সজনার সাতকাহন
কামরুল ইসলাম মাসুদ
সজনার সাতকাহন ঃ সাজনা বা সজিনা নিয়া ইদানিং খুব কথা হচ্ছে। কেউ বলছে পুষ্টির ডিনামাইট আবার কেউ বলছে ৩০০ রোগের প্রতিষেধক হিসাবে কাজ করে কিংবা উপকারে আসে। এই নিয়া বিস্তর আলোচনা। আলোচকরা দেখাতে চাইছেন সাজনা গাছের কোন কিছুই ফেলনা নয়। সাজনা যেমন মানুষের খাদ্য তালিকাতে সব্জী হিসাবে পছন্দের তালিকাতে প্রথম দিকে আবার ইদানিং পশুখাদ্যের উৎস হিসাবেও ইদানিং দেখা হচ্ছে। সাজনা বা সজিনার উৎপত্তি স্থল হিসাবে আফ্রিকা মহাদেশ এবং ভারত এর অন্যতম প্রধান চাষ স্থল।
উপরে বর্ণিত ভুমিকা শুধুমাত্র আলোচনার সুবিধার জন্য অবতারনা। আমি কোন বিশেষজ্ঞ নই তাই এর মেডিসিনাল ভ্যালু বিশ্লেষন করব না আসলে সেই সক্ষমতাও আমার নাই। আমি কোন কৃষিবিদ (agriculturist) নই তাই এই চাষের খুব গভীরে যাওয়াও আমার পক্ষে সম্ভব না। তবুও নিজে একটি সজিনা বাগান করার ইচ্ছাতে ইন্টারনেট থেকে কিছু পাওয়ার চেষ্টা করলাম এবং তার কিছু অংশ আপনাদের সাথে শেয়ার করার ইচ্ছাতে আজ আমি সজিনা বা সাজনার জাত পরিচিতি নিয়া সংক্ষেপে কিছু লিখছি।
সজনার সাতকাহন ঃ সজনা বা সজিনাকে আমরা দুটি ভাগে ভাগ করতে পারি। ১ঃ দেশী জাত এবং ২ঃ বিদেশী জাত।
১ঃ দেশী জাতঃ আমাদের আশেপাশে যে জাতটি দেখা যায় সেটিকেই আমরা দেশী সজনা হিসাবে চিনি। এই সজনা গাছগুলিতে সাধারনত ২ থেকে ২.৫ বৎসরে ফুল আসে এবং ফুল আসার ৬০-৯০ দিনের মধ্যে ফল তোলার উপযুক্ত হয় এবং সাধারণতঃ বৎসরে একবার ফল দেয়। আমাদের দেশে সাধারনতঃ ডালের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে থাকে। সাধারনতঃ বাড়ীর আশেপাশে দুই এক্টি গাছে অযত্নে অবহেলাতে বেড়ে উঠতে দেখা যায়। কেউ কোন দিন এই গাছগুলিতে সঠিক ভাবে যত্ন নিয়েছেন এমন দেখিনি।
বারি ১ বারমাসী সজনাঃ অতি সম্প্রতি বারি ১ নামে এক্টি উচ্চ ফলনশীল জাত উম্মুক্ত করা হয়েছে যা বৎসরে ৯ মাস ফল দিবে বলে দাবী করা হচ্ছে যদিও বানিজ্যিকভাবে এখন পর্যন্ত কেউ এর চাষ করেনি।
বিদেশী জাতঃ আফ্রিকা এবং ভারতে সাজনা বা সজিনার অনেকগুলি জাত বানিজ্যিকভাবে চাষাবাদ তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-
pnm 1: এ-ই জাতটি ভারতের প্যারিয়াকুলাম হরটিকালচার কলেজ এবং তামিলনাড়ু এগ্রিকালচারাল ইউনিভারসিটি যুগ্ন (jointly) ভাবে ১৯৮৯ সালে উম্মুক্ত করে। এ-ই জাতটি ত্রিনালভ্যালী ( tirunelveli) অঞ্চলে ৬ জেনারেশন চাষ করার পর এর বৈশিষ্ট সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর এ-ই জাতটি রিলিজ করেছে। এটি একটি উচ্চ ফলনশীল জাত এবং ৮-৯ মাসে ফুল আসে যদি সঠিকভাবে যত্ন নেওয়া হয়। একবার বাগান করলে ৩-৪ বৎসর এ থেকে পাতা, কাটিং এবং সজিনা পাওয়া যায়।
PKK 2: এ-ই জাতটি mp31 (eppothum vend ran local) এবং mp28 ( arasaradi local) জাতের ক্রস করা হাইব্রীড জাত। এ-ই জাতটি চারা করার ৬-৯ মাসের মধ্যে ফুল আসে সঠিক যত্নে। এটা প্রায় ১২ মাস ই লাগানো যায়। এই গাছের কোন কোন সজনা প্রায় ৪ ফুট এবং উজনে ২৭৫ থেকে ৩০০ গ্রাম হতে দেখা যায়। এ-ই জাতের সজনাতে ৭০ ভাগ মাংস থাকে। একটি গাছে বৎসরে ২০০-২২০ টি এবং ১ একর জমিতে প্রায় ৪০ টন সজনা পাওয়া যেতে পারে। এই জাতটি সাইলেজ, সজিনার তেল কিংবা পাউডার এর জন্য খুবই উপযোগী।
Odc/ odc 3: এই জাতটি প্রথম ২০১২ সালে চাষাবাদ শুরু হলেও ২০১৭ সালে রিলিজ করা হয়। এই জাতটি খাবার সজিনা হিসাবে খুবই ভাল। সঠিক যত্নে ৬-৮ মাসে এতে ফুল এবং ফল আসে। একেকটি ফল ১.৫-২.৫ ফুট লম্বা এবং ৭০-৮০ গ্রাম ওজন হয় যা সব্জী হিসাবে বিক্রির জন্য খুব ই উপযোগী। এই জাতের সজিনাতে ৮০% মাংস থাকে এবং এই জাত সব্জী হিসাবে খুব টেষ্টি। একটি পূর্ণ বয়স্ক গাছে ৩০০ পর্যন্ত সজিনা এবং ১ একরে ২০ টন ফলন পাওয়া যেতে পারে।
pkl1, pkm 2 এবং odc/odc3 ছাড়াও আরো যে উল্ল্যেখ যোগ্য জাতগুলি আছে সেগুলি হলঃ ভাগিয়া, রুহিত ১, pavm. এইজাত গুলিও ভাল জাত হিসাবে পরিচিত।