পুষ্টি নিরাপত্তায় বিশেষ অবদান রাখবে নতুন ফসল “বাউ চিয়া”

নতুন ফসল “বাউ চিয়া”

নতুন ফসল “বাউ চিয়া”

মো. ইউসুফ আলী, বাকৃবিঃ

সম্প্রতি সময়ে বাংলাদেশ খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিদেশেও রপ্তানি হয়েছে বাংলাদেশের চাল। তবে বর্তমান সময়ে দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে পুষ্টি নিরাপত্তার বিষয়টি। পুষ্টি নিরাপত্তায় উচ্চ পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ নতুন ফসল “বাউ চিয়া” উৎপাদনে সফলতা পেয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক। ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর হোসেন দীর্ঘ সাত বছরের গবেষণায় “বাউ চিয়া” নামের ওই ফসল উৎপাদনে সফলতা পেয়েছেন। তাঁর গবেষণার সহযোগী ছিলেন সহকারী অধ্যাপক মো. মাসুদুল করিম, মো. আরিফ সাদিক পলাশ এবং আহাদ আলম শিহাব। খুব শীঘ্রই ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ ফসলটি বাউ-চিয়া নামে কৃষক পর্যায়ে সম্প্রসারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন ড. আলমগীর।

চিয়ার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর হোসেন বলেন, চিয়া হলো মিন্ট প্রজাতির উদ্ভিদ। এটি প্রধানত মেক্সিকা ও দক্ষিণ আমেরিকায় জন্মায়। চিয়া বীজ এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে উদ্ভিজ্জ আমিষ, চর্বি, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও আঁশ থাকে যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে প্রয়োজন। চিয়া বীজ শুকনো অবস্থাতেই খাওয়া যায়। তবে চিয়া বীজকে বিভিন্ন খাবার যেমন দই, পুডিং, লাড্ডু, বিস্কিটসহ বিভিন্ন খাবারের সাথে সাথে যোগ করা যেতে পারে।

চাষাবাদ সম্পর্কে ড. আলমগীর বলেন, ২০১০ সালে চিয়া বীজ দেশে নিয়ে আসি। এরপর বিভাগীয় মাঠে ৪ বছর চিয়া বীজের অভিযোজন পরীক্ষা করা হয়। অভিযোজন পরীক্ষায় সফল হওয়ার পর ৩ বছর চাষাবাদ নিয়ে গবেষণা করা হয়। ২০১৭ সালে দেশের পাবনা, বগুড়া, গাইবান্ধা, ময়মনসিংহ ও চারঞ্চলে চিয়া নতুন ফসল “বাউ চিয়া”চাষে ব্যাপক সফলতা আসে। এটি শীতকালীন ফসল যার জীবনকাল ৯০-১২০ দিন। এ উদ্ভিদে পোকা-মাকড় ও রোগবালাই খুবই কম হওয়ায় পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও প্রতি হেক্টরে সর্বোচ্চ ২ টন উৎপাদন লাভ করা সম্ভব।

নতুন ফসলটি সম্পর্কে ড. হোসেন বলেন, ওমেগা-৩ মানবদেহের একটি অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি এসিড। ওমেগা-৩ হৃদরোগের ঝুকি কমায়। বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছের চর্বি বা তেল ওমেগা-৩ এর গুরুত্বপূর্ণ উৎস। কিন্তু সামুদ্রিক মাছ সহজলভ্য না হওয়ায় ওমেগা-৩ এর চাহিদা পূরণ করতে পারে না ভোক্তারা। কিন্তু তুলসী পরিবারভুক্ত চিয়া শস্যের শতকরা ৩৪ ভাগ লিপিডের ৬৭ শতাংশ হল ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড। উন্নত দেশগুলোতে চিয়ার ব্যাপক চাষ ও জনপ্রিয়তা থাকলেও বাংলাদেশে এর প্রচলন এখনও হয়নি।

গবেষণা সহযোগী আহাদ আলম শিহাব বলেন, আমরা দেশে যে চিয়া উৎপাদন করেছি তার শস্যের আকার বৃদ্ধি পেয়েছে। উন্নত দেশে চিয়া প্রতি কেজি ৩০০০ টাকা বিক্রি হয়। তবে আমাদের দেশে সফল ভাবে বাউ চিয়া চাষ করা সম্ভব হলে বাজার মূল্য আরও কমে আসবে। এতে ভোক্তাদের পুষ্টি নিরাপত্তার পাশাপাশি চাষীরাও লাভবান হবেন।

বাউ-চিয়া সম্প্রসারণ সম্পর্কে ড. আলমগীর হোসেন বলেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় বাউ-চিয়া চাষ দ্রুত সম্প্রসারিত হলে পুষ্টি নিরাপত্তায় এটি বাংলাদেশকে অন্য মাত্রা এনে দিবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।

One thought on “পুষ্টি নিরাপত্তায় বিশেষ অবদান রাখবে নতুন ফসল “বাউ চিয়া”

  1. মোঃ শাজারাতুলইয়াকিননিরু August 25, 2020 at 12:24 pm

    আমি চিয়া চাষ করতে চাই,,,উনাদের ফোন নাম্বারটাদেন

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *