কৃষিবিদ নূরুল হুদা আল মামুন,বান্দরবান থেকে
পাহাড় আর সবুজ বন বনানী ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলা ভূমি বান্দরবান। পর্যটন কন্যা খ্যাত বান্দরবান শহর থেকে ১৬ কিলোমিটার পূর্ব দিকে চিম্বুক সড়কের পাশে একটি গ্রাম। নাম তার ক্রামাদি পাড়া। এই গ্রামের এক ম্রো যুবকের নাম ‘সীংপার্ট ম্রো’। ছোট বেলা থেকে পাহাড়ের আদিবাসী সংস্কৃতি আর সভ্যতায় বেড়ে উঠলেও উচ্চ শিক্ষার প্রতি ছিল তার প্রচন্ড আবেগ। আর এ কারণে স্থানীয় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করে গ্রামীণ পরিবেশ ছেড়ে শহরমুখী হন সেই ২০০৮ সালে। ঢাকার নটর্ডেম কলেজে এইচ এস সিতে ভর্তি হন তিনি। শহর মুখী হলেও কৃষি তথা ফলবাগান করার প্রতি ছিল তার প্রচন্ড ঝোঁক।
আর তখন থেকে আম বাগান করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে নিজ পাড়ার পাশের অনাবাদি জঙ্গলময় পাহাড় বেছে নেন তিনি। তার বাগান করার প্রতি আগ্রহ দেখে স্থানীয় বেসরকারি এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এগিয়ে আসেন তার পাশে। প্রথমে প্রশিক্ষনের মাধ্যমে আম বাগান করার কলা কৌশল রপ্ত করে নেন অতি অল্প সময়ে। বিভিন্ন সংস্থা থেকে আম্রপালি,রাঙ্গুই ও গুটি আমের চারা ও কলম সংগ্রহ করে পরিকল্পিত ভাবে রোপন করেন অনাবাদি ওই পাহাড়ে।
পড়ালেখার জন্য ঢাকা ফিরে গেলেও যখনই সুযোগ পান তখন ছুটে যান আম বাগানের টানে। গাছের গোড়ায় সার দেওয়া, আগাছা নাশক স্প্রে করা, আগাছা বাছাই করা, শুস্ক মৌসুমে পানি সেচের ব্যবস্থা করা সহ নানা পরিচর্যা আর নিবিড় যত্নআত্তি দিয়ে গড়ে তুলেন আম বাগানটি।
আজ এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় সফল আমচাষি সীংপার্ট ম্রো এর সাথে। সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে সম্মান ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী নেওয়া যুবক ‘সীংপার্ট ম্রো’ জানান, তার একান্ত প্রচেষ্টায় গড়ে তোলা বাগানটি থেকে গত ২০১৪ সাল থেকে আম উৎপাদন শুরু হয়েছে। প্রথম বছর ফলন একটু কম হলেও ২০১৫ সালে সমস্ত খরচাদি বাদে নীট লাভ থাকে ২.৫ লক্ষাধিক টাকা। কথা প্রসঙ্গে তিনি জানান, ৬ একর পাহাড়ী জমিতে গড়ে তোলা আম বাগানটি থেকে এবার যে ফলন হয়েছে তাতে ৫-৬ লক্ষাধিক টাকা মুনাফা থাকবে বলে আশা করছেন তিনি।
বাগান ঘুরে দেখা গেছে, সারি সারি লাগানো ছোট ছোট আম গাছে থোকা থোকা ঝুলছে আম আর আম । যেন এক মধুময় আমের রাজ্য। বাগানটিতে এক হাজার আটশত টি নানা জাতের আম গাছ রয়েছে। বর্তমানে আমের ভাল দাম পাওয়ার জন্য মূল্য সংযোজন করে কিভাবে বাজারতাজকরণ করা যায় ও ভাল ফলনের উপর কারিগরী সহায়তা করছে কৃষি গবেষণা ফাঊন্ডেশন। এই সংস্থার কোর্ডিনেটর ড. জালাল উদ্দিন সরকার, ড. মোঃ আমিন ও ড. জামাল উদ্দিন বিভিন্ন সময় পাহাড়ে ফল বাগান করার উপর চাষীদের উৎসাহ প্রদান করে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন বলে সীংপার্ট ম্রো জানান।
এ সময়ে কথা হয় কৃষি গবেষণা ফাঊন্ডেশনের (কেজিএফ) কোর্ডিনেটর ড. জালাল উদ্দিন সরকার এর সাথে। তিনি জানান, পাহাড়ের তথা দেশের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর জন্য সীংপার্টের মত উদ্যোগী যুবকদের এগিয়ে আসতে হবে। সীংপার্ট আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও পাহাড়ে আম বাগান করে নজির স্থাপন করেছেন। আজ তিনি একজন সফল আম চাষি। পাহাড়ে যে সব স্থানে পানির প্রচন্ড সমস্যা, খাড়া পাহাড় বিধায় অন্য ফসলের ভালো ফলন পাওয়া যায় না সে সব জায়গায় ফল বাগান করে পাহাড়ি জনগণ আয় বাড়াতে পারেন । কেজিএফ, এ রকম কার্যক্রমে কারিগরি সহায়তা দিয়ে থাকে বলে তিনি জানান।
কৃষির আরো খবরাখবর জানতে আমাদের পেইজে লাইকদিনঃ facebook.com/krishisongbad.com