যারা নার্সারী পেশায় আত্মনিয়োগ করতে চান বা সফল ভাবে নার্সারী করতে আগ্রহী তাদের কতিপয় বিষয় অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে। যা নিম্মরুপঃ
আদর্শ বীজতলার মাপ
কাজেরসুবিধার জন্য একটি আদর্শ বীজতলার মাপ সাধারণতঃ ৩ মিটার দীর্ঘ (১০ ফুট) ও ১মিটার প্রস্থ (৩ ফুট) হওয়া প্রয়োজন। তবে চারার সংখ্যা অনুযায়ী বীজতলার দৈর্ঘ্য কমানো বা বাড়ানো যেতে পারে।গ্রীস্মকালীন ও শীতকালীন চারা উৎপাদনের ক্ষেত্রে বীজতলার উচ্চতার তারতম্যথাকে। গ্রীস্মকালীন বীজতলার উচ্চতা সাধারণতঃ ১৫ সেঃমিঃ উঁচু হওয়া দরকার এবংশীতকালীন বীজতলার ক্ষেত্রে ৭ – ৮ সেঃমিঃ উচ্চতাই যথেষ্ট। পানি নিকাশের সুবিধার জন্য গ্রীস্মকালীন সময়ে বীজতলা অপেক্ষাকৃত উঁচু রাখার প্রয়োজন পড়ে।
বীজতলায় বীজ বপন
বীজতলার উপরের স্তর ভালভাবে কুপিয়ে ঝুরঝুরে করে তৈরী করতে হবে। এতে মাটির ভিতরে সহজেই বাতাস ও পানি চলাচল করতে পারবে। চারা গুলোর শিকড় সহজেই মাটিতে প্রবেশকরে খাদ্য ও রস গ্রহণ করতে পারবে। এরপর বীজতলার উপরের স্তর সমান করে বীজবপন করতে হবে। বীজ বপনের সময় সমস্ত বীজতলা জুড়ে সমানভাবে বীজ ছিটিয়ে বালাইন করে বীজ বপন করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে বীজতলার কোথাও যেন বেশী বীজএবং কোথাও কম বীজ না পড়ে। তবে ছিটিয়ে বীজ বপনের চেয়ে লাইনে বীজ বপন করাউত্তম, কারন উৎপন্ন চারাগুলো ঠিকমত আলো বাতাস পায়, খাদ্য নিয়ে প্রতিযোগিতাকম হয়, সুস্থ্য-সবল ও মান সম্পন্ন চারা উৎপন্ন হয়। কোন কোন সবজির বীজ কিছু সময় ভিজিয়ে রাখার পর বপন করা হয়। এতে বীজে অংকুরোদগম ভাল হয়। তবে কপি জাতীয় সবজি ও টমেটোর বীজ বপনের পূর্বে ভিজানোর প্রয়োজন পড়ে না।
বিভিন্ন বীজের ভিজিয়ে রাখার সময়কাল নিচে দেখানো হলোঃ
বীজের নাম | ভিজানোর সময়কাল | বীজের নাম | ভিজানোর সময়কাল |
বেগুন | ২৪-৪৮ঘন্টা | লাউ | ৪-৬ ঘন্টা |
মরিচ | ৪৮ ঘন্টা | কুমড়া | ৪-৬ ঘন্টা |
পুই শাক | ২৪ ঘন্টা | করলা | ৪-৬ ঘন্টা |
গীমাকলমী | ২৪ ঘন্টা | গাজর | ২৪ ঘন্টা |
পেঁয়াজ | ২৪ ঘন্টা | পানং শাক | ৪-৬ ঘন্টা |
বীজ যত ক্ষুদ্র হবে (তামাক, সরিষা) মাটিকে তত বেশী ঝুরঝুরে করতে হবে। ছোট আকারের বীজ সমতল হতে ৫ মি:মি: গভীরে বপন করতে হবে। বড় আকারের বীজ যেমন -শিম, লাউ, করল্লা ইত্যাদি সমতল থেকে ২-৩ সে:মি: গভীরে বপন করতে হবে। যেসব বীজের আবরণ শক্ত সেগুলোর ক্ষেত্রে বীজকে বিশেষভাবে ফাটিয়ে বপন করতে হবে যেমন- বরই। বীজতলায় বীজ বপনের পর বীজ চাটাই দিয়ে বীজ তলাটি ঢেকে দিতে হবে।অনেক জাতের সবজি ও ফলের বীজে গজানোর সাথে সাথে পিঁপড়া লাগে ও গজানো বীজগুলোসব নিয়ে যায়। এজন্য বীজ বপনের পর পরই বীজতলার চারদিকে সেভিন পাউডার বা ছাইএর সাথে কেরোসিন মিশিয়ে ছিটিয়ে দিতে হবে।
চারা তোলার পদ্ধতি
বীজতলাথেকে চারা উঠানোর সময় একবার হালকা সেচ দিয়ে চারা উঠানো উচিত এত চারার শিকড়কম ছিড়ে ও রোপণজনিত আঘাত দ্রুত সেরে উঠে। চারার উঠানোর সময় চিকন কোচা কাঠিদিয়ে মাটিতে চাপ দিলে চারাগুলো সহজেই উঠে আসবে।
আদর্শ বীজতলা তৈরী
নির্দিষ্ট মাপমতো একটি বীজতলার চারকোণে চারটি খুটি পুঁতে দড়ি দিয়ে যুক্ত করে রেখাটানুন। ৩ মিটার লম্বা ও ১ মিটার চওড়া করে একটি আয়তকার ক্ষেত্র তৈরী করুন।এবার এর ৪ কোণায় ৪টি খুঁটি পুঁতে চার দিকে দড়ি দিয়ে বেঁধে দিন। তারপর কোদাল দিয়ে প্রায় ৬ ইঞ্চি বা ১৫ সেঃ মিঃ গভীর করে মাটি খুড়ে তুলে ফেলুন এবংনিম্নবর্ণিত তিনটি স্তরে বীজতলাকে সাজান।
ক) সর্বনিম্ন স্তরঃপ্রায় ৭.৫ সে:মি: বা ৩ ইঞ্চি পুরাতন সুরকি , ভাংগা ইট, পোড়া মাটি ইত্যাদি।খ) মধ্য স্তরঃ৭.৫ সে:মি: বা ৩ ইঞ্চি দোঁ-য়াশ মাটি ও বালুর মিশ্রণ।
গ) উচ্চ স্তরঃ৭.৫ সে:মি: বা ৩ ইঞ্চি বেলে-দোঁয়াশ মাটি , পঁচা গোবর ও কম্পোষ্ট সারের মিশ্রন।
আদর্শ বীজতলার বিভিন্ন স্তর
উচ্চ স্তরটি সমতল ভুমি হইতে শীতকালে ৭-৮ সে: মি: উঁচু হবে। বীজতলা যাতে অতিবর্ষায় ভেংগে না যায় এ জন্য ছিদ্র যুক্ত ইট বা বাঁশের চটা দিয়ে বীজতলারউপরিভাগের চার ধার বেধে দিতে হবে। বীজতলার মধ্যভাগ দু কিনারা হতে একটু উঁচুহওয়া দরকার। এতে বৃষ্টির পানি বা অতিরিক্ত পানি সহজেই গড়িয়ে বের হয়ে যেতেপারবে। একই ভাবে বীজতলার তৈরীর পদ্ধতি অনুসরণ করে মাটির টব, ঝুড়ি, চাড়ি, কাঠের বাক্স প্রভৃতিতেও চারা উৎপাদন করা যায়। এ পদ্ধতির সুবিধা হলো অল্পপরিসরে চারা উৎপাদন করা যায় এবং প্রতিকূল অবস্থায় সহজেই চারাকে এক স্থানহতে অন্যত্র স্থানান্তর করা যায়।
বীজতলায় বীজ বপনের ২ দিন পর থেকে বীজ কি পরিমাণ গজালো তা লক্ষ্য রাখতে হবে। বীজগজানো শুরু হলে সাথে সাথে বীজতলা ঢেকে রাখা চাটাই তুলে ফেলতে হবে। গজানো চারা অতিরিক্ত রৌদ্র ও বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষার জন্য বাঁশের চাটাই অথবাঅন্য কিছু দিয়ে তৈরী ঝাপ ব্যবহার করতে হবে। চাটাই অথবা ঝাপ এমন ভাবে খুটর উপরে দিতে হবে যেন বীজতলা থেকে ১.৫ ফুট বা ৪৫ সে:মি: উপরে থাকে।
সকাল বিকাল চাটাই অথবা ঝাপ সরিয়ে দিয়ে চারাগুলোতে রোদ বাতাস লাগানোরব্যবস্থা রাখতে হবে। চারাগুলো যতই আকারে বাড়বে ততই তাদের রোদের তীব্রতাসহ্য করবার শক্তি বৃদ্ধি পাবে। প্রয়োজন বোধে সকাল বিকাল ঝাঝারি দিয়ে হালকা সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। চারার বয়স ১০/১২ দিন হলে কাঠ অথবা ক্ষুদ্রাকার নিড়ানী দিয়ে বীজতলার মাটি হালকাভাবে আলগা করে দিতে হবে এবং আগাছা দমন করতেহবে। এই ভাবে প্রতি ২/৩ দিন অন্তর অন্তর মাটি আলগা করতে হবে। কপির বীজগজানোর ১৪/১৫ দিন পর অথবা চারাগুলো চার পাতা বিশিষ্ট হলে অন্য একটি আলাদা বীজতলায় রোপন করলে শিকড় অধিকতর শক্তিশালী হয় ও উৎপাদন ভালো হয়। চারারবৃদ্ধি ভালো না হলে, প্রতি লিটার পানিতে ১-২ গ্রাম ইউরিয়া সার গুলে চারার উপর সেপ্র করলে চারা গুলো আরোও সতেজ হবে। তবে কোন অবস্থাতেই বেশী ইউরিয়াসার দেয়া ঠিক হবে না।
বীজতলার মাটি যদি ভিজা স্যাঁতস্যাঁতে থাকে তবে মাটিতে বসবাসকারী জীবানুগুলোসক্রিয় হয়ে পড়ে এতে বিভন্নি প্রকার রোগ দেখা দিতে পারে। এসব রোগের ভিতরগোড়া পচা রোগ উল্লেখযোগ্য। এই রোগের কারণে অনেক সময় চারা উৎপাদন কষ্টকর হয়।এ রোগের আক্রমণ দেখা দিলে বীজতলা শুকনা রাখা, কুপ্রাভিট অথবা ডাইথেন এম-৪৫প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে সেচের পানির সাথে প্রয়োগ করলে উপকার পাওয়া যাবে।
বীজতলা জীবানুমুক্তকরণ
বীজতলায় বীজ বপনের পর চারা গজালে অনেক সময় দেখা যায় চারা গোড়া পচা রোগেআক্রান্ত হয় এবং অনেক চারা মারা যায়। আবার অনেক সময় চারার শিকড় ক্রিমিতে আক্রান্ত হয়, গিটের সৃষ্টি করে। এ সকল ক্রিমি আক্রান্ত চারা মাঠে রোপনেরআক্রমনের ব্যাপকতা বাড়লে ক্ষেতে গাছ ঢলে (wilting) পড়ে। বীজ বপনের পূর্বেযথাযথ ভাবে বীজতলা শোধনের আমরা এ ক্ষতির হাত থেকে ফসলকে রক্ষা করতে পারি।নিম্নে বীজতলা শোধন পদ্ধতি গুলোর বিবরণ দেয়া হলোঃ
ক) তাপ প্রয়োগঃ
চারটি পদ্ধতিতে তাপ প্রয়োগ করে বীজতলার জীবানুমুক্ত করা যায়।
১। লোহার কড়াই বা ড্রামের মাধ্যমে জীবানুমুক্ত করণঃ
বীজতলার উপরের ১০-১৫ সে: মি: মাটি চুলার উপর লোহার কড়াই বা ড্রামে নিয়ে তাপদিয়ে জীবানুমুক্ত করতে পারি। এ পদ্ধতিতে ১ ঘন্টা সময় আগুনের তাপে মাটিকেভেজে নিয়ে জীবানুমুক্ত করা যাবে।
২। সরাসরি তাপের মাধ্যমে জীবানুমুক্তকরণঃ
বীজতলার উপরে ভাল ভাবে খড় বিছিয়ে দিয়ে তারপর ঐ খড়ে আগুন ধরিয়ে দিতে হবে। ঐআগুনের তাপে বীজতলার উপরের ৫ সে:মি: মাটি জীবানুমুক্ত হবে। এ পদ্ধতিতেজীবানুমুক্ত করার পর খড় পোড়া ছাই মাটির সাথে এমন ভাবে মেশাতে হবে যেনবীজতলার মাটির ২-৩ সে:মি: গভীরতার নিচে না যায়। প্রতিবারই বীজ বপনের পূর্বেএভাবে মাটি শোধন করে নিতে হবে। তাপের মাধ্যমে বীজতলা জীবানুমুক্ত করতেগেলে মাটিতে রক্ষিত নাইট্রোজেন সার বাতাসে উড়ে যায় ফলে মাটিতে নাইট্রোজেনেরঅভাব দেখা দেয়।
৩। বাস্পের মাধ্যমে জীবানুমুক্তকরণঃ
এই পদ্ধতিতে বীজতলার উপরিভাগের ১০ সে: মি: মাটির মিশ্রণের ভিতর গরম পানিরভাপ ৭০ ডিগ্রী সে: গ্রে: তাপমাত্রায় আধাঘন্টা রাখা হলে মাটিতে বসবাসকারীক্ষতিকারক জীবানু ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু উপকারী জীবানুর তেমন ক্ষতি হবেনা। এই পদ্ধতি সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি। তবে এই পদ্ধতিতে খরচ অনেক বেশী, তাইআমাদের দেশের জন্য তেমন কার্যকর নয়।
৪। সৌর তাপের মাধ্যমে জীবানু মুক্তকরণঃ
সোলারাইজেশন বা সৌর তাপের মাধ্যমে জীবানুমুক্ত করণ আমাদের দেশের জন্যসবচেয়ে উপযুক্ত, সস্তা ও কার্যকর পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে বীজতলার মাটি ভালভাবেকোপানোর পর সমতল করে, সাদা ও স্বচ্ছ পলিথিন সিট দিয়ে সম্পূর্ণভাবে ঢেকেদিতে হবে। তারপর ২/৩ সপ্তাহ ঢাকা অবস্থায় সরাসরি সুর্য্য রশ্মি স্বচ্ছপলিথিন সিটের উপর পড়বে। এতে করে বীজতলার মাটির ভিতর গরম হয়ে যে তাপ সৃষ্টিহবে তাতে ক্ষতিকারক জীবানুগুলো অসুস্থ্য হয়ে মারা যাবে। এছাড়া তাপবৃদ্ধিরফলে বিষাক্ত এমোনিয়া গ্যাস নির্গত হবে। তাই এ পদ্ধতিতে জীবানুমুক্ত করারসাথে সাথে বীজতলায় বীজ বপন করা যাবে না। এই বিষাক্ত গ্যাস কোদাল দিয়েকোপালে ধীরে ধীরে বের হয়ে যাবে। তারপর বীজ তলায় বীজ বপন করা যাবে। এইপদ্ধতিতে বীজতলায় বসবাসকারী পোকা মাকড় মারা যাবে আন্যথায় তারা স্থান ত্যাগকরবে।
খ) রাসায়নিক দ্রব্য প্রয়োগ
তিন ধরণের রাসায়নিক দ্রব্য আছে যা প্রয়োগে বীজতলা জবীবানুমুক্ত করা যায়।
১)ফরমালডিহাইড
২)মিথাইল ব্রোমাইড ও
৩)ক্লোরোপিক্রিণ
নিম্নে ফরমালডিহাইড বা ফরমালিন এর মাধ্যমে বীজতলা শোধণের পদ্ধতি আলোচনা করাহলো। বাজারে ফরমালিনের দুই ধরণের গ্রেড আছে । এক ধরণের গ্রেড গবেষণাগারেব্যবহার হয় যা অত্যন্ত দামী। আর একটি বাণিজ্যিক গ্রেড যা দামে সস্তা।ফরমালিন একটি উদ্বায়ী রাসায়নিক পদার্থ। উদ্বায়ী হলো এমন পদার্থ যা খোলাজায়গায় রাখলে উড়ে যায়। যেমন- সিপ্রট বা পেট্রোল। বীজতলা জীবানুমুক্ত করারজন্য প্রতি ১ লিটার বাণিজ্যিক ফরমালডিহাইডের সাথে ৫০ লিটার পানি মিশিয়েএকটি মিশ্রণ তৈরী করতে হবে। এই মিশ্রন প্রতি ১ বর্গ মিটার বীজতলার জন্যপ্রায় ১২ লিটার বীজতলার উপর ছিটাতে হবে। তারপর বীজতলা ৪৮ ঘন্টা অর্থাৎ ২দিন ত্রিপল বা পলিথিন সিট দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। যাতে ফরমালিনের বাস্পসংরক্ষণ করা যায়। এরপর ত্রিপল বা পলিথিন সরিয়ে দিয়ে বীজতলা ১০-১৫ দিনউম্মুক্ত রাখতে হবে। এসময় কোদাল দিয়ে বীজতলা ভালোভাবে কোপায়ে ফরমালিনেরগ্যাস বের করে দিতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত ঐ ফরমালিণের গন্ধ থাকবে ততক্ষণ ঐবীজতলায় বীজ বপন করা ঠিক হবে ন। এই পদ্ধতিতে বীজতলার মাটিতে বসবাসরত সবছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া এবং কিছু কিছু আগাছা বীজও ধ্বংস হয়ে যাবে।
বীজতলা জীবানুমুক্ত করার পর ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিগুলো ডেটল/ সেভলন পানিতে ডুবিয়ে জীবানুমুক্ত করে নিতে হবে।
চারা সংরক্ষণ ও পরিবহণ
চারা উঠানোর পর পরই রোপন করা উচিত, এতে করে চারার স্বাস্থ্য ভাল থাকে। তবে অনেকসময় চারা সংরক্ষণের প্রয়োজন হয়। তখন ঠান্ডা অন্ধকারযুক্ত স্থানে চারা ২৪ঘন্টা থেকে ৩৬ ঘন্টা পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। সেক্ষেত্রে চারার পাতায়প্রয়োজনমত পানি ছিটিয়ে দেওয়া দরকার। উৎপাদিত চারা দুর দূরান্তে নেওয়ারপূর্বে ও চারা তোলার পূর্বে ভালো ভাবে সেচ দিতে হবে যাতে পরিবহনের সময়চারার শরীরে পানির অভাব না হয়।
শিকড় কাটিং
পরিণতগাছের শিকড় বা শিকড়াংশ মাতৃগাছ থেকে আলাদা করে নিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় চারাউৎপাদন পদ্ধতিকে শিকড় কাটিং বলে। এই পদ্ধতিতে ১৫-২০ সেঃ মিঃ লম্বা এবংপেন্সিল বা আঙ্গুলের মতন মোটা শিকড়ের অংশ তির্যকভাবে কেটে মাটিতে পুতেরাখতে হয়।এ কলম করার ক্ষেত্রে মাটিতে পরিমিত আদ্রতা নিশ্চিত করতে হবে। কিছুদিন পরকাটিং থেকে শিকড়সহ নতুন শাখা বের হয় এবং নতুন গাছের জন্ম দিবে। এই পদ্ধতিতেপেয়ারা, বেল, ডালিম, লেবু, বাগান বিলাস, এলামন্ডা ইত্যাদি ফল ও ফুলের চারাউৎপাদন করা যায়। এই পদ্ধতিতে গাছের বংশবিস্তার আমাদের দেশে বর্ষাকালে করাহয়। গাছ নতুন ভাবে যখন ডালপালা ছাড়া শুরু করে তার পূর্বেই এই শিকড় সংগ্রহকরতে হয়। কারণ এই সময় শিকড়ে প্রচুর পরিমাণ খাদ্য মজুদ থাকে। এতে কাটিং এসফলতার হার বেড়ে যায়।
পত্রকুঁড়ি কাটিং
কিছুকিছু গাছ আছে যাদের পত্রকুঁড়ি কাটিং হিসাবে ব্যবহার করে সহজে চারা উৎপাদনকরা যায়। এ পদ্ধতিতে পাতা, পাতার বোটা, ছোট একটুকরা কান্ড ও পত্রাক্ষেঅবস্থিত একটি সুপ্ত কুঁড়ির সমন্বয়ে গঠিত হয় পত্রকুঁড়ি কলম। যেমন – চা, এলাচি লেবু ইত্যাদি। যেসব গাছের পাতা থেকে শিকড় বাহির হয় কিন্তু কান্ডবাহির হয় না এমন গাছের জন্য পত্রকুড়ির কাটিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শীতের শেষদিকে সাধারণতঃ পত্রকুঁড়ি কলম করা হয়ে থাকে। এ পদ্ধতিতে এক মৌসুমেই প্রতিটিকুঁড়ি হতে একটি নতুন চারা উৎপাদন করা যায়।
শাখা কাটিং
ইন্টারকোঅপারেশন- এএফআইপি প্রকল্পেরসৌজন্যে আপডেটকৃত
গাছেরডাল থেকে যে কাটিং করা হয় তাকে ডাল কাটিং বলা হয়। ভাল কলম পাওয়ার জন্য ডালকর্তনকে ৪ ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন – শক্ত ডাল কাটিং, আধাশক্ত ডাল কাটিং, কচিডাল কাটিং এবং কোমল ডাল কাটিং
১. শক্ত শাখা কাটিং
জলপাই, ডালিম, জামরুল, পাতাবাহার, জবা, গন্ধরাজ, মুসান্ডা ইত্যাদি গাছেরক্ষেত্রে ৬-১২ মাস বয়সের আঙ্গুল অথবা পেন্সিলের ন্যায় মোটা ডাল নির্বাচনকরা হয়। এ সব গাছের ক্ষেত্রে আধা শক্ত ডাল ব্যবহার করেও চারা উৎপাদন করাযায় তবে তা শক্ত ডালের ন্যায় ভালো চারা উৎপাদিত হয় না।
২. আধা শক্ত শাখা কাটিং
লেবু, আঙ্গুর, গোলাপ ইত্যাদি। এ সকর ডাল পেন্সিলের ন্যায় চিকন অথবাসামান্য মোটা হতে পারে। শক্ত ডাল বা কচি ডাল দিয়েও এ সকল গাছের চারা উৎপাদনকরা যায় তবে সে সকল চারা আধাশক্ত ডালের ন্যায় ভাল হয় না।
৩. কচি শাখা কাটিং
আপেল, নাশপাতি, রঙ্গন, ডুরান্ডা ইত্যাদি গাছের জন্য কচি ডাল ব্যবহার করাহয়। এ সকল গাছের ক্ষেত্রে আধা শক্ত ডাল চারা উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করাযেতে পারে। তবে কচি ডালের ন্যায় ভাল হয় না।
৪. কোমল শাখা কাটিং
চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া, গাঁদা, মিষ্টি আলু ইত্যাদি গাছের ক্ষেত্রে ডালেরমাথার দিকের কোমল ডাল বা নতুন গজানো ডগা কাটিং হিসাবে ব্যবহার করা হয়। এসকল গাছের ক্ষেত্রে কচি বা আধাশক্ত ডাল চারা উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করাযায়। তবে তা কোমল ডালের ন্যায় ভালো চারা উৎপাদিত হবে না।
শক্ত বা আধাশক্ত শাখা কাটিং এর জন্য ডাল নির্বাচনের শর্তাবলী
ক) কাটিং এর জন্য ডাল নির্বাচনের সময় অবশ্যই সুস্থ্, সবল, ডাল নির্বাচন করতে হবে।খ) নির্বাচিত ডালের পাতাগুলো ধারালো সিকেচার দিয়ে কেটে ফেলতে হবে।গ) কাটিং এর জন্য ব্যবহৃত ডালে কমপক্ষে তিনটি গিট বা কুঁড়ি (Bud) থাকতে হবে।
ঘ) গাছের দক্ষিন ও পূর্ব দিকের ডালে কাটিং ভাল হয, সফলতার হার বেশী। কারণদক্ষিন ও পূর্ব দিকের ডালে সূর্যের আলো বেশী পড়ে এবং মজুদ খাদ্যের পরিমানবেশী থাকে।ঙ) কাটিং এর জন্য বৈশাখ হতে আষাঢ় মাস উত্তম তবে শীতকাল ছাড়া সারা বছরই ডাল কর্তন কলম করা যায়।
চারা তৈরী পদ্ধতি
কাটিং এর জন্য ডাল তৈরীকরণ
কাটিং এর জন্য নির্বাচিত ডালটির উপরের অংশের কাটটি গিটের উপরে গোল করে এবংনিচের অংশের কাটটি গিটের নিচে তেছরা করে কাটতে হবে। এতে কাটিংটির আগা-গোড়াসহজেই চেনা যাবে এবং তেছরা কাটা অংশে বেশী পরিমাণ শিকড় গজানোর সুযোগ পায় ।সাধারণত ৬-১২ মাস বয়সের ১৫-২০ সে: মি: লম্বা এবং পেন্সিল বা আঙ্গুলের মতমোটা ডালের অংশ কাটিং হিসেবে কর্তন করা হয়।
চারা তৈরী
ক) কাটিং এর জন্য তৈরিকৃত ডালগুলো উঁচু বীজতলা, টব বা কাঠের ট্রেতে রোপনকরা যাবে। বেলে-দোয়াঁশ মাটির সাথে প্রচুর পরিমান পচা গোবর মিশিয়ে বীজতলাতৈরী, টব বা কাঠের ট্রেতে ভর্তি করে কাটিং রোপন করতে হবে।
খ) বীজতলার দৈঘ্য ৩ মিটার ও প্রস্থ ১ মিটার হতে হবে এবং বেডটি উত্তর – দক্ষিন দিকে লম্বা লম্বি হবে।
গ) বীজতলায় ২০ সেমি: পর পর লাইন তৈরী করে প্রতি লাইনে ২০ সেমি: পর পর কাটিংলাগাতে হবে। কাটিং লাগানোর সময় গচি দিয়ে ছিদ্র করে কাটিং এর তেরছা অংশমাটিতে বসাতে হবে।
ঘ) কাটিং ৪৫ কৌনিক ডিগ্রীতে উত্তর মুখী করে বেডে বসাতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন ১টি গিট সহ এক তৃতীয়াংশ মাটির ভিতরে প্রবেশ করে।
ঙ) কাটিং বসানোর পর কাটিং এর গোড়ার মাটি ভাল ভাবে চেপে দিতে হবে যেন ভিতরে ফাঁকা না থাকে।
চ) এবার পানি দিয়ে বেডটি ভাল ভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে।
ছ) হালকা ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে ও মাঝে মাঝে সেচ দিতে হবে।
জ)এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে কাটিং হতে কুঁড়ি ও শিকড় গজাবে। তিন মাসের মধ্যেগজানো কাটিং বেড হতে তুলে পটিং করা যাবে, রোপন বা বিক্রয় করা যাবে। কাটিংবেড হতে উঠানোর ৩-৪ ঘন্টা আগে বীজতলার মাটি পানি দিয়ে ভাল ভাবে ভিজিয়ে দিতেহবে। অতপরঃ নিড়ানীর সাহায্যে কাটিং এর গোড়া হতে ৩-৪ ইঞ্চি দুর দিয়ে মাটিরবলসহ কাটিংটি উঠাতে হবে। সাথে সাথে পটে / পলিব্যাগে পটিং বা বাগানে রোপনকরতে হবে। বিক্রয় করতে হলে কাটিং এর গোড়ার মাটির বলটি নলি সুতা দিয়েপেঁচিয়ে হালকা ছায়া যুক্ত স্থানে ১০-১৫ দিন হার্ডেনিং করে বিক্রয় করতে হবে।হার্ডেনিং এর সময় গাছের প্রয়োজন অনুযায়ী দিনে ১-২ বার হালকা সেচ দিতে হবে।
কাটিং এর উপরের কাটা অংশে ছত্রাক নাশক লাগালে রোদ ও রোগের হাত থেকে রক্ষাপাওয়া যায়। নিচের কাটা অংশে হরমোন ( আই,বি,এ = ইনডোল বিউটারিক এসিড, বাজারে বাণিজ্যিক নাম সুরাটেক্স) ব্যবহার করলে খুব সহজেই শিকড় গজায়।
কাটিং এর প্রকারভেদ
পত্রকুঁড়ি কাটিং
কিছুকিছু গাছ আছে যাদের পত্রকুঁড়ি কাটিং হিসাবে ব্যবহার করে সহজে চারা উৎপাদনকরা যায়। এ পদ্ধতিতে পাতা, পাতার বোটা, ছোট একটুকরা কান্ড ও পত্রাক্ষেঅবস্থিত একটি সুপ্ত কুঁড়ির সমন্বয়ে গঠিত হয় পত্রকুঁড়ি কলম। যেমন – চা, এলাচি লেবু ইত্যাদি। যেসব গাছের পাতা থেকে শিকড় বাহির হয় কিন্তু কান্ডবাহির হয় না এমন গাছের জন্য পত্রকুড়ির কাটিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শীতের শেষদিকে সাধারণতঃ পত্রকুঁড়ি কলম করা হয়ে থাকে। এ পদ্ধতিতে এক মৌসুমেই প্রতিটিকুঁড়ি হতে একটি নতুন চারা উৎপাদন করা যায়।
শাখা দাবাকলম
শাখারআগ্রভাগের কিছুটা অংশ নিচের দিকে নুইয়ে এর অংশবিশেষ বাকল তুলে ৫-৭ সেঃমিঃমাটির গভীরে পূঁতে রাখা হয়। দুই/ তিন সপ্তাহের মধ্যে বাকল তোলা উপরের অংশেরগোড়া থেকে অস্থানিক শিকড় গজায় এবং তখন মাতৃগাছ থেকে এটিকে বিচ্ছিন্ননির্দিষ্ট জায়গায় রোপণ করতে হয়। যেমনঃ রাস্পবেরী, ব্লাকবেরী।
গুটি কলম
দাবাকলমের মধ্যে গুটি কলম সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং প্রচলিত পদ্ধতি । গুটি কলমকে পটলেয়ারেজ, চাইনিজ লেয়ারেজ, এয়ার লেয়ারেজ, মারকটেজ নামেও ডাকা হয়ে থাকে। গুটিকলম নিরক্ষীয় এবং নাতিশীষ্ণ অঞ্চরের গাছের বংশবিস্তারে বিশেষ করে ফল গাছেরবংশ বিস্তারে ব্যবহৃত হয়।
ধাপ ১.নির্বাচিত শাখা যাতে গুটি কলম করা হবে।
ধাপ ২.পাতা অপসারণ করে চক্রাকারে বাকল তুলে ফেলা হয়েছে।
ধাপ ৩.কাটা অংশের চারিদিকে রুটিং মিডিয়াম দিকে ঢেকে দেয়া হয়েছে এবং পানি ধারণ নিশ্চিত করা হয়েছে।
ধাপ ৪.রুটিং মিডিয়াম সহ ডালকে পাতলা স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে মুড়ে দেয়া হয়েছে।
ধাপ ৫.মূল গজানো দাবা কলম।
গুটি কলম সাধারণতঃ
ক)মাটির সমান্তরালে অবস্থান করছে এমন শাখায় করা হয়ে থাকে।
খ)নির্বাচিত ডালের বয়স ৬-১২ মাস হতে হবে।গ)ডালটি পেন্সিলের মত মোটাহতে হবে, গাছের দক্ষিণ পূর্ব দিকের ডাল হলে উত্তম। নির্বাচিত শাখারঅগ্রভাগর ৩০-৪০ সে:মি: নীচে কয়েকটি পাতা সরিয়ে দুটি পর্ব মধ্যবর্তী অংশথেকে ধারালো ছুরি দিয়ে চক্রাকারে ৪-৫ সে:মি: পরিমাণ জায়গায় বাকল তুলে ফেলতেহয়। কাটা জায়গার কাঠের উপরের সবুজাভ আবরণটি ছুরির বুক দিয়ে চেঁছে ফেলেদিতে হয। এতে ক্যাম্বিয়াম যোগসুত্র বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। ডালের উপরের দিকেরকাটাটি গিটের কাছাকাছি হলে ভাল হয়। কারন এতে কলমে তাড়াতাড়ি শিকড় গজায়। এরপরকাটা জায়গাটিকে পুরোপুরি রুটিং মিডিয়া (৫০% এটেল দোয়াশ মাটি + ৫০% পঁচাগোবর) নারিকেলের ছোবড়ার গুড়া, নারিকেলের ছোবড়া, পাটের আঁশ ইত্যাদি দিয়েঢেকে দিতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে শিকড় গজানোর জন্য কাটা উপরের অংশ যেনঅবশ্যই রুটিং মিডিয়া দিয়ে ঢাকা থাকে। রুটিং মিডিয়া স্থাপনের পর এর চারদিকেস্বচ্ছ পলিথিনের শীট শক্ত করে বেধে দিতে হয যেমন কোন ভাবেই রুটিং মিডিয়াপিছলে না নেমে যায়। এ ব্যবস্থা রুটিং মিডিয়ায় পানি ধারণ নিশ্চিত করে। অনেকসময় সহজে শিকড় গজায় না এমন প্রজাতির কলমের ক্ষেত্রে কাটা অংশে রুটিং হরমোন(IBA, NAA, Kinetin ইত্যাদি) প্রয়োগ করা হয়। বৈশাখ – আষাঢ় মাস গুটি কলমকরার উপযুক্ত সময়। গুটি কলমে শিকড় গজাতে গাছের প্রকার ভেদে কয়েক সপ্তাহথেকে কয়েক মাস পর্যন্ত সময় নেয়। শিকড়ের রং প্রথমে সাদা থাকে, আস্তে আস্তেরং বদলিয়ে খয়েরী হয়। শিকড়ের রং খয়েরী হলে মাতৃগাছ থেকে ২ থেকে ৩ দফায় কেটেনিয়ে এসে নার্সারী বেডে রোপণ করতে হয়। উদাহারণঃ লিচু, কাগজীলেবু, পেয়ার, ডালিম, জামরুল, বতাবীলেবু, জলপাই,গোলাপজাম, করমচা, আম ইত্যাদি।
জোড় কলম ঃস্টক তৈরী
অনাকাংখিত কিন্তু পরিবেশ উপযোগী গাছের বা স্থানীয় জাতের বীজ হতে চারা তৈরী করতে হবে যাতে কাংখিত জোড়া লাগানো সম্ভব হয়।
স্টক চারা তৈরীর ধাপ সমুহঃ
১) পরিনত গাছ হতে সুস্থ ও সবল বীজ সংগ্রহকরা।
২) স্টক চারাটি সরাসরি মাটি বা পলিব্যাগে তৈরী করা।
৩) যদি চারাটি মাটিতে তৈরী করা হয় তবে মাটি ভাল ভাবে কুপিয়ে ঝুরঝুরা করেআগাছা পরিস্কার করে প্রয়োজনীয় জৈব সার মিশিয়ে বেড আকারে করতে হবে। বেডটিরপ্রস্থ্য যেন ১ মিটার এর বেশী না হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এর পর বেডে২৫ সেমিঃ পর পর লাইন করে প্রতি লাইনে ২০ সেমিঃ পর পর চারা/ বীজ রোপন করতেহবে এবং কলম করার পূর্ব পর্যন্ত স্টক চারা গুলোর সকল প্রকার পরিচর্যানিশ্চিত করতে হবে।
৪) চারা পলিব্যাগে তৈরী করলে ২০ সেমিঃ x ১২ সেমিঃ পলিব্যাগ নিতে হবে।দোঁয়াশ মাটির সাথে অর্ধেক পচা গোবর ও কম্পোস্ট মিশিয়ে পলিব্যাগ ভরতে হবে।
৫) প্রতি ব্যাগে একটি করে বীজ বা চারা রোপন করতে হবে। চারা গজানোর পরপলিব্যাগ গুলো যেন কাত হয়ে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে অন্যথায় চারারগোড়া বাঁকা হয়ে যাবে।
৬) এবার ব্যাগটি বেডে ২৫ x ২০ সেমিঃ দুরত্বে রোপন করতে হবে এবং খেয়াল রাখতেহবে পলিব্যাগটি যেন মাটির সমান্তরালে থাকে। এতে খরা মৌসুমে পানি সেচ কমলাগে এবং চারাটি সুস্থ ও সবল হয়।
৭) সুস্থ, সবল এবং নিরোগ চারা পাওয়ার জন্য আগাছা, রোগ ও পোকা-মারড় দমন করতে হবে। প্রয়োজনে গাছে সার ও সেচ দিতে হবে।
কলম করার উপযুক্ত সময়
মে থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত কলম করার উপযুক্ত সময়। কারন এ সময় বাতাসে আদ্রতা ওগাছের কোষের কার্যকারিতা বেশী থাকে। ফলে তাড়াতাড়ি জোড়া লাগে এবং সফলতারহারও বেশী পাওয়া যায়।
পদ্ধতি
ক) সাধারনত স্টক গাছের গোড়া হতে ১৫-২০ সেমিঃ উপরে গ্রাফ্টিং করা হয়।
খ) খেয়াল রাখতে হবে যেন জোড়া স্থানটির নিচে অবশ্যই যেন কিচু পাতা থাকে।
গ) এবার সিকেচার দিয়ে নিদ্দিষ্ট উচ্চতায় স্টক গাছের মাথাটি সমভাবে কেটে অপসারন করতে হবে।
ঘ) এবার চাকু দিয়ে স্টক গাছের মাথাটি ২-৩ সেমিঃ লম্বালম্বি ভাবে চিরে দিতেহবে এবং সায়নের গোড়ার উভয় পাশ একই ভাবে ২-৩ সেমিঃ তেরছা কাট দিতে যেন গোঁজবা তিলকের মত হয়।
ঙ) এবার স্টক গাছের কর্তিত অংশে সায়নের কর্তিত অংশ সমান ভাবে প্রবিস্ট করাতে হবে।
চ) অতপর জোড়া লাগানোর যায়গাটি পলিথিন ফিতা দিয়ে পেচিয়ে শক্ত ভাবে বেধে দিতে হবে।
ছ) এবার একটি পলিথিন ক্যাপ বা টুপি দিয়ে সায়নের মাথা হতে জোড়ার নিচ পর্যন্ত ঢেকে বেধে দিতে হবে।
ব্যতিক্রমঃযেহেতু কাঠলের ২-৩সপ্তাহের স্টক চারায় গ্রাফটিং করা হয় তাই স্টক চারায় কোন পাতা থাকেনা এবংকলমটি চাকুর পরিবর্তে ব্লেড দিয়ে করতে হয়।
পলিব্যাগের চারা উৎপাদন
চারা উৎপাদন
এটিচারা উৎপাদনের একটি বিজ্ঞান সম্মত প্রদ্ধতি। পূর্বে শুধুমাত্র বেডে চারাউৎপাদন করা হতো এবং সেসব চারা মাটির বলসহ বা উপড়ে তুলে নিয়ে লাগানোর জন্যনেয়া হতো। এভাবে চারা তোলার ফলে চারার শিকড় ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং পরবর্তীতেরোপিত চারা অনেক ক্ষেত্রে মারা যায়। কারন, শিকড় গাছের জীবন-কেননা তা শুধুগাছকে মাটিতে ধরে রাখে না শিকড় মাটি থেকে গাছের জন্য প্রয়োজনীয় পানীয় ওখাদ্য উপাদান গ্রহন করে। কিছু মূল্যবান চারা অবশ্য বাঁশের চাঁচি বা মাটিরটবে তোলা হতো। এ দু’টোই বেশ ব্যয়সাপেক্ষ। বর্তমানে বীজতলায় সরাসরি চারাউৎপাদনের চেয়ে নার্সারীতে পলিব্যাগে উত্তোলনই বেশি জনপ্রিয়। পেঁপে, পেয়ারা ওবনজ উদ্ভিদের বীজ থেকে চারা তৈরির জন্য কাল পলিব্যাগ ব্যবহার করা ভাল।বিভিন্ন ফসলের চারা উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন আকারের পলিব্যাগ ব্যবহার করা হয়।সাধারণত ১৫ সেঃমিঃ লম্বা ও ১০ সেঃমিঃ প্রস্থ বিশিষ্ট পলিব্যাগ শতকরা ৫০ভাগ উর্বর বেলে দোআঁশ মাটি ও শতকরা ৫০ ভাগ গোবর বা কম্পোষ্ট দিয়ে ভরে দিতেহবে। প্রয়োজনে ছোট বা আরও বড় পলিব্যাগ ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রয়োজনে চালুনী দ্বারা চেলে সেই গুঁড়া মাটি দ্বারা পলিব্যাগ ভর্তি করে উপরিভাগ দুইহাত দিয়ে আস্তে আস্তে ২/৩ বার ঝাঁকুনী দিতে হবে। তারপর পুনরায় মাটি ঢেলেব্যাগটি ভর্তি করতে হবে ।
নার্সারীতে পলিব্যাগ স্থাপন
নার্সারীরযে অংশে পলিব্যাগ রাখা হবে সে জায়গাটি ভালভাবে দুরমুজ করে সমান করে নিতেহবে। তারপর নার্সারীর যেকোন এক পাশ হতে পলিব্যাগ স্থাপন শুরু করতে হবে।ব্যাগগুলো সোজাভাবে একটি আরেকটির সাথে আটঁসাটঁ করে রাখতে হবে। কোনঅবস্থাতেই যেন পলিব্যাগ বাঁকা বা কাত করে সাজানো না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতেহবে। বাঁকা পলিব্যাগে চারা বাঁকা ও দূর্বল হবে। পলিব্যাগে অর্ধেক মাটিভরার পর ব্যাগটিকে ২-৩ বার ঝেঁকে নিতে হবে যাতে ব্যাগের মাটি ঠিকমত বসে যায়এবং তার মাঝখানে বীজ বপন করে পলিব্যাগ নার্সারীতে সাজিয়ে রাখা হয়।পলিব্যাগের মাটি বেশি শুকিয়ে গেলে মাঝে মাঝে হালকা সেচ দিতে হবে। গাছের ধরণঅনুযায়ী বীজ গজানোর মাস খানেক পর থেকে পলিব্যাগের চারা বিক্রয় শুরু করাযেতে পারে। পানি সেচের ফলে পলিব্যাগে যাতে পানি জমে যেতে না পারে সেজন্যঅতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের সুবিধার্থে পলিব্যাগের তলা থেকে ৩ সেঃমিঃ উপরেপলিব্যাগের চতুর্দিকে বেশ কয়েকটি ছিদ্র করে দিতে হবে। পলিব্যাগের ছিদ্রদিয়ে শিকড় বের হয়ে এলে তা কেটে দিতে হবে।
শিকড় ছাঁটাই ও চারা পরিবহন
চারারশিকড় পলিব্যাগ ভেদ করে বেরিয়ে গেলে সময়মত তা কাঁচি দিয়ে ছেঁটে দিতে হবে। তানা করলে চারা পরিবনে অসুবিধা হয় এমনকি এসব চারা স্থানান্তর করার সময় মারাওযেতে পারে। অত্যান্ত সতর্কতার সাথে চারা পরিবহন করা প্রয়োজন। পাতা, কান্ডবা শিকড় আঘাতপ্রাপ্ত হলে বা শুকিয়ে গেলে রোপণের পর চারা মারা যেতে পারে। নামারা গেলেও এসব চারা জমিতে প্রতিষ্ঠিত হতে অনেক সময় লেগে যায় এবং গাছদূর্বল হয়ে পড়ে। তাই বীজতলা থেকে চারা সংগ্রহ করে অতি দ্রুত পরিবহন করাউচিত। পলিব্যাগে চারা পরিবহনে অসুবিধা কম হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেনপলিব্যাগের মাটি না পড়ে যায়। সূত্রঃ জাতীয় তথ্য বাতায়ন
কৃষির আরো খবর জানতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিনঃকৃষিসংবাদ.কম