Site icon

পুঁইশাকের পুষ্টিগুন ও বাড়ির আঙ্গিনায় বা টবে বিষমুক্ত চাষ পদ্ধতি

পুঁইশাকের পুষ্টিগুন

পুঁইশাকের পুষ্টিগুন

কৃষিবিদ নিয়াজ মুর্শীদ

পুঁইশাকের পুষ্টিগুন : পুঁই (Basella alba) লতা জাতীয় এক প্রকার উদ্ভিদ যার পাতা ও কান্ড শাক হিসেবে খাওয়া হয়। পুঁইশাকের ভাজি বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলের মানুষের প্রিয় একটি খাবার। প্রচুর পরিমানে আঁশ থাকার কারনে ইহা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি প্রচুর পুষ্টিগুণ রয়েছে এ শাকের। পুঁইশাকের পুষ্টিগুন -ভিটামিন “এ”, “বি” ও “সি” তে ভরপুর এ শাকের প্রতি ১০০ গ্রামে হয়েছে ২.৩ গ্রাম আঁশ, ১.৫ গ্রাম খনিজ পদার্থ, ৪.২ গ্রাম শর্করা, ১১ মিলিগ্রাম লৌহ, ১৬৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৬৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি, ২৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন-বি সহ আরো অনেক পুষ্টিকর উপাদান। ডায়াবেটিস থেকে সুরক্ষা করা (ইনসুলিন উৎপাদনে সাহায্য করে), চোখের দৃষ্টি ভালো রাখা, শারীরিক বৃদ্ধি, চুল মজবুদ রাখা, হৃদরোগ, পাকস্থলী ও কোলন ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করা, ওজন কমানো, শুক্রাণুর সক্রিয়তা বৃদ্ধি, চর্ম রোগ, দাঁত সাদা করতে সাহায্য করা, ব্রণ প্রতিরোধ করা, মস্তিস্ক সুস্থ রাখা সহ রয়েছে এর নানাবিধি ঔষধি গুনাগুন।


ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর এর মধ্যে যেকোনো সময় লাগানো যায় পুঁইশাক। মাঠে বাণিজ্যিক উৎপাদনের পাশাপাশি পরিবারের চাহিদা মিটাতে বাড়ির আঙিনায়, ছাদে বা বারান্দায় টবে ও লাগানো যায় পুষ্টিকর এই পুঁইশাক। রোগমুক্ত, পরিস্কার ও পরিপুষ্ট বীজ বপনে ভালো ফলন পাওয়া যায় এই শাকের।পুঁইশাক কোনো প্রকার রাসায়নিক সার ছাড়াও শুধু মাত্র জৈব সার দিয়ে সহজেই টবে লাগানো যায়। মাঝারি থেকে বড় সাইজের যে কোনো মাটি বা প্লাস্টিকের টব, ফলের কেরেট, মাছ বহনের কর্ক শিটে লাগানো যায় এই শাক। বেলে দোআঁশ মাটির সাথে ৫০ ভাগ জৈব সার মিশিয়ে উক্ত মাটি দিয়ে টব পূর্ন করে প্রতি টবে ৬-১০ টি বীজ বপন করতে হবে। বীজ বপনের সাত দিনের মধ্যেই বের হওয়া চারা রাখতে হবে সূর্যের আলোতে। বৃষ্টির পানি পেয়ে বাড়তে থাকবে চারা গুলো। বৃষ্টি না হলে পরিমান অনুযায়ী পানি দিতে হবে। বপনের ৪০-৪৫ দিনের মধ্যেই খাবার উপযোগী হবে শাকগুলো।


মাঠে বা বাড়ির আঙিনায় ছোট জমি তৈরি করে লাগানোর ক্ষেত্রে সারি অথবা ছিটানো পদ্ধতিতে লাগানো যায় পুঁইশাক। বীজের আকার অনুযায়ী প্রতি শতাংশে প্রয়োজন ২৫-৩০ গ্রাম বীজ। জমির আগাছা পরিষ্কার করে ভালো ভাবে চাষ দিয়ে অথবা কোদাল দিয়ে কুপিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে তৈরি করতে হবে জমি। প্রতি শতাংশে লাগবে ৫০-৬০ কেজি জৈব সার। অধিক ফলন পেতে শতাংশ প্রতি ৫০০গ্রাম সরিষার খৈল, ৮০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৪০০ গ্রাম টিএসপি ও ৪০০ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। জমি তৈরির সময় ইউরিয়া সারের এক-তৃতীয়াংশ জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে। বাকি দুই-তৃতীয়াংশের অর্ধেক বীজ বপনের ২৫-৩০ দিন পর এবং বাকি অর্ধেক বীজ বপনের ৪৫-৫০ দিন পর উপরি প্রয়োগ করতে হবে। ১ মিটার দূরত্বের সারি তৈরি করে প্রতি সারিতে ৫০ সেন্টিমিটার পরপর লাগাতে হবে বীজ অথবা চারা। বীজ বপনে আগে ২৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে বীজ বুনলে বাড়বে চারা গজানোর হার। বর্ষার সময় পানি দেয়ার খুব একটা প্রয়োজন না হলেই জমিতে রস না থাকলে পরিমান মত পানি দিতে হবে। গোড়া পচা রোধের জন্য রাখতে হবে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা। মাঝে মধ্যে আলগা করে দিতে হবে গোড়ার মাটি। গাছের উচ্চতা এক ফুট হলে কেটে দিতে হবে লতার আগা, ফলে ঝোপলো হবে গাছ। একটি গাছ থেকে প্রায় ৮-১০ বার সংগ্রহ করা যায় শাক।


পুইশাকে পোকামাকড়ের আক্রমণ ও রোগবালাই খুব একটা হয়না বললেই চলে। রোগ বালাইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পাতায় দাগ রোগ এবং কান্ড ও গোড়া পঁচা রোগ। পাতায় দাগ রোগ সাধারণত বীজ বাহিত রোগ। বীজ বপনের পূর্বে ভালোভাবে বীজ শোধন করে নিলে এ রোগের প্রকোপ অনেকাংশে কমে যায়। জৈব ছত্রাকনাশক দিয়ে মাটি শোধন করলে কমে যায় গোড়া পঁচা রোগের প্রকোপ। পাশাপাশি গোড়া পঁচা রোগ থেকে মুক্ত থাকতে গাছের গোড়ায় অতিরিক্ত পানি জমতে দেয়া যাবে না। যে ছাড়া ও জৈব ছত্রাকনাশন স্প্রে করলেও গোড়া পঁচা ও কান্ড পঁচা রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
পোকামাকড়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিটল পোকা। জৈব কীটনাশক স্প্রে করে সহজেই এ পোকা দমন করা যায়।

বাজারে প্রচলিত পুঁইশাকের বীজ:
বাজারে ভিবিন্ন কোম্পানির প্যাকেটজাত পুঁইশাকের বীজ এবং খোলা/লুজ পুঁইশাকের বীজ পাওয়া যায়। তবে প্যাকেটজাত বীজের গুণগত মান খোলা বীজের তুলনায় অনেক ভালো। কোম্পানি গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ইস্পাহানি এগ্রো লিমিটেড, লালতীর সীড, কৃষিবিদ গ্রুপ সীড ইত্যাদি।

বাজারে প্রচলিত জৈব সার:
১. বায়োডার্মা সলিড (ইস্পাহানি এগ্রো লিমিটেড): জৈব সারের ভূমিকার (মাটির উর্বরতা বাড়ানো) পাশাপাশি মাটির ক্ষতিকর ছত্রাক ও নেমাটোড দমন করবে। শতাংশ প্রতি ৩ কেজি।
২. কাজী জৈব সার (কাজী এগ্রো ফার্ম): শুধু মাটির উর্বরতা বাড়াবে।
৩. এসিআই বাম্পার জৈব সার (এসিআই এগ্রো লিমিটেড): শুধু মাটির উর্বরতা বাড়াবে।

বাজারে প্রচলিত জৈব বালাইনাশক:
১. ইকোম্যাক ১.৮ ইসি (ইস্পাহানি এগ্রো লিমিটেড)- পোকামাকড় দমনের জন্য। প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
২. বায়োডার্মা পাউডার (ইস্পাহানি এগ্রো লিমিটেড)- গোরাপচা, শিকড় পচা ও কান্ড পঁচা রোগের জন্য। প্রতি লিটার পানিতে ৩-৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
৩. বায়োডার্মা পাউডার (ইস্পাহানি এগ্রো লিমিটেড)- বীজ শোধনের জন্য। প্রতি ১০ গ্রাম বীজের সাথে ৫ গ্রাম বায়োডার্মা পাউডার পেস্ট আকারে মিশিয়ে নিতে হবে।

Exit mobile version