বাগেরহাটে হাজার হাজার ফলন্ত টমেটো গাছ‘স্ট্রোক’ করে মারা যাচ্ছে

এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির,বাগেরহাট :

ফলন্ত টমেটো গাছ‘স্ট্রোক’ ঃ ‘দাদা অনেক স্বপ্ন নিয়ে ক্ষেতে তিন হাজার টমেটো’র গাছ লাগিয়ে ছিলাম। কঠোর পরিশ্রম ও পরিচর্যায় গাছ গুলোতে প্রচুর টমেটো ধরেছিল। আশা ছিল এ বছর টমোটে বিক্রি করে সব ধারদেনা পরিশোধ করব। কিন্তু ঋণের টাকা তো দূরের কথা, পরিবার-পরিজন নিয়ে বাঁচাটাই এখন দুরহ ব্যাপার। হঠাৎ করে একদিনে স্ট্রোক করে মারা গেছে দেড় হাজার ফলন্ত টমেটো গাছ। আজ রবিবার বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলা সদর বাজারে  বসে এমনটাই জানালেন টমেটো চাষি অনুপ বিশ্বাস (৩৫)।

অনুপ বিশ্বাস আরও জানান, উপজেলার কুরমনি গ্রামে তার বসবাস। মা-বাবা, ভাই, স্ত্রী ও এক ছেলেকে নিয়ে তার ৫ সদস্যর পরিবার। পেশায় চিংড়ি ও সবজি চাষি। পরপর ক’বছর চিংড়ি চাষে লোকসানের কারণে ৩ লাখ টাকার ‘কারেন্ট সূদে’র দেনা হয়ে পড়েন। আগাম টমেটো চাষে প্রচুর লাভ তাই তিনি এবছর অনেক আশা নিয়ে টমেটোর চাষ করেছিলেন। কিন্তু তার সে আশায় ‘গুড়েবালি’। সব হারিয়ে তিনি এখন নিঃস্ব। এরকম ভোগান্তির শিকার তিনি একাই নন। এ উপজেলার কুরমনি, সুরশাইল, পাটরপাড়া, সাবোখালী, দানোখালী, পাঁচপাড়া, শ্যামপাড়া, খড়মখালী, উমাজুড়ি, খলিশাখালী, গরীবপুর, ডাকাতিয়াসহ বিভিন্ন গ্রামে হাজার হাজার ফলন্ত টমেটো গাছ মারা যাওয়ার চাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়ছেন।টমেটো চাষি কিশোর রায়, জোতিন পোদ্দার, শষধর রায়, সুকেশ বাড়ৈ, অসীম বসু ও তারক বিশ্বাসসহ অনেকে জানান, হঠাৎ করে করে স্ট্রোক করে তাদের ফলন্ত টমেটো গাছ মরে যাওয়ায় তারা একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।

চিতলমারী উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলায় দেড় হাজার একর জমিতে চক্র, পানপাতা, মিন্টু সুপার, লাভলী, হাইটম ও বিউটিসহ বিভিন্ন জাতের টমেটোর চাষ হয়েছে। এবার বাম্পার ফলন হবে বলেও সবাই আশাবাদি ছিল।
এ ব্যাপারে শ্রীরামপুর গ্রামের টমেটো চাষি বিমল মন্ডল, কালশিরার বিকাশ মন্ডল, পাটরপাড়ার মুজিবর বিশ্বাস, সুরশাইলের মুন্না শেখ, খড়মখালীর পরিতোষ মজুমদার, ক্ষিতিষ, লিটন সিংহ, কুরমুনির রেজাউল খান, দড়িউমাজুড়ি গ্রামের দেবদাস বৈরাগী, দিজেন বৈরাগী, সুবাস বৈরাগী, কুরমনির বুদ্ধ বসু ও নিহার পালসহ অনেক চাষি প্রায় অভিন্নসুরে জানান, এভাবে যদি উৎপাদিত টমেটো নষ্ট হয়ে যায় তাহলে এ অঞ্চলের চাষিদের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড ভেঙে যাবে। সেই সাথে তারা হবেন ঋণগ্রস্থ। এলাকায় নেমে আসবে নানা বিপর্যয়।

তবে চিতলমারী উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আনন্দ বিশ্বাস টমেটো গাছ স্ট্রোকে মারা যাওয়ার কথা স্বীকার করে জানান, এটি মাটিবাহিত ব্যাটেরিয়া সংক্রান্ত রোগ। এ রোগে গাছের শেকড় একেবারে নষ্ট করে ফেলে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে চারা লাগানোর আগে মাটি শোধনই একমাত্র উপায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *