পেয়ারা যতগুন

পেয়ারা যতগুন

 

Guava fruit

ড. সালমা লাইজুঃ

আকর্ষনীয় বাংলার আপেল পেয়ারা। অল্প সময়ে ফল আসে, রোগ বালাই কম যেখানে সেখানে চাষ করা যায়। আমাদের দেশের অপুষ্ট জনগোষ্ঠীর অপুষ্টি দুর করতে পারে পেয়ারা। জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ মাটিতে কলমের গাছ সার্থক ভাবে চাষ করা সম্ভব। ছোট বড় সবার প্রিয় পেয়ারাতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন-সি ১০০ গ্রাম খাবার যোগ্য পেয়ারাতে ভিটামিন- সি থেকে ২১০-২৫০ গ্রাম। এছাড়াও শর্করা, প্রোটিন, ভিটামিন-বি, ক্যালশিয়াম, পাটাশিয়াম, ফলিক এসিড উল্লেখযোগ্য। পেয়ারাতে প্রচুর পেকটিন থাকে বলে কাচা ফল অথবা রস দিয়ে জ্যাম জেলী করা যায়। পেয়ারার অনেক ঔষধী গুন রয়েছে।

১০০ গ্রাম পেয়ারা পুষ্টি উপাদান
পানি ৮০% ভিটামিন-বি-১ ০.০৫ গ্রাম
আমিষ ১% ভিটামিন-বি-২ ০.০৩ গ্রাম
শ্বেতসার ¯েœহ ১১% ভিটামিন-সি ২৫০ গ্রাম
কর্মশক্তি ৫০ কিলো ক্যালোরি ক্যালশিয়াম ১৭ গ্রাম
ভিটামিন-এ ১২ মাইক্রোগ্রাম রেটিনল সমতুল্য লৌহ ১.৮ গ্রাম

পেয়ারা পৃথিবীর অনেক দেশেই জন্মে। এটি এশিয়ার ফল। বাংলাদেশের সর্বত্র পেয়ারার চাষ হয়। পেয়ারা সুস্বাদু ফল। সব বয়সের মানুষ পেয়ারা পছন্দ করে। ডায়রিয়া, আমাশয়, কফ, ঠান্ডা, চর্মের যতেœ, উচ্চ রক্তচাপে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। এটি নাসপাতি আকৃতির মৌসুমী ফল, এখন সারা বছর ফলে। আয়ুবেদীয় মতে বছরে কিছু পেয়ারা খেলে সার বছর রোগ দুরে থাকবে। বিভিন্ন ফলে যেমন ক্যামিক্যাল দেওয়া হচ্ছে তখন পেয়ার ক্যামিক্যাল মুক্ত। পেয়ারার অনেক গুন আছে- পেয়ারা ডায়াবেটিস এবং প্রোটেষ্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। পেয়ারার পাতা দাতের মাড়ীর যতেœ ব্যবহার হয়। মাড়ী ফুলে যাওয়া , মুখে আলসার, ব্যাকটেরিয়া জনিত ক্ষতে পেয়ারা উপাকারী। পেয়ারাতে প্রোটিন, ভিটামিন এবং ফাইবার আছে। এতে কোন কোলেষ্টোরল নাই এবং হজমযোগ্য কার্বোহাইড্রেট রয়েছে।
উচ্চরক্ত চাপঃ পেয়ারা রক্তের কোলেষ্টোরলের মাত্রা কমায় এবং উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে ফেলে পেয়ারাতে প্রচুর ফাইবার আছে যা শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে।
ক্যান্সারের ঝুকি কমেয়ঃ পেয়ারায় রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, পেয়ারার পালিফেনল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে যা ক্যান্সারের ঝুকি কমে।
গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখেঃ পেয়ারাতে ফাইবার বেশি, গ্লাহসেমিক ইনডেক্স কম, ফলে রক্তে শর্করা মাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখে পেয়ারা, ডায়াবেটিস রোগীরা পেয়ারা খেলে তাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখে।
হার্ট সুস্থ্য রাখেঃ শরীরের সোডিয়াম, পটাশিয়াম ব্যালান্স ঠিক রাখে, কোলেস্টোরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড মাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখে পেয়ারা, ফলে হার্ট সুস্থ্য রাখে। পেয়ারা ফাইবার কোষ্ট কাঠিন্য দুর করে।
চোখের দৃষ্টি বৃদ্ধিঃ পেয়ারাতে গাজরের মত খুব বেশী না হলেও ভিটামিন এ রয়েছে যা চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
মতিস্কের শক্তি বৃদ্ধি করেঃ পেয়ারাতে আছে ভিটামিন বি-৩, বি৬, বি৯ এবং ফলিক এসিড যা গর্ভস্থ ভ্রুনে শিশুর ¯œায়ুর বিকাশে সাহায্য করে। মস্তিস্কের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে ফলে মস্তিষ্ক সচল থাকে।

কফ নিঃসরণে সাহায্য করেঃ পেয়ারতে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে যা গলা এবং ফুসফুসে জমে থাকা কফ নিঃসরণে সাহয্য করে। শ্বাসকষ্টের যারা ভোগেন তারা নিয়মিত পেয়ারা খেলে তাদের অনেক উপকার হবে।
ওজন কমায়ঃ পেয়ারা আপেল, আঙ্গুর ও কমলার চেয়ে গ্লুকোজের মাত্রা কম সেজন্য পেয়ারা শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে।
মুখের যত্নেঃ শুধু পেয়ারা নয় পেয়ারার পাতাও মানুষের শরীরের জন্য উপকারী, পেয়ারার পাতা দাতের পরিচর্যায় মহৌষধ, কচি পেয়ারার পাতা চিবিয়ে দাত মাজলে দাতের মাড়ী ফোলা, আলসার, দাত ব্যাথায় অত্যান্ত উপকারী। পেয়ারার পাতায় অ্যান্টি প্লাগ গুনাবলীঃ ৫/৬ টি পেয়ারার পাতার নির্যাস, ঠান্ডা করে কুলকুচি করলে “মাউথ ওয়াশের” মত কাজ করে। মুখের দূর্গন্ধ দুরসহ দাতের ক্ষত সারায়। প্রতিদিন ৫/৭ টি কচি পেয়ারার পাতার রস পান করলে বুকে জমে থাকা কফ নিঃসরণে ভীষন উপকারী।
হার্টকে সুস্থ্য রাখেঃ ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত জার্মানে হিউম্যান হাইপারটেনশন থেকে জানা যায় পেয়ারা খেলে রক্তের প্রেসার এবং রক্তের লিপিডের পরিমান কমে যায়, পেয়ারাতে প্রচুর কে, ভিটামিন-সি এবং দ্রবনীয় ফাইবার রয়েছে। কে মানুষের হৃদযন্ত্রেকে সঠিক স্পন্দন দেয় এবং উচ্চচাপ নিয়ন্ত্রন করে। ভিটামিন সি ছোট রক্তের ভেসেলকে স্বাস্থ্যবান করে। যে সকল পেয়ারার মধ্যে গোলাপী রং আছে সেগুলি নিয়মিত খেলে কার্ডিওভাস্কুলাকার রোগ দমন করে। পেয়ারার পাতা চূর্ণ গরম পানিতে দিয়ে পান করলে রক্তের কোলেস্টোরল কমায়। কম ঘনত্বের লিপোপ্রোটিন যা খারাপ কোলেষ্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড কমায়, এটি হার্ট এবং ভাস্কুলার সিষ্টেমকে শক্তিশালী রাখে।
ডায়রিয়াঃ পেয়ারা পাতা সেচা ডায়রিয়ার ব্যাকটেরিয়াকে অকার্যকর করে। পেয়ারা পাতার নির্যাস ষ্টেফাইলো কক্বাস অ্যাউরিয়াস ব্যাকটেরিয়া নষ্ট করে। ডায়রিয়ার সময় কচি পেয়ারার পাতার রস কিছুক্ষন পরপর সেবন করলে ডায়রিয়া উপকার হয়। এই রস পায়খানা কমায়, তলপেটের ব্যাথা এবং পাতলা পায়খানা নিয়ন্ত্রন করে দ্রুত আরোগ্য দেয়। পেয়ারা হজমের জন্য খুবই উপকারী এর এ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুনাবলী পরিস্কার অন্ত্রকে পরিস্কার করে। ব্যাকটেরিয়াল এবং মাইক্রোরিয়াল বৃদ্ধিকে কমায় এবং ফাইবার হজমে সাহায্য করে।
ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রন করেঃ চীনে পেয়ারা ডায়বেটিসের ঔষধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। ১৯৮৩ সালে চাইনিস জার্মান যা আমেরিকাতে প্রকাশিত হয়েছিল সেখানে বলা হয়েছে হাইপোগ্লাইসেমিক প্রভাবের কারণে পেয়ারার রস ডায়বেটিস মিলিটাসের জন্য কার্যকরী। উচ্চমাত্রার আশ এবং কম গ্লাইসেমিক ইনডেপ্রের জন্য ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী ফাইবার চিনির মাত্রাকে নিয়ন্ত্রন করে। কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের জন্য চিনির মাত্রাকে নিয়ন্ত্রন করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ এ্যান্টিক্যান্সার এবং অ্যান্টি টিউমার গুনাবলী যেমন লাইকোপেন,কিউয়ারসিটিন ভিটামিন সি এবং বিভিন্ন পলিফেনল থাকার কারণে ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে থাকে। ২০১০ সালে প্রকাশিক নিউট্রিশন এবং ক্যান্সার জার্নালে গবেষকরা দেখিয়েছে। পেয়ারা ক্যান্সারের টিউমার গঠনে বাধা দেয়।
ক্স পেয়ারার পাতার নির্যাস হালকা গরম অবস্থায় ব্যাবহার করলে মহিলাদের ভ্যাইনাইটিস রোগের উপকার হয়।
ক্স পেয়ারা আমাদের কাছের গাছ, একটু যত্নে এ ফল আমরা পেতে পারি।

কৃষির আরো খবর জানতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিনঃকৃষিসংবাদ.কম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *