মোঃ মোশারফ হোসেন, নকলা (শেরপুর) :
শেরপুরের নকলা উপজেলা কৃষি অফিসের ২০১৬ সালের সিটিজেন চার্টার অনুসারে নকলায় ৪ হাজার ১২০টি পুকুর আছে, তাছাড়া উপজেলার ১১টি বিল আস্তে আস্তে নাব্যতা হারানোতে সেসব বিলেও অনেক পুকুর খনন করা হয়েছে। তাছাড়া ৯টি জল মহাল, ১ হাজার ৬৬৫ হেক্টর নিচু ও ৪ হাজার ৩৫৫ হেক্টর মাঝারি নিচু জমি রয়েছে। ওইসব জমিতে এবছর কমপক্ষে আরও ৮০০ টি পুকুর খনন করা হয়েছে। সরজমিনে দেখাগেছে, প্রায় প্রতিটি পুকুর পাড়ে শাক সবজি ও ফলের বাগান গড়ে উঠেছে।
শাক সবজি এবং কম উচ্চতা বিশিষ্ট ও স্বল্পকালীন ফলের গাছে পুকুরে চাষকরা মাছের কোন ক্ষতি করেনা, বরং পাড় ভাঙ্গন রোধ হয়। তাছাড়া পুকুরের পানিতে মাছ চাষ এবং পাড়ে শাক সবজি ও ফলের বগানে সার বছর নিরাপদ পুষ্টি পাওয়া যায়। এসব বিবেচনায় উপজেলার বানেশ্বরদী গ্রামের ঔষধ ব্যবসায়ী খন্দকার সুলতান আহমেদ ও তার ছোট ভাই খন্দকার জসিম উদ্দিন মিন্টু দুইজনে মিলে দুইটি পুকুর পাড়ে ২৫০টি উচ্চ ফলনশীল পেঁপে চারা ও বিভিন্ন শাক সবজি চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। নামে মাত্র শ্রমে ও অল্প পুঁজিতে এক সাথে মাছ ও শাক সবজি চাষ এবং ফলের বাগানে লাভবান হওয়ায় বিভিন্ন এলাকার পুকুর মালিকরা পাড়ে শাক সবজি ও ফলের বাগান করার দিকে ঝুঁকছেন। উপজেলার অনেক কৃষক তাদের দুই ভাইয়ের কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন।
প্রথমে তারা ২০১৪ সালে ৬৫ শতাংশ জমিতে পুকুর খনন করে দেশীয় নানা প্রজাতির মাছ চাষ শুরু করলেও লাভ খুব কম হয়। ওই ব্লকে কর্মরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদের পরামর্শে ২০১৫ সালে পুকুরের পানিতে নিজে রেনু ফুটিয়ে মাছ চাষের পাশাপাশি পাড়ে শাক সবজি ও নিরাপদ দেশীয় ফল চাষ করেন। তাতে ওই বছর খরচ বাদে দেড়লক্ষাধিক টাকা লাভ হয়। ধান বা অন্যান্য শস্যের তুলনায় মাছ, সবজি ও পেঁপে চাষে লাভ বেশি হওয়ায় পরের বছর বাড়ির ভিতরে ৩৫ শতাংশ এবং ৬৫ শতাংশ পুকুরের পাশে আরও ৩০ শতাংশ জমিতে দুইটি পুকুর খনন করে সব পাড়ে পেঁপে গাছ রোপন করেন। মাছ ও পেঁপে চাষ হতে ২০১৬ সালে খরচ বাদে তাদের তিন লক্ষাধিক টাকা লাভ থাকে। লাভের টাকায় উন্নত জাতের দুইটি গাভী কিনেছেন। পুকুর, শাক সবজি ও পেঁপে বাগান এবং গাভীর পরিচর্চায় বেশ কয়েক জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্যমতে, পুকুর খনন, গাভী ক্রয়, শ্রমিক মজুরি, মাছের ও গাভীর খাদ্য, ঔষধ ক্রয়সহ সব মিলিয়ে প্রথম বছরে ৭ থেকে ৮ লক্ষ টাকা খরচ হয়। এখন পুকুর খনন ও গাভী ক্রয় খরচ না হওয়ায় বছরে তিন লক্ষ থেকে চার লক্ষ টাকা লাভ হচ্ছে। তবে এবছর পেঁপে পাতায় ছত্রাকের আক্রমণ বেশি হচ্ছে। তবে তারা নিয়মিত পরিচর্চা করছেন, আশা করছেন তাতে মারাত্মক কোন ক্ষতি হবেনা।
খন্দকার সুলতান জানান, আগামীতে তাদের সব জমিতে পুকুর খনন কর পাড়ে শাক সবজি ও ফলের বাগান করবেন। ভূরদী কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার সদস্য হেলাল, লালমাহমুদ, বেলাল, বেলায়েতসহ অনেরে সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা সবাই মিন্টুর কাছে পরামর্শ নিয়ে পুকুরে মাছ ও পাড়ে শাক সবজি বা পেঁপে বাগান করে লাভবান হয়েছেন। তাছাড়া পোলাদেশীর পাপ্পু মিয়া ২ একর জমিতে পুকুর পাড়ে সবজি চাষে সফলতা পেয়ে উপজেলায় মডেলে পরিণত হওয়ার পথে। এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর জানান, পুকুরের পানিতে মাছ চাষ এবং পাড়ে শাক সবজি ও ফলের বাগানের দিকে এলাকার বেকার যুবকরাই বেশি ঝুঁকছে। যে জমিতে ভালো কোন ফসল উৎপাদন স্বপ্নের বিষয় ছিলো সে জমিতে এখন সোনার দামের ন্যায় কৃষিপণ্য উৎপাদন হচ্ছে। তাদের সফলতা দেখে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবকরা উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুলতানা লায়লা তাসনিম বলেন, অবহেলিত জলাশয় বা পতিত জমিতে পুকুরের মাধ্যমে মাছ চাষের পাশাপাশি পাড়ে শাক সবজি ও ফলের বাগান বাড়াতে আমরা কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিচ্ছি।