কৃষিবিদ দীন মোহাম্মদ দীনু,বাকৃবি,ময়মনসিংহঃ
অরহড় হচ্ছে গরীবের প্রোটিন এবং শরীর গঠনের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় সীম গোত্রীয় ডাল জাতীয় একটি ফসল। অরহড় ডালের বহুমূখী ব্যবহার নিয়ে সভায় গবেষকগণ উল্লেখ করেন। বক্তারা আরও জানান অরহড় শুকনা বীজ ডাল, পরিপক্ক সবুজ বীজ মটরশুটির মত আমিষ সমৃদ্ধ সবজি, পাতা ও ডগা পশু খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর পাতার রস জন্ডিস রোগ নিরাময়েও কার্যকর ।বক্তারা বলেন আমরা মাংস থেকে শতকরা ৪৫-৫০ ভাগ প্রোটিন পেয়ে থাকি, অপর পক্ষে অত্যন্ত কম মূল্যের ফসল অরহড় থেকে শতকরা ৩৫-৪০ ভাগ প্রোটিনের প্রয়োজন মেটানো সম্ভব। গত ৩১ জানুয়ারি-২০১৭ ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত ‘অরহড় ডালের বহুমূখী ব্যবহার’ বাকৃরি কর্মচারি চাষীদের নিয়ে দিনব্যাপী আলোচনা সভা ও প্রদর্শনীতে আলোচকগণ এসব কথা বলেন।
ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড.এ.কে.এম. জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর, প্রফেসর ড. মোঃ আলী আকবর, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ জসিমউদ্দিন খান, উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা কমিটির কো-অর্ডিনেটর প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান। আলোচনা সভায় মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্পের প্রধান গবেষক ও ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল (আইকিউএসি) এর পরিচালক প্রফেসর ড. মোঃ ছোলায়মান আলী ফকির।
প্রধান অতিথি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর, প্রফেসর ড. মোঃ আলী আকবর বলেন এটি একটি ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ, বর্ধিঞ্চু জনসংখ্যা ও ক্ষয়িঞ্চু চাষের জমির কারনে বাড়ীর আশে-পাশে ধান ক্ষেতের উঁচু আইলে এবং রাস্তার দু’পাশে খুব সহজে চাষ করা যায়। আমি প্রত্যাশা করছি গবেষণার মাধ্যমে এর চাষপদ্ধতি আরও আধুনিক করা হবে এবং ব্যাপকভাবে এর বিস্তার লাভে ভ’মিকা রাখবে।। যত ডাল আমরা খেয়ে থাকি তারমধ্যে অরহড় থেকে আমরা প্রোটিন সবচেয়ে বেশী পেয়ে থাকি তাই অরহড়কে গরীবের ডাল বলা হয়ে থাকে।
প্রধান গবেষক ও ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল (আইকিউএসি) এর পরিচালক প্রফেসর ড. মোঃ ছোলায়মান আলী ফকির জানান অরহড় (চরমবড়হঢ়বধ) একটি বহুবর্ষজীবী শীম গোএীয় খরা সহনশীল উদ্ভিদ। এটি বীজ থেকে হয়। জাত ভেদে এ উদ্ভিদ ১-৮ মি. লম্বা ও ৫-৫০টি শাখা প্রশাখা যুক্ত হতে পারে। ডাল ও শাখা জ্বালানী, শেকড়ে বাসকারী ব্যক্টেরিয়া মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে, পাতা ও ডগা পচিয়ে জৈব সার তৈরী করা যায়। ঘন করে লাগানোর ফলে বাড়ীর বেড়া, মাটির ক্ষয়রোধে নতুন পুকুর/জমির আইলে লাগানো যায়। সর্বপরি অরহড় গাছ শুকানোর পর উৎকৃষ্ট মানের লাকড়ি/খরি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে ড. ফকির জানান, বীজ র্১দ্ধ র্১দ্ধর্১ পরিমাপের গর্তে ২-র্৩র্ গভীরে মার্চ-এপ্রিল মাসে বপন করা হয়। প্রতিটি গর্তে ২-৩ কেজি গোবর, ১০০ গ্রাম টিএসপি ও ৫০ গ্রাম এমপি সার প্রয়োগে ভাল ফলন পাওয়া যায়। নভেম্বর-ডিসেম্বরে ফুল ও ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে ফল পাওয়া যায়। এ থেকে ফলন পাওয়া যাবে প্রতি হেক্টর জমিতে ১মি. দ্ধ১মি. দুরত্বে গাছ লাগানো হলে ১-৩ টন শুকনা বীজ, ২.৫-৫ টন কাঁচা ফল, ১-২ টন পাতা ও ডগা, ৪-১০ টন লাকড়ী পাওয়া সম্ভব। এ দুরত্বে গাছ প্রতি ১.৫-৩.০০ কেজি কাঁচা বীজ যা সবজি হিসাবে ব্যবহার করা যায়।
কর্মশালায় বাকৃবির বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক,কর্মকর্তা ও কর্মচারিগণ এতে অংশ গ্রহণ করেণ। পরে কর্মচারি কৃষকদেও মাঝে বিনামূল্যে অরহড়ের বীজ বিতরণ ও সকলকে অরহড়ের তৈরী বিভিন্ন খাবার পরিবেশন করা হয়।