বকুল হাসান খান
বালাই নিয়ন্ত্রণে তুঁতে চুনের মিশ্রণ
আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের কপার যৌগ ছত্রাকনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এগুলোর মধ্যে কপার সালফেট (তুঁত) ও চুন (হাইড্রেটেড লাইম) এর মিশ্রণ যা বোর্দো মিশ্রণ হিসেবে পরিচিত তা বহুল ব্যবহৃত। এটি জৈব খামার বা জৈব বাগানের কাজে ব্যবহার করা যায়, তবে লক্ষ্য রাখতে হয়, ঘনঘন বা বেশি পরিমাণে প্রয়োগ করলে মাটিতে নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে অধিক পরিমাণে কপার জমা হচ্ছে কি না। যদি হয় তাহলে তা মাটির স্বাভাবিক কাজে বা মাটির উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। প্রথমে প্লাস্টিকের বালতি বা গামলায় ১০ চা চামচ চুন নিয়ে তাতে ধীরে ধীরে ২ লিটার পানি যোগ করতে হয়। এরপর আরো ২ লিটার পানি যোগ করতে হয় বা আগেও এক সঙ্গে ৪ লিটার পানি নেয়া যায়। চুন যোগ করার কিছুক্ষণ পর সাড়ে তিন চা চামচ পরিমাণ তুঁত চুনের পানির মিশ্রণে যোগ করে নাড়নকাঠি দিয়ে ভালোভাবে ধীরে ধীরে নাড়তে হয় সম্পূর্ণ গলে না যাওয়া পর্যন্ত। মিশ্রণ যেন কোনোভাবেই শরীরের সংস্পর্শে না আসে বা না লাগে সেদিকে লক্ষ্য রেখে সাবধান থাকতে হয়। মিশ্রণটি ছেঁকে নিলে স্প্রের জন্য তৈরি হয়ে যায়।
শুষ্ক রৌদ্রজ্জ্বল দিনে সকাল বেলায় এটি স্প্রে করতে হয়। এ সময় স্প্রে করলে গাছ ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়; কিন্তু মিশ্রণটি পাতার ভেতর ঢুকতে পারে না। স্প্রে করার আগে এবং স্প্রে করার সময় মিশ্রণটি বারবার নাড়তে হয় এজন্য যে, এটি যেন জমাট বেঁধে না যায়। এই তুঁতে-চুন মিশ্রণ দিয়ে যেসব রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- টমেটো ও আলুর ফ্লি বিটল, ফল ও সবজির পাতার এনথ্রাকনোজ, সবজির ব্যাকটেরিয়াজনিত ঢলে পড়া রোগ, ব্যাকটেরিয়াজনিত পাতা ঝলসানো রোগ, পাতার কালো দাগ, ডাউনি মিলডিউ, পাউডারি মিলডিউ বা সাদা গুঁড়া রোগ, পাতার মরিচা রোগ, সোলানেসি পরিবারের (বেগুন, টমেটো, আলু) মড়ক বা ব্লাইট রোগ এবং বিভিন্ন রোগজীবাণু দ্বারা সংক্রমিত পাতার রোগ।
তুঁতে-চুন মিশ্রণ স্প্রে করার পর নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হয়। গাছে কোনোরূপ বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় কি না তা দেখার জন্য। সে জন্য প্রথমে আক্রান্ত অল্পসংখ্যক গাছে স্প্রে করতে হয়। ফলাফল ভালো হলে পুরো ক্ষেতে প্রয়োগ করতে হয়। স্প্রে অবশ্যই সকালের দিকে করা ভালো। খাবার তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয় এমন কোনো পাত্র এই মিশ্রণ তৈরির কাজে ব্যবহার করা উচিত নয়। মিশ্রণ তৈরি ও ব্যবহার শেষে পাত্রটি সঙ্গে সঙ্গে ধুয়ে পরিষ্কার করে ফেলতে হয়। শিশু ও গৃহপালিত পশুপাখী থেকে মিশ্রণটিকে দূরে রাখতে হয়। প্রয়োগের আগে ক্ষেতের বা গাছের সংগ্রহযোগ্য সব ফসল তুলতে হয়। স্প্রের সময় সাবধান থাকতে হয়, যেন গায়ে না লাগে। স্প্রের পর ভালোভাবে হাত ধুয়ে ফেলতে হয়।