ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। এই পদ্ধতি আবার নানা ধরনের, যেমনঃ
১) মুক্ত প্লাবন (Flood Irrigation)
এ পদ্ধতিতে জমির একপাশ থেকে পানি প্রবেশ করানো হয় এবং সম্পূর্ণ জমি প্লাবিতহলে অতিরিক্ত পানি বের করে দেয়া হয়। যেসব স্থানে পানির উৎস পর্যাপ্ত ওসহজলভ্য সেখানে এ পদ্ধতিতে সেচ দেয়া চলে।
২) সীমান্ত প্লাবন (Border Irrigation)
এটা মুক্ত প্লাবন পদ্ধতির মতই তবে এক্ষেত্রে জমিতে সমান্তরাল ভাবে আইল তৈরিকরে পানি উঁচু থেকে নিচের দিকে চালনা করা হয়। দুটি আইলের মধ্যবর্তী জমিকে“বডার স্ট্রিপ” বলে। এই স্ট্রিপ ১০-১৫ মিটার চওড়া এবং ১০০-৪০০ মিটার লম্বাহয়ে থাকে। ঘনভাবে লাগানো ফসলের বেলায় এ পদ্ধতি অধিক প্রযোজ্য।
৩) নিয়ন্ত্রিত প্লাবন (Control Irrigation)
এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ জমিতে আইল তৈরি করে কয়েকটি খন্ডে ভাগ করা হয়। অতঃপর প্রতিখন্ডকে ঢালু অনুযায়ী প্লাবিত করা হয়।
৪) বেসিন প্লাবন (Basin Irrigation)
যে সব ফলগাছ দাঁড়ানো পানি সহ্য করতে পারে এবং অধিক দূরত্বে লাগানো হয় সে সবক্ষেত্রে এ পদ্ধতি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এ পদ্ধতিতে প্রতিটি গাছের গোড়ায়বৃত্তাকার/আয়তাকার বেসিন তৈরি করা হয়। দুই সারি গাছের মধ্যবর্তী স্থানেপ্রধান নালা কেটে সেই নালার সাথে উক্ত বেসিন সমূহকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নালাদ্বারা যুক্ত করা হয়। আমের জন্য এই পদ্ধতি খুবই উপযোগী। এ পদ্ধতিতেসম্পূর্ণ ক্ষেত ভিজাতে হয় না বলে সেচের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।
৫) রিং প্লাবন (Ring Irrigation)
দুপুর বেলা একটি গাছ যে জায়গা জুড়ে ছায়া প্রদান করে ছিক সেই সীমানায় নালাতৈরি করে সেচ প্রদান করা হয়। এ পদ্ধতি সাধারণত ফলগাছের বেলায় বেশি ব্যবহারকরা হয়।
খ) নালা পদ্ধতি
যেসব ফলগাছ গোড়ায় দাঁড়ানো পানি সহ্য করতে পারে না, সেসব ফল গাছের জন্য এপদ্ধতি সবচেয়ে উপযোগী। সারি করে গাছ লাগানো হলে এ পদ্ধতির কার্যকারিতাবৃদ্ধি পায়। গাছ থেকে গাছ ও সারি থেকে সারির দূরত্ব যদি খুব বেশি না হয় তবেদুই সারির মাঝে প্রয়োজনমত গভীর বা অগভীর নালা তৈরি করে নালায় পানি সরবরাহকরলে তা সহজেই গাছের শেকড়াঞ্চলে পৌছতে পারে।
গ) ড্রিপ বা বিন্দু সেচ পদ্ধতি
এই পদ্ধতিতে ছিদ্রযুক্ত নলের সাহায্যে গাছের গোড়ায় ফোটায় ফোটায় সেচ দেয়া হয়এতে পানির কোন অপচয় হয় না। এখানে সেচের জন্য পানি যাওয়া দুরুহ সেইক্ষেত্রে এই পদ্ধতি প্রযোজ্য।
কোন ফল গাছের জন্য কোন সেচ পদ্ধতি উপযোগী তা নিম্নে এ দেখানো হল।
কতিপয় ফল গাছের জন্য উপযোগী সেচ পদ্ধতি
সেচ পদ্ধতি | ফল গাছের নাম |
বেসিন | কাঁঠাল, আম, জাম, পেয়ারা, লিচু এবং অধিকাংশ বৃক্ষজাতীয় ফল। |
নালা | আনারস, কলা , পেঁপে, তরমুজ, ফুটি, স্ট্রবেরী। |
মুক্ত প্লাবন | কাঁঠাল, আম, জাম, পেয়ারা, লিচু, কলা, এলাচী লেবু। |
ড্রিপ বা বিন্দু সেচ | সকল প্রকার ফলগাছ। |
বর্ষণ বা স্প্রিংকলার | স্ট্রবেরী, আনারস, কাগজী ও এলাচী লেবু। |
সূত্রঃ তথ্য বাতায়ন
কৃষির আরো খবর জানতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিনঃকৃষিসংবাদ.কম