– কৃষিবিদ মোঃ সিরাজুল ইসলাম
জনপ্রিয় সুগন্ধি মসলাজাতীয় বিরুৎ প্রকৃতির গাছ ‘পুদিনা’। পুদিনার সুগন্ধির কারণে বিভিন্ন মুখরোচক কাবাব, সলাদ, বোরহানি ও চাটনি তৈরিতে ব্যবহার হয়।পুদিনার সুগন্ধির কারণে বিভিন্ন মুখরোচক কাবাব,সলাদ,বোরহানিও চাটনি তৈরিতে ব্যবহার হয়। ভেষজ উদ্ভিদ পুদিনা পাতার আধুনিক চাষাবাদ কৌশল জেনে রাখা ভাল। কাঁচা পুদিনা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় চাটনী ও সালাদে। ইদানিং বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে টক দই এবং বোরহানী তৈরির জন্য পুদিনার ব্যবহার বাড়ছে। এছাড়া মাছ, মাংস, সস, স্যূপ, স্টু, চা, তামাক, শরবত ইত্যাদি পদ তৈরিতে পুদিনা পাতা ব্যবহার হয়। ইউরোপের দেশগুলোতে ভেড়ার মাংসের রোষ্ট ও মিন্ট জেলী তৈরিতে পুদিনা পাতা ব্যবহার হয়।
বিভিন্ন দেশে পুদিনার বেশি ব্যবহার হচ্ছে তেল তৈরিতে। পুদিনার গাছ থেকে প্রাপ্ত এই তেলের নাম ‘পিপারমেন্ট অয়েল’। এই তেল বেশ মূল্যবান। বিভিন্ন শিল্প বিশেষ করে ঔষধ, টুথপেষ্ট, মিন্ট চকলেট, ক্যান্ডি, চুউয়িংগাম ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ইত্যাদিতে এটি ব্যবহার হয়। কোনো কোনো ব্রান্ডের সিগারেটেও মেন্থল ব্যবহার হয়। তাই পুদিনা গাছের শিল্প মূল্য অনেক বেশি। পুদিনা পাতার তীব্র ঘ্রানের জন্য দায়ী উপাদান ‘মেন্থল ও মেন্থোন’। প্রতিবছর আমাদের বাংলাদেশে ১৮ টন কাঁচা পুদিনা পাতার চাহিদা রয়েছে। পুদিনা পাতার উপর ভিওি করে ‘পিপারমেন্ট ওয়েল শিল্প’ স্থাপন করে আর্থিক ভাবে লাভবান হওয়ার সাথে সাথে প্রচুর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হইতে পারে। প্রতিবেশি দেশ ভারতে প্রতি বছর ১০ টনের ও অধিক পিপার মেন্ট তেলের চাহিদা রয়েছে। হিসাব করে দেখা গেছে এই পরিমাণ তেল উৎপাদনের জন্য ১০ হাজার একর জমি প্রয়োজন। কিন্তু উৎপাদন অনেক কম হওয়ায় ভারতে প্রতি বছর কোটি টাকার পিপার মেন্ট তেল আমদানি করতে হয়। বাংলাদেশের অবস্থাও একই রকম। বাংলাদেশের বাজারে মূলত কাঁচা পুদিনার চাহিদাই বেশি।
বীরুৎ (অর্থাৎ খুবই ছোট আকারের) প্রকৃতির গাছ পুদিনা। কান্ড ও পাতা নরম। পাতা ডিম্বাকার, কিনারা খাঁজকাটা। পাতা রোমশ, তীব্র মিষ্ট গন্ধযুক্ত। গাছের উচ্চতা ৫০-৯০ সে.মি.। গাছের গোড়া হতে ধাবক বা রানার (জঁহহবৎ) বের হয়। গাছ দ্রুত বাড়ে ও ঝোপ তৈরি করে। এর জাপানি জাতটি চাষের জন্য ভাল। আমাদের দেশে যে পুদিনা চাষ হয় তার কোন ফল হয় না। সুদূর অতীত থেকে এ দেশে পুদিনা পাতা ব্যবহার হয়ে আসছে। একসময় ছিল যখন বাড়ির আঙ্গিনায় ২-৪ টা পুদিনা গাছ লাগিয়ে পরিবারের চাহিদা মিটানো হতো। কিন্তু এখন অবস্থা বদলে গেছে। শহরাঞ্চলে পুদিনার চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। পুদিনার চাষ এখন অন্যান্য ফসলের মতো বাণিজ্যিক ভাবে করার প্রয়োজনিয়তা দেখা দিয়েছে।
জমি ও চারা তৈরি ঃ
সারা বছরই পুদিনার চাষ করা যায়। তবে খরিপ মৌসুমে পুদিনার চাষ সবচেয়ে ভাল হয়। জৈবসার সমৃদ্ধ জমিতে কাটিং কলম লাগিয়ে শীতকালে সেচ নিশ্চিত করা গেলে সারা বছরই পুদিনার চাষ করা যায়। এটেল ও দো-আঁশ মাটিতে পুদিনা সফলভাবে চাষ করা যায়। জুন-জুলাই মাস পুদিনার কাটিং রোপনের উওম সময়। বীজ দিয়েও পুদিনার চারা করা যায়। কিন্তু কাটিং দিয়েই চাষ করা উওম। পুরানো ক্ষেত থেকে কাটিং নিয়ে বীজ তলায় বা হাপরে রোপন করতে হবে। কাটিং এর দৈর্ঘ্য হবে ১০ সে.মি.লম্বা। মূল জমিতে চারা রোপনের অন্তত ১০ দিন পূর্বে চারা তৈরি করতে হবে। কেননা কাটিং বা তেউড়গুলোতে শিকড় গজাতে মাত্র সাত(৭) দিন সময় লাগে। জমি ভাল করে চাষ করার সময় জমির সাথে প্রচুর পরিমাণে অর্থাৎ ১০-১৫ টন গোবর বা জৈব সার প্রতি হেক্টরে মিশিয়ে দিতে হবে।
সার প্রয়োগ: চারা তৈরির সময় মূল জমিতে সার প্রয়োগ করতে হবে। এ জন্য ৪৫ বর্গমিটার জমিতে প্রয়োজনীয় জৈব ও রাসায়নিক সারের পরিমাণ নিম্নে দেয়া হলো-
সারের নাম পরিমাণ
১. কম্পোস্ট সার বা গোবর
২. টি এস পি সার
৩. এম ও পি সার বা কাঠের ছাই
৪. হাড়ের গুড়া ২০ ঝুড়ি বা ২০০ কেজি
১-১.৫ কেজি
১ কেজি বা ৫ কেজি
৫ কেজি
উল্লেখিত সার মূল জমিতে বেড তৈরির সময় ভালভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। বেডে ৩০ সে.মি. পরপর কাটিং বা চারা রোপন করতে হবে। আগাছা, আবর্জনা ও অন্যান্য দৃশ্যমান বস্তু জমি থেকে অপসারন করতে হবে। সব সময় পুদিনার জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
ফসল সংগ্রহ ঃ গাছ লম্বা হতে শুরু করলে ১০ সে.মি. লম্বা কাটিং বা ডাল কেটে ১০-১৫টি শাখা একটি আঁটিতে বেঁধে বাজারে বিক্রি করার জন্য পাঠানো হবে। প্রতি ২ বার ফসল তোলার পর এক কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে প্রতি মাসে উক্ত সার দিয়ে ফসল তুলতে হবে। সারা বছর পুদিনা চাষ করে ফসল তোলা যাবে।
কৃষির আরো খবর জানতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিনঃকৃষিসংবাদ.কম