Site icon

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা বলন গড়িয়ে ঘুরে দাঁড়াতে ব্যস্ত সময় পার করছেন

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা
মোঃ মোশারফ হোসেন, নকলা (শেরপুর) :

সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণ, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও বন্যায় শেরপুরের নকলা, নালিতাবাড়ী, শেরপুর সদর ও শ্রীবরদী উপজেলার অন্তত ২০ টি ইউনিয়নের অন্তত ৮৭টি গ্রামের ৩২ হাজার ১১০ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হন। এতেকরে প্রায় ২৬ কোটি টাকার কৃষি সম্পদ বিনষ্ট হয়। তার মধ্যে নকলা উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের অন্তত ২১টি গ্রাম আকস্মিক বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। এতে ফসলি জমি, ঘরবাড়ি তলিয়ে যায়, ভেসে যায় পুকুরের মাছ। অনেক পরিবারের সদস্যরা গৃহহীন হয়ে অসহায়ত্ব জীবন যাপন করেন।

কিছুদিন পরে বন্যার পানি কমতে শুরু করে। পানি কমে যাওয়ায় ঘরে ফিরেছেন নারীরা, আর ঘুরে দাঁড়াতে মাঠে নেমেছেন কৃষক। রোপা আমন ধানের ক্ষেত পানির নিচে থাকায় অধিকাংশ ধানের গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। যেসব শাকসবজি ও ফলের ক্ষেতে পানি উঠেছিলো, সেসব ক্ষেতের সব শাক সবজি ও ফলের গাছ মারা গেছে বা মারা যাচ্ছে। রোপা আমন ক্ষেতের ধান গাছ নষ্ট হওয়ায় সেইসব ক্ষেত গড়ার উদ্দেশ্যে বলন করা ধানের চারা রোপন করতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকরা।

নকলা উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার আওতায় ১০ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান এবং ৬৭৫ হেক্টরে শাক-সবজি রোপন করা হয়ে ছিলো। তার মধ্যে গনপদ্দি, নকলা, উরফা, বানেশ্বরদী, চরঅষ্টধর ও চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের ২০০ হেক্টর জমির ধান সম্পূর্ণ ভাবে এবং ১৮০ হেক্টরে জমির ধান আংশিক নষ্ট হয়। তাছাড়া ১০ হেক্টর জমির শাক সবজি সম্পূর্ণ এবং ১০ হেক্টর জমির শাক সবজি আংশিক নষ্ট হয়ে যায়। এতে করে ৩ হাজার ৫৫০ জন রোপা আমন চাষী এবং ১৫০ জন সবজি চাষী চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তবে নকলা, ধুকুড়িয়া, ধনাকুশা, উরফা ও বারমাইশা এলাকার ফসলি মাঠ দ্বিতীয় বারে বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বলন গড়ার সুযোগ না পাওয়ায় কৃষকরা বেশি ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছেন। নতুন করে বন্যা বা কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে না পড়লে বলন গড়ার মাধ্যমে কৃষকরা কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়াতে পাড়বেন বলে জানালেন বানেশ্বরদী এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক ছাত্তার, ভূরদীর ছাইয়েদুল, গনপদ্দীর চান মিয়া, উরফার সরফরাজ, দুবলাকুড়ির শাকিলসহ অনেক কৃষক।

জেলা কৃষি অফিস (উপপরিচালকের অফিস) সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি মৌসুমে ৭৭ হাজার ২৯০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের চাষ করার জন্য ৫ হাজার ৯৮০ হেক্টর জমিতে বীজতলা ও ৩ হাজার ৮১৫ হেক্টর জমিতে শাক সবজি লাগানো হয়েছিল। কিন্তুভারী বর্ষণ, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও বন্যায় ২ হাজার ৪৪০ হেক্টরের রোপা আমন, ৫৭ হেক্টর বীজতলা ও ১০০ হেক্টরের শাক সবজি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। এতে রোপা আমনে ২৩ কোটি ২২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা, বীজতলায় ৫১ লাখ ৩০ হাজার টাকা এবং প্রায় ২ কোটি টাকার সবজি আবাদ নষ্ট হয়েছে। সে হিসাবে জেলায় ২৫ কোটি ৭৪ লাখ ১৮ হাজার টাকার কৃষিপণ্য নষ্ট হয়েছে। ক্ষতি গ্রস্থ কৃষকরা সরকারীভাবে যথেষ্ট সহযোগিতা না পেলেও ওই ৪ উপজেলার ২৪০ জন কৃষকদের মাঝে এক বিঘা জমি লাগানো যায় এমন নাবি জাতের ধানের চারা বিনামূল্যে বিতরণ করেছে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ।

নকলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হুমায়ুন কবীর বলেন, নকলাতে রোপা আমন ধানের চারার কোন অভাব নেই। কিন্তু বন্যার চেয়ে জলাবদ্ধতাই কৃষকেদের বেশি ক্ষতি করছে। বন্যায় প্লাবিত এলাকায় বলন করা গেলেও জলাবদ্ধতা এলাকার ক্ষেতে পানি বেশি থাকায় কৃষকরা বলন গড়াতে পারছেননা। তবে নকলার কৃষকরা যেভাবে বলন গড়ছেন তাতেকরে নকলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের মধ্যে তেমন কোন প্রভাব থাকবেনা।

 

 

 

Exit mobile version