মো. আব্দুর
দেশের কৃষি শিক্ষার অন্যতম প্রাঙ্গন প্রকৃিতকন্যা খ্যাত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)। দেশের কৃষি ও কৃষকের উন্নয়ন এবং কৃষি খাতের আধুনিকায়নে বাকৃবির অবদান সবার আগে। ১৯৬১ সাল থেকে শুরু করে আজ অবধি বিভিন্ন গবেষণায় তারা পেয়েছে যুগান্তকারী সাফল্য। যার ফলে দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় একটি পরিচিত নাম, পরিচিত শিক্ষাঙ্গন, পরিচিত গবেষনাগার। বাকৃবির ক্যাম্পাসের শিক্ষাদিক্ষা ও গবেষণায় যেমন সুনাম রয়েছে, সেই সুনামকে আরও ব্যাতিক্রমধর্মী করেছে এর কিছু স্থাপনা, যেগুলা দেশসহ আন্তর্জাতিক বিশ্বেও প্রায় বিরল। এগুলো হচ্ছে কৃষি জাদুঘর, মৎস্য জাদুঘর, জার্মপ্লাজম সেন্টার এবং আন্তর্জাতিক মানের বোটানিক্যাল গার্ডেন।
কৃষি জাদুঘর:
বাংলাদেশের একমাত্র সমৃদ্ধ কৃষি জাদুঘর অবস্থিত বাকৃবি ক্যাম্পাসে যা বাংলাদেশের অন্য কোথাও নেই। এখানে প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র সম্পন্ন বিভিন্ন নিদর্শন মমি করে রাখা হয়েছে। সংরক্ষন করা হয়েছে প্রাচীন কাল থেকে শুরু করে অধ্যাবধি ব্যবহারিত আধুনিক কৃষি যন্ত্র সামগ্রী। আরও সংরক্ষন করা হয়েছে বিভিন্ন ফসলের বীজ এবং কৃষি খেতের বিভিন্ন কীটপতঙ্গ। এখানে ফুটিয়ে তুলা হয়েছে গ্রাম বাংলার চিরচারিত বৈচিত্র্য পরিবেশ, যেখানে গিয়ে আপনি ক্ষনিকের জন্য হলেও হারিয়ে যাবেন গ্রাম্য পরিবেশের স্মৃতিতে।
মৎস্য জাদুঘর:
বাংলাদেশের একমাত্র এবং দক্ষিন-এশিয়ার সর্ববৃহৎ মৎস্য জাদুঘর অবস্থিত প্রকৃিত কন্যা খ্যাত এই বাকৃবি ক্যাম্পাসের গন্ডিতেই। দ্বিতল ভবন বিশিষ্ঠ জাদুঘরটিতে সংরক্ষন করা হয়েছে দেশীয় স্বাদু পানির এবং সামুদ্রিক মাছ। বাংলাদেশের ২৯৩ প্রজাতির মাছের মধ্যে প্রায় ২৪৫ প্রজাতি সংগ্রহ করা হয়েছে। মাছের নমুনাগুলো বিভিন্ন আকৃতির কাচের সিলিন্ডারে ফরমালিনের মাধ্যমে সংরক্ষন করে রাখা হয়েছে এবং মাছ সম্পর্কিত সকল তথ্য সিরিন্ডারের সাথে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এছাড়া হাঙ্গর, ডলফিন ও কুমির কঙ্কালসহ বিভিন্ন প্রকার কচ্ছপ ও কাকড়ার নমুনাও রয়েছে এখানে। রয়েছে ক্যাটফিস, ঘুড়ামোখা, পুটাকাস্তি জাতীয় বিলুপ্ত মাছ। অন্য একটি কক্ষে দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে থ্রিডি অডিও-ভিজুয়াল সুবিধা। জাদুঘরটিতে প্রায় ৪০ টি জিবাশ্ম ও কঙ্কাল সংগৃহীত রয়েছে। এছাড়া ৪৫৭ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ সংগ্রহের কাজ চলছে। অ্যাকুরিয়ামে রাখা হযেছে দুষ্প্রাপ্য ও সৌন্দয্যবর্ধক মাছ। জাদুগরটির করিডোরে রাখা হয়েছে আবহমানকাল ধরে চলে আসা জেলেদের মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণ ও যন্ত্র সামগ্রী।
জার্মপ্লাজম সেন্টার:
বাংলাদেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধ এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জার্মপ্লাজম সেন্টার অবস্থিত এই শ্যামল ক্যাম্পাসেই। এ যেন এক জীবন্ত ফল ঘর। ২২ একর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠা এই জার্মপ্লাজম সেন্টারে রয়েছে ১৬৩ প্রজাতির ১০ হাজার দেশি বিদেশী ফলের মাতৃগাছ। এর মধ্যে ১৬২ রকমের আম, ৪৪ রকমের পেয়ারা, ৪৮ রকমের লেবু, ২৩ রকমের লিচু, ৯৪ রকমের কাঁঠাল, ৬৭ প্রজাতির বিলুপ্ত প্রায় ফল, ৬৮ প্রজাতির ঔষধি ও ১৯ টি দেশ থেকে সংগৃহিত ৪২ প্রজাতির ফল। বাংলাদেশের উদ্ভাবিত নতুন নতুন প্রজাতির ফলের সিংহভাগ আবিষ্কৃত হয়েছে এই জার্মপ্লাজম সেন্টারেই। জার্মপ্লাজম সেন্টারের পরিচালক ড.আব্দুর রহিম স্যারের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ২২ বছরের ইতিহাসে ৬৭ জাতের নতুন ফলের জাত আবিষ্কৃত হয়েছে থাইল্যান্ডরে অর্থায়নে পরিচালিত বাকৃবির এই জার্মপ্লাজম সেন্টার থেকে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন একটি আন্তর্জাতিক মানের বোটানিক্যাল গার্ডেন। কৃষি অনুষদেও ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধিনে পরিচালিত গার্ডেনটির আয়তন প্রায় ২৫ একর। এখানে সুন্দরবন, ক্যাকটাস ও ঔষধী জোন সহ মোট ৫৩ জোনের অধিনে প্রায় ৫৫৮ টি প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। বোটানিক্যাল গার্ডেনটির একটি অন্যতম সংরক্ষন হচ্ছে তালিপাম নামক উদ্ভিদ। এখানে রয়েছে ৭ টি তালিপাম চারা গাছ, যা বন্য পরিবেশে বিলুপ্ত বলে ঘোষণা করা হয়েছে। বোটানিক্যাল গার্ডেনর সহকারী কিউরেটর জানান, প্রজাতির দিক দিয়ে এটি দেশের এক নম্বর বোটানিক্যাল গার্ডেন।
এই স্থাপনা গুলো ছাড়াও ক্যাম্পাস চত্বরে রয়েছে, বাংলাদেশ পরমানু কৃষি গবষেণা ইনস্টিটের প্রধান শাখা, বাংলাদেশ স্বাদু পানির মৎস্য ইনস্টিউট। দেশের একমাত্র নদ ব্রক্ষ্মপুত্র, যা ক্যাম্পাস চত্বরকে ঘেষেই বয়ে গেছে । তাছাড়া শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তন, স্বাধীনতার স্বারক বিজয়’৭১, মরণ সাগর, শহীদ মিনারসহ বিভিন্ন ভাস্কর্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে অসাধারন সাজে সজ্জিত করেছে। ক্যাম্পাসের বিশালতা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও বিরল স্থাপনার অধিকারী এ ক্যাম্পাসকে, ক্যাম্পাসের পাশাপাশি দর্শনীয় স্থান বললেও ভুল হবেনা।