আমি বিভিন্ন পত্রিকায় বিভিন্ন লাখপতি ও কোটিপতি বিভিন্ন চাষিদের সাফল্যের গল্প পড়ে দেখতে পাই তাদের নিজের কিছু জমি আছে এবং আরো জমি সাধারণত বছর হিসাবে লীজে নিয়েছেন। আমাদের দেশের চাকুরীজীবি বা ব্যবসায়ী যাদের জমি আছে কিন্তু সেসব জমি দেখাশোনা করা বা চাষ করার সময় নেই তারা সাধারণত জমি লীজ দেন। এতে জমি থেকে আয় হয়। তদুপরি জমি বেহাত হওয়ার রিস্ক থেকে মুক্ত থাকে। আমাদের দেশে বর্তমানে ব্যবসায়িক ভাবে চাষাবাদের প্রচলন হওয়ায় জমির চাহিদা বেড়েছে। ক্রমাগত ভাবে আবাসন শিল্পের উন্নয়নের কারণে জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। তাই জমির পূনাংগ ব্যবহার ভার্টিক্যাল ভাবে অবশ্যই করা প্রয়োজন। আজ গ্রাম অঞ্চলে দোতালা বা ছাদ দেয়া বাড়ী দেখলে তা আভিজাত্য অপেক্ষা অনেক বেশী উপকারী ও প্রয়োজনীয় মনে হয়। কারণ ভাটিক্যালী আবাসন গড়ে উঠলে আমাদের দেশে অকৃষি খাতে জমির ব্যবহার কমানো যাবে।
আজ থেকে ২০ বছর আগে আমার গ্রামের বাড়ীতে দেখতাম জমির মালিকের চাষাবাদের টাকার অভাবে অনেক সময় জমি চাষ বিহীন পরে থাকত। পুকুরে সামর্থ্য অনুযায়ী টাকা খরচ করে কিছু মাছ ছেড়ে পুকুরগুলি অযতেœ পড়ে থাকত । আর এখন কোন পুকুর খালী থাকে না। মাছ চাষিরা উচ্চ মূল্যে পুকুর গুলি লীজ নিয়ে নেয়। তারা ক্রমাগত যুদ্ধ করতে থাকে লীজের টাকা পরিশোধ করে আশানুরূপ লাভ করার জন্য। এ যখন দেশের অবস্থা তখন অবাক হতে হয় আমাদের দেশের অফিস আদালত, বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির বিশাল বিশাল ছাদ ফাকা পড়ে আছে। অথচ কেউ সে সমস্ত ছাদ বানিজ্যিকভাবে চাষাবাদের জন্য লিজ নিচ্ছে না। আগে কিছু কিছু দালানের ছাদে মুরগীর ফার্মের দেখা মিলত। এখন সেগুলো দেখা যায় না। কারণ আবাসিক এলাকায় মুরগীর ফার্ম আনহাইজেনিক অবস্থার সৃষ্টি করে। তেমনি অনেকেই খাটি দুধ খাওয়ার জন্য আবাসিক এলাকায় গবাদি পশু পালন করেন। আমার ব্যক্তিগত মতামত এটা হাই-জিন পয়েন্ট অব ভিউ থেকে পরিহার করা উচিত। কারন আমাদের দেশের মত ঘন আবাসিক এলাকা গবাদি পশু চাষ করার জন্য মোটেই উপযুক্ত নয়। কিন্তু আবাসিক এলাকায় আমাদের নির্মল নি:শ্বাস প্রশ্বাসের জন্য গাছগাছালি চাষ যত বেশী করা যায় ততই মঙ্গল।
ছাদের চাষাবাদ প্রচলিত চাষাবাদ অপেক্ষা অনেক বেশী চ্যালেন্জিং এতে পরিশ্রম অনুপাতে লাভ জনক করাটা কষ্টসাধ্য। তবে বানিজ্যক ভাবে ব্যাপক আকারে চাষাবাদ করলে আশা করা যায় ছাদের চাষও লাভজনক করা যাবে। ছাদের চাষাবাদে হাই ডেনসিটি এবং ভার্টিক্যাল চাষাবাদ করতে হবে। এভাবে চাষাবাদ করলে ছাদে চাষাবাদ লাভজনক করা যাবে। হাইড্রোপনিক চাষাবাদও ছাদে করা যাবে। ছাদে রেইন ওয়াটার হারবেস্টিং করে বাগানের পানির চাহিদাও পূরণ করা যাবে। ছাদের বাগানের চ্যালেনঞ্জিং বিষয়গুলি হল পানির যোগান, মাটি ও অন্যান্য কৃষিপণ্যের যোগান দেয়া।
ছাদে ব্যক্তিগত পর্যায়ে চাষাবাদ যথেষ্ট লাভজনক হয় না। শখ হিসাবে অনেকে চাষাবাদ করে থাকেন। অধিক মূল্যে ফল/সব্জি উৎপাদন করা হলেও কেবলমাত্র তাজা, বিষমুক্ত, উন্নত স্বাদ ইত্যাদির কারণে অনেকেই টবের মাধ্যমে ছাদে চাষাবাদ করছেন। আবার অনেকে ছাদে পানির আধার তৈরী করে রীতিমত মাছের চাষ করছেন। যদি ছাদে সুমিং পুল করা যায় তবে মাছের চাষও সম্ভব। যাদের হাতে সময় আছে, অবসর জীবন কাটাচ্ছেন, তারা ছাদের বাগানের কাজে এগিয়ে আসতে পারেন। ছাদে আমরা নিন্মোক্ত চাষাবাদ সমূহ করতে পারি:
ক। ভার্টিক্যালি মাচা করে স্ট্রবেরীর চাষ করা যায়।
খ। বারোমাসি এবং দামী ফলের চাষ করা যেতে পারে।
গ। বারোমাসি ও অধিক দামী সব্জির চাষাবাদ করা যেতে পারে।
ঘ। বনসাই চাষ করা যেতে পারে।
ঙ। ছাদের বাগান মিনি পুকুর করে তেলাপিয়া বা এ ধরনের সহজে চাষযুক্ত মাছের চাষ করা যায়। বাগানের জন্য জলাধার হিসাবে সেই মিনি পুকুর ব্যবহার করা যাবে।
চ। নাসার্রী করতে তেমন একটা জায়গার প্রয়োজন হয় না। তাই ছাদে মিনি নাসার্রী করা যেতে পারে।
ছাদের বাগানে টবে, কাঠের বাক্সে বা সিমেন্টের মাধ্যমে এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে ছাদের কোন ক্ষতি না হয়। এ বিষয়ে অবশ্য ইমারত বিশেষজ্ঞদের মতামত সাপেক্ষে বাগান করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।
একবার এক চাষীর কাছ থেকে একটা হিসাব পেলাম আমাদের দেশের গ্রাম অঞ্চলে জমি বিঘা প্রতি ১২০০০ টাকা করে এক বছরের জন্য লীজ নেয়া যায়। ১ বিঘা জমির পরিমাণ হল ১৪৪০০ বর্গ ফুট। তাহলে ছাদের জমি মফ:স্বল বা গ্রামের হিসাবে মনে করি প্রতি বর্গফুটের এক বছরের লীজ ১ টাকা। সেই ক্ষেত্রে ২০০০ বর্গফুটের ছাদের এক বছরের ভাড়া ২০০০ টাকা মন্দ নয়। যদি আরোও বেশী ভাল ভাবে বানিজ্যিক চাষ করা যায় তবে ভাড়া হয়ত আরো বাড়তে পারে। একবার সবুজের কর্মকাণ্ডে বাড়ীর ছাদ লীজ দেয়ার প্রচলন হলে আশা করা যায় বাড়ীর ছাদগুলো সবুজে ভরপুর হয়ে যাবে। আমাদের বিভিন্ন সরকারি অফিসের ছাদগুলি অনেক বিশাল পরিসরে হয়। সে সমস্ত ছাদ সরকারী ব্যবস্থাপনায় লীজ দিয়ে আমরা দেশময় সবুজ কর্মকাণ্ড চালু করতে পারি। আসুন আমরা সকলে সবুজের সাথে বাস করি। সূত্রঃ ইন্টারনেট
কৃষির আরো খবর জানতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিনঃকৃষিসংবাদ.কম