Site icon

ফসলের ক্ষতিকর পোকা ‘কাটওয়ার্ম’ : বিষ মুক্ত ফসল উৎপাদনে জৈব ব্যবস্থাপনা

ফসলের ক্ষতিকর পোকা

কৃষিবিদ নিয়াজ মোর্শেদ

ফসলের ক্ষতিকর পোকা ঃ “স্পোডোপটেরা লিটুউরা” “নকটুইডি” পরিবারের মথ জাতীয় পোকা। ইহা “টোব্যাকো কাটওয়ার্ম” বা “কটন লিফওয়ার্ম” নামেও পরিচিত। তামাক ও তুলা ছাড়াও পোকাটি কচু, মরিচ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, সয়াবিন, বিট, সিম, বাদাম ইত্যাদি সহ প্রায় ৮৭ প্রজাতির ১১২ টি ফসলে খরিফ-১,২ এবং রবি সিজনে উল্লেখযোগ্য হারে সারা বছর ব্যাপী আক্রমন করে থাকে। পূর্ণাঙ্গ পোকা কোনো ক্ষতি না করলেও এর লার্ভা/কীড়া ফসলের পাতা, ফল ও অন্যান্য নরম অংশ খেয়ে ফসলের ক্ষতি করে থাকে। একটি পূর্ণাঙ্গ স্ত্রী পোকা প্রায় ২০০০-২৫০০ ডিম পাড়ে। এই পরিমাণ ডিম থেকে উৎপন্ন কীড়া যদি ফসলের মাঠে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে শতভাগ ফসল বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা কঠিন কিছু নয়। তাই পূর্ণাঙ্গ ও সফল ভাবে এই পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা করতে প্রয়োজন পুনাঙ্গ পোকা, ডিম ও কীড়া বিনষ্টকারী বালাইনাশক।

 অপরদিকে, রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করে এই পোকা দমনে সাময়িক স্বস্তি পাওয়া গেলেও রাসায়নিক কীটনাশকের প্রতি খুব দ্রুত রেজিস্টেন্স হয়ে পড়ায় অদূর ভবিষ্যতে মারাত্মক ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে পোকাটি। তাই প্রয়োজন সঠিক সময়ে “সাশ্রয়ী, কার্যকর ও বিশ্বস্ত জৈব দমন ব্যবস্থা”।

একদিকে, রাসায়নিক কীটনাশক ব্যাহারের ফলে জীব-বৈচিত্রের বিপর্যয় (যা তৈরি করতে পারে মানুষ বসবাসের অযোগ্য পৃথিবী), ভিবিন্ন প্রকার রোগ-বালাই, জেনারেশন গ্যাপের মত মারাত্মক সব ইস্যু সামনে চলে আসে। পাশাপাশি, বিষ যুক্ত পুষ্টিকর খাবার খেয়েও অপুষ্টিতে ভুগতে থাকে মানুষ ও অন্যান্য জীব।

তাই নিরাপদ পুষ্টি যুক্ত খাদ্য উৎপাদন ও কার্যকর পোকা দমনে “জৈব বালাইনাশকে”র বিকল্প নাই।

বাংলাদেশে “স্পোডোপটেরা লিটুউরা” পোকা টি দমনে সাশ্রয়ী, কার্যকর ও বিশ্বস্ত জৈব দমন ব্যবস্থার প্রয়োজনীয় সব উপাদান বাজার জাত করছে দেশের একমাত্র শতভাগ জৈব বালাইনাশক বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান “ইস্পাহানি এগ্রো লিমিটেড”।

ডিম ধ্বংস কারী বন্ধু পোকা “ট্রাইকোগ্রামা, কীড়া ধ্বংস কারী বন্ধু পোকা “ব্রাকন হেবিটর”, পূর্ণাঙ্গ পোকা দমনে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ “স্পোডো-লিউর” এবং কীড়া ধ্বংস কারী সব থেকে কার্যকর, বিশ্বস্ত ও অটো রিনিউয়াবল “স্পোডো-এনপিভি” (নিউক্লিয়ার পলিহেডরোসিস ভাইরাস) পাওয়া যাচ্ছে দেশের সর্বত্র ইস্পাহানি এগ্রো লিমিটেডের ডিলার পয়েন্টে।

প্রয়োগ মাত্রা ও প্রয়োগ বিধি:

০.২৫ গ্রাম ভায়াল থেকে ১০০০০ পূর্ণাঙ্গ ট্রাইকোগ্রামা জন্ম নেয়। ১.৫ × ২ সাইজের কাগজ কেটে ৭৫০ টি পেপার চকলেট তৈরি করে একটি বালতিতে নিয়ে তার মধ্যে ট্রাইকোগ্রামা ঢেলে ১ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে। পরবর্তীতে উক্ত পেপার চকলেট গুলো ৫-৬ ধাপ পর পর স্পোডোপটেরা লিটুউরা আক্রান্ত জমির ফসলের ডাল বা পাতায় আটকে দিতে হবে। ৭৫০ টি পেপার চকলেট দিয়ে ট্রাইকোগ্রামা প্রায় ১ হেক্টর জমিতে প্রয়োগ করা যায়।

৮০০-১০০০ ব্রাকন হেবিটর সমৃদ্ধ প্লাস্টিকের কৌটার মুখ খুলে হাতের তালু দিয়ে বন্ধ করে জমির এক পাশ থেকে অন্য পাশে হেটে হেটে ব্রাকন হেবিটর জমিতে অবমুক্ত করতে হবে। ১ হেক্টর জমির জন্য ১ টি কৌটা প্রযোজ্য।

প্রতি ৬ শতাংশ জমির জন্য ১ টি স্পোডো-লিউর সেক্স ফেরোমন ফাঁদ মাঠে চারা লাগানোর ১ সপ্তাহের মধ্যে ব্যবহার করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যে ফেরোমন ফাঁদের লিউর যেনো পানিতে না ভিজে এবং ফাঁদের সাবান মিশ্রিত পানি ৭ দিন পর পর পরিবর্তন করতে হবে।

ফেরোমন ফাঁদ স্থাপিত মাঠে ফাঁদে ৪-৫ টি পোকা ধরা পড়লে দেরি না করে স্পোডো-এনপিভি প্রয়োগ করতে হবে। প্রতি ১৬ লিটার পানিতে ৩ গ্রাম স্পোডো-এনপিভি জৈব বালাইনাশক মিশিয়ে ৭ দিনের ব্যবধানে দুই বার জমিতে স্প্রে করতে হবে। প্রথমে ৩ গ্রাম স্পোডো-এনপিভি একটি পরিষ্কার গ্লাসে নিয়ে ভালোভাবে পানিতে মিশাতে হবে। পরবর্তীতে উক্ত পানি স্প্রে মেশিনে নিয়ে পরিমান মত পানি যোগ করে স্প্রে করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যে পাতার উভয় পৃষ্ঠ যেনো ভালো ভাবে ভিজে এবং অবশ্যই পড়ন্ত বিকেলে স্প্রে করতে হবে।

“বিশ্বস্ত জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করে শতভাগ পোকা দমন করুন, বিষ মুক্ত, নিরাপদ পুষ্টির খাদ্য উৎপাদন করে নিজের পরিবার ও জাতিকে বিষ মুক্ত রাখুন।”

Exit mobile version